বিদায় হিটলার, হিটলারেরা
এডলফ হিটলার, ইভা বারুন
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, ১৯৪৫ সালের এ দিন, অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল, জার্মান উচ্চাভিলাষী একনায়ক এডলফ হিটলার এবং তার স্বল্পায়ু স্ত্রী ইভা বারুন আত্মহত্যা করেছিলেন। পৃথিবীর বুকে যে অতুল ট্র্যাজেডি হিটলার নিজে সৃষ্টি করেছিলেন, তার ক্ষুদ্র একটি অংশ সেদিন তার ও তার স্ত্রীর ওপর ফিরে এসেছিল। রুশ সেনারা যখন বার্লিনে তাদের বাঙ্কারটাকে ঘিরে ফেললো, তখন আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন উপায় হয়ত আত্মাভিমানী হিটলার ও তার সহায়হীন স্ত্রীর সামনে খোলা ছিল না। হিটলার তাই মাথায় গুলি করে বসলেন, আর ইভা কামড় বসালেন পৃথিবীর বুকে অব্যর্থতম বিষ পটাশিয়াম সায়ানাইডের ক্যাপসুলে। পৃথিবীর মানুষদের কারও মনে হয়তো কোন করুণা জাগেনি তাদের দাম্পত্যের কথা চিন্তা করে, যে দাম্পত্যের বয়েস ২৪ ঘণ্টাতেও গড়ায়নি তখনও।
আগেই বলেছি, সোভিয়েত সেনারা তখন বাঙ্কার ঘিরে ফেলেছে; আর হিটলার হয়ত ভেবেছিলেন তাকে জনসমক্ষে হত্যা করা হবে। হিটলারের মত ব্যক্তিত্বের জন্যে গ্যাস চেম্বারে মানুষকে বাষ্প বানিয়ে উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়াটা কঠিন ছিল না, কঠিন ছিল না নিজের সেনাবাহিনীকে অজেয় সব স্থানে দুর্বলতম অবস্থাতেও পাঠাতে যেখানে তারা কচুকাটা হবে; কিন্তু জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার অসম্মানটুকু নেয়া হয়তো তার জন্যে অসম্ভব ছিল। অথবা অন্য কোন গাঢ় ও গূঢ় অনুভূতিও তার আত্মহননের পেছনে কাজ করে থাকতে পারে, মানুষ বলে কথা। কি হতে পারে সে অনুভব? অনুশোচনা?
সোভিয়েত সৈনিকেরা দুজনের মৃতদেহ এক বাগানের মতো জায়গায় পুড়িয়ে ফেলেছিল বলে শোনা যায়, যেখানে ১০ দিন আগেও হের হিটলার তরুণ সেনাদের আয়রণ ক্রস পরিয়ে দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন তার ৫৬তম জন্মদিন উপলক্ষে। আরও দশটি মৃতদেহও খুঁজে পেয়েছিল সেনারা, পুড়ে ঝলসে যাওয়া, যাদের মধ্যে ৮ টি মৃতদেহ ছিল মানুষের, আর ২টি কুকুরের।
হিটলারের সেই প্রচারমন্ত্রীর কথা পৃথিবীর মনে আছে, জোসেফ গোয়েবলস, যিনি বলেছিল, একটা মিথ্যা ৩০ বছর পর্যন্ত অক্ষত রাখতে পারলে তা সত্যে পরিণত হয়। ৮ ঝলাসানো মৃতদেহের একটি ছিল তার, অপর সাতটি তার স্ত্রী মাগদা ও ৬ ছেলেমেয়ের। বলা হয়ে থাকে, পটাশিয়াম সায়ানাইড খাওয়ানো হয়েছিল তাদেরও। গোয়েবলসের ছয় নিষ্পাপ ছেলেমেয়েকে পৃথিবী কিভাবে দেখতো যদি জীবিত পেতো? সেটা গোয়েবলস কম গূঢ়তার সঙ্গে ভাবেননি, যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছিলেন, যে কারণে একই পরিণতি দিয়েছিলেন ঐ শিশুদেরও। কুকুর দুটি ছিল হিটলারের, প্রভুর কল্যাণে তাদের নামও মানুষের অজানা ছিল না। ব্লন্ডি আর উলফ।
সেই বাঙ্কার, যেখানে হিটলার ও ইভা আত্মহত্যা করেছিলেন
১৯৪৫ সাল বিগত, ২০১৪ আগত। সেদিনের পর আজ প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। বিপুল প্রাণনাশের আগুনে উৎসবে ঘি ঢালা সেনাপতিরা আজ নেই। কিন্তু তাদের লক্ষ লক্ষ সুযোগ্য উত্তরসুরী আজও বর্তমান। সাধারণ মানুষ কোন একদিন তাদের বাঙ্কার ঘিরে ফেললে, তারাও হয়তো এমনি করে মাথায় গুলি চালিয়ে দরজার কাছে পড়ে থাকবে, গায়ে দাহ্যজল ঢেলে কামড় বসাবে সায়ানাইড ক্যাপসুলে। তবে তাদের শিশুদের বের করে নিয়ে আসবে মানুষ আগেই। পিতামাতার কলঙ্ক তাদের কাঁধে চাপানো হবে না, তারা শুদ্ধতম মানবমানবীরূপে, মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা নিয়ে বড় হতে থাকবে। শান্তির পতাকা উড়বে। তো, হিটলারের মৃত্যুদিন আমাদের মনে নতুন স্বপ্নের জন্ম দিচ্ছে কি?