বঙ্গোপসাগরে ‘নতুন দেশ’
খবর বাংলা ডেক্সঃ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠেছে আরেকটি ‘দেশ’। বর্তমানে এটি নিঝুমদ্বীপ নামেই চেনে স্থানীয়রা। এ দ্বীপে গড়ে উঠেছে বসতি ও বনায়ন। এ ছাড়া হাতিয়ার পশ্চিম পাশে ঢাল চর, মৌলভীর চর, তমরুদ্দির চর, জাগলার চর, উত্তরে নলের চর, কেয়ারিং চর, ইসলাম চর, জাহাজ্জের চর, নঙ্গলিয়ার চর, সাহেবআলীর চর, দক্ষিণে কালাম চর, রাস্তার চরসহ অন্তত ১৫টি দ্বীপ ১৫-২০ বছর আগে থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠেছে। যে মুহুর্তে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের সিংহভাগ ভূখণ্ড সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে, ঠিক সে মুহূর্তেই দেশের এই অভাবনীয় সম্ভাবনা দেশবাসীর কাছে সীমাহীন আশা জাগিয়েছে। এরই মধ্যে নিঝুমদ্বীপে ৭০ হাজার লোকের বসবাস। এ ছাড়া ঢাল চর, নলের চর, কেয়ারিং চর, মৌলভীর চরসহ কয়েকটি দ্বীপে জনবসতি পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠেছে। একইভাবে বন বিভাগ আবাদ করে সবুজ বনায়ন করেছে। দস্যুদের ভয়ে বাকিগুলোতে এখনো বসবাস শুরু হয়নি। এখনো অন্তত ৪০-৫০টি ডুবোচর রয়েছে যা হয়তো আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে জেগে ওঠার অপেক্ষায়। ভাটায় দেখা গেলেও জোয়ারের পানিতে এখনো ডুবে যায়। নিঝুমদ্বীপে প্রায় ৪৫ হাজার একর সংরক্ষিত বন এলাকা। এরই মধ্যে সাগরের বুকজুড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গমাইল আয়তনের ভূখণ্ড গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এ বছর যুক্ত হবে আরও প্রায় ২ হাজার ২০০ মাইল ভূমি। নিঝুমদ্বীপ থেকে মুক্তারিয়া ঘাটসহ কয়েকটি ক্রস বাঁধ আর প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নেওয়া হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকার আয়তন দাঁড়াবে প্রায় ১৫ হাজার বর্গমাইল। তাই বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিয়েছে আরেকটি বাংলাদেশের হাতছানি। নিঝুমদ্বীপের কাছাকাছি এলাকাতেও কয়েকশ বর্গমাইল নতুন চর জেগে উঠেছে এবং ডুবোচর রয়েছে। নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণে ৪০-৫০ মাইল ভাটার সময় বড় বড় চরভূমির অস্তিত্ব মেলে। যে চরগুলো জেগে উঠেছে সেখানে এখন বসবাস উপযোগী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ইডিপির এক জরিপ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত শুধু নোয়াখালী উপকূলেই সাড়ে ৯ বর্গমাইল ভূমি জেগে ওঠে এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত আরও দুই-তিন গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ চরগুলো পরিকল্পিতভাবে স্থায়িত্ব দিতে সরকারি উদ্যোগ তেমন দেখা যায় না। বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনার তালিকায় গুরুত্ব পাচ্ছে না। সমুদ্রবক্ষে সম্ভাবনার বিশাল আশীর্বাদ এসব ভূখণ্ড পরিকল্পিত ব্যবহার, বনায়ন ও সংরক্ষণে সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া হয়নি এখনো। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নঙ্গলিয়া এলাকায় নতুন চর জেগে মেঘনা মোহনাজুড়ে বড় বড় আয়তনের নতুন যে ভূখণ্ড দেখা গেছে এবং সেসব চরে উড়ি ঘাস গজাতেও শুরু করেছে। নিঝুমদ্বীপ থেকে মুক্তারিয়ার ঘাট, উড়ির চর থেকে জাহাজ্জের চর পর্যন্ত ক্রস বাঁধ নির্মাণ করে এ মুহূর্তে অনেক ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। হাতিয়া-নিঝুমদ্বীপ-ধমারচর ক্রস বাঁধের মাধ্যমে মূল স্থলভূমির সঙ্গে সংযুক্ত করার খুবই চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে অচিরেই অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড মিলবে। অন্যদিকে বন বিভাগের অবহেলায় নিঝুমদ্বীপে ৩০ হাজার হরিণের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গাছ উজাড় করছে দস্যু ও জনপ্রতিনিধিরা। নিঝুমদ্বীপে সরকারি বন বিভাগের উদ্যোগের অভাবে ও অযত্ন-অবহেলায় প্রায় ৩০ হাজার হরিণের অস্তিত্বও এখন বিলীন হওয়ার পথে। সেখানে আবাসন, খাদ্য সংকট, অকারণে শিকার, বন্য কুকুরের আক্রমণ ও পানীয় জলের অভাব প্রকট। দুই বছর আগে নিঝুমদ্বীপে বিস্তীর্ণ বনে ফসলের মাঠে রাস্তাঘাট ও লোকালয়ে দেখা যেত মায়াবী হরিণের পাল। লবণাক্ত পানির কারণে রোগাক্রান্ত হওয়া এবং বন কর্মকর্তাদের অবহেলা এর মূল কারণ। নিঝুমদ্বীপ রেঞ্জ কর্মকর্তা জাবের হোসেন বলেন, সমস্যার সমাধান করা গেলে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার হরিণ রপ্তানি করা সম্ভব। প্রতিটি হরিণের মূল্য ২৫ হাজার টাকা ধরা হলে নিঝুমদ্বীপ থেকে প্রায়ই ৩০ কোটি টাকা আয় হবে। তাছাড়া হরিণ রপ্তানি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ হরিণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাখার মতো জায়গার সংকট।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বনের আশপাশের খালি জমিতে ভূমিহীনদের বসবাস অন্যদিকে স্থানীয় দস্যু ও জনপ্রতিনিধিরা বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাগানের গাছ অবাধে কেটে পাচার করছে। এ জন্য হরিণের অবাধ বিচরণে সমস্যা হচ্ছে। এতে বনের আয়তনও কমে যাচ্ছে। দ্বীপের ২৫ হাজার হরিণের জন্য একটি মাত্র মিঠাপানির পুকুরের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানেও পানি না থাকায় হরিণগুলো প্রায়ই চলে আসে লোকালয়ে। ইদানীং বনদস্যুরা কিছু খালি জায়গা দখলে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হলে আর হরিণ থাকবে না বলেও দ্বীপবাসী জানান।