শামীমের প্রসঙ্গ উঠতেই দমে গেল আ.লীগ
খবর বাংলা ডেক্সঃ নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত শামীম ওসমানের প্রসঙ্গটি যখন উঠল তখনই বেরিয়ে গেলেন ড. হাছান মাহমুদ। এভাবেই শেষ হয়ে গেল সংবাদ সম্মেলনটি। বিষয়টিকে পুরো এড়িয়ে চলার মনোভাব দেখাল আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সমম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
সংবাদ সম্মেলনে হত্যা-গুমের সঙ্গে বিএনপি জড়িত বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে প্রথম গুম-হত্যার রাজনীতি শুরু করেন।’
সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ ও গুমের নিন্দা জানিয়ে সাবেক এই বনমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সাল জুড়ে যারা দেশে অস্থিরতা তৈরি করে রেখেছিল, তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খালেদা জিয়া সন্ত্রাসের নেত্রী। হত্যা-গুম অপহরণের সঙ্গে তার দলের নেতাকর্মীরা যুক্ত।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, গুম-হত্যার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত। উনার শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা-গুম করা হয়। উনার হত্যা-গুমের রাজনীতি থেকে নিজ দলের নেতাকর্মীরাও রক্ষা পায়নি।’
এসময় তিনি বিএনপির শাসনামলের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যা-গুমের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘গত ৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে হত্যা-গুম নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, যার ৪০ শতাংশই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। বিএনপির জন্মই হয়েছে মিথ্যাচার করার জন্য, ইতিহাস বিকৃতির জন্য। প্রকৃতপক্ষে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি হতাশার গহিন গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে। এই হতাশা থেকেই বিএনপি মিথ্যাচার করছে।’
আওয়ামী লীগ গুম-খুনের রাজনীতি বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘অপহরণ, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের সঙ্গে যেই জড়িত হোক না কেন, কিংবা যে দলের হোক না কেন তাদের সনাক্ত করে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক তা আমাদের দল চায়। সরকারও এক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যারা দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়, অতীতের মতো হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চায় তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ান। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হোন। হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আওয়ামী লীগ আপনাদের পাশে আছে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশন মেয়র ড. সেলিনা হায়াৎ আইভী ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সময় বলেছিলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শামীম ওসমান জড়িত।’ গতকাল অপহরণ করা ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধারের পর তিনি বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মানুষ একটি পরিবারের হাতে এখনও জিম্মি।’
এ বিষয়ে আওয়মী লীগের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা। এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সকল ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের মেয়র একজনের দিকেই আঙ্গুল তোলেন। এতে করে সন্দেহ রয়েছে তিনি তার রাজনৈতি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ ধরনের কথা বলেন কী না।’
এরপর সাংবাদিকরা এ বিষয়ে আরো প্রশ্ন করতে চাইলে হাছান মাহমুদ দ্রুত সংবাদ সম্মেলন শেষ করে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদ ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি তার স্বামীকে হত্যার পেছনে নারায়ণঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পর নারায়ণগঞ্জবাসীর অভিযোগের আঙুল ছিল শামীম ওসমানের দিকে। সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতকি মহলের নেতারা ত্বকী হত্যার শামীম ওসমানকে দায়ী করেন।
ত্বকীর হত্যামামলার আসামি টগর র্যাবের কাছে জবানবন্দিতে বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডে সদ্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে (শামীম ওসমানের ভাতিজা) আজমেরী ওসমান জড়িত। আজমেরী শহরের চাষাড়ায় একটি টর্চার সেল গড়ে তুলেছন বলেও স্বীকার করেন টগর।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম সম্পর্কে সারা দেশবাসী অবহিত।