কালো গ্লাস আর সাদা পোষাকই কি সমাধান?
খবর বাংলা ২৪ ডেক্স: সম্প্রতি দেশে গুম খুন আর অপহরণের তীব্রতা এতো বেড়েছে যে তা ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাড়ির কালো গ্লাস খুলে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে। আর পুলিশও ইতোমধ্যে সাদা পোশাকে পুলিশের সব অভিযান বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে। দু’টি পদক্ষেপ অপহরণকারীদের কাজ কঠিন করে তুললেও শেষ পর্যন্ত এই গুম খুন অপহরণ বন্ধ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ কালো গ্লাস আর সাদা পোষাক বন্ধ হলেও এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি অপহরণকারীদের। জানা যায়নি অপহরণের কোনও মোটিভ। প্রশ্ন হচ্ছে গাড়িতে কালো গ্লাস যদি নাও থাকে এবং গাড়িতে যদি অপহরণকারী থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের কি করার আছে। সাদা পোষাকে পুলিশের অভিযান বন্ধের ফলে মানুষ অন্তত নিশ্চিত হবে কেউ যদি সাদা পোশাকে কাউকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে সে অন্তত পুলিশ নয়; অপহরণকারীই। কিন্তু এই নিশ্চিত অস্ত্রধারী অপহরণকারীর সামনে সাধারণ মানুষের কি করার আছে? এ পরিস্থিতিতে বাধা দিতে পারে একমাত্র পুলিশ। কিন্তু পুলিশ কি সবসময় সবখানে উপস্থিত থাকে? যদিও গাড়িতে কালো গ্লাস থাকা যাবে না এমন আইন আমাদের দেশে অনেকদিন থেকেই আছে কিন্তু এই আইন বাস্তবায়নে পুলিশের কোনও তৎপরতা কখনও দেখা যায়নি। এখন দেশে এতো গাড়িতে কালো গ্লাস আছে যে সবাই যদি আইন মেনে গ্লাস পরিবর্তন করতে চায় তাও কয়েক মাস লেগে যাবে। আর সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। কারণ পুলিশের পরিচয়ে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর মানুষ বেশিরভাগ সময়ই জানতে পারে না সে কোথায় আছে। তার পরিবারও জানতে পারে না তার অবস্থান সম্পর্কে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন শাখার লোকজনই নিশ্চিত করে বলে না সেই ব্যক্তি তখন কার হেফাজতে থাকে। যা মানবাধিকরের লঙ্ঘন। আইন ও শালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ২৬৮ জন অপহৃত হয়েছেন। পরে এদের মধ্যে ৪৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ২৪ জন ফিরে আসেন জীবিত। বাকি ১৮৭ জনের কোন সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। তারা বেঁচে আছেন কিনা তাও জানেন না তাদের পরিবারের সদস্যরা। এর আগে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের অপহরনের ঘটনার পর দেশজুড়ে তোলপার শুরু হলেও কোন অপহৃতকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি কোন অপহরণকারীকে। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়নগঞ্জে ৭ জন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে অপহরণ করা হলো এবং তারপর নদীতে ভেসে উঠলো তাদের লাশ। কোন কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারে?ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা মোতাবেক পুলিশ বিনা পরোয়ানায় ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়াই ৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যেকোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে করতে পারে। কোন ব্যক্তি কোন মামলাযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকলে বা জড়িত বলে বিশ্বাসযোগ্য খবর বা অভিযোগ থাকলে পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারে। আইনগত কোন অজুহাত (যুক্তি) ছাড়া কারো কাছে ঘর ভাঙার সরঞ্জাম থাকলে তাকে গ্রেফতার করা যেতে পারে। আইন অনুসারে বা সরকারী আদেশ দ্বারা কাউকে অপরাধী বলে ঘোষণা করলে তাকে গ্রেফতার করা যায়। কারো কাছে থাকা মালপত্র চোরাই বলে সন্দেহ করার যুক্তি সঙ্গত কোন কারণ থাকলে। পুলিশের কাজে বাধা দিলে, বা কেউ পলায়ন করলে বা করার চেষ্টা করলে। এছাড়া পুলিশ রাত ১২টার পর কারও বাসায় প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও সে অপরাধী হয়। নিয়ম হচ্ছে পুলিশ যদি নিশ্চিত হয় এই বাসায় অপরাধী আছেন আর বাড়ীর মালিক যদি অনুমতি না দেন তার বাড়িতে ঢোকার তাহলে ভোর হওয়া পর্যন্ত পুলিশকে অপেক্ষা করতে হবে। পুলিশের যদি কোন মামলায় আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয় তাহলে সেই মামলা সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করে সেই সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করারও কিছু বিধান আছে। এই ধারায় গ্রেপ্তারের সাথে সাথেই গ্রেপ্তারকৃত নাগরিকের পরিবারের কাছে খবর দিয়ে জানাতে হবে যে তিনি পুলিশের হেফাজতে আছেন। পুলিশ কাউকে গ্রেফতারের আগে উল্লেখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করে কিনা তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আর সব গাড়ির গ্লাস সাদা হয়ে গেলে এবং সাদা পোষাকে পুলিশের অভিযান বন্ধ থাকলেও অপহরণের ঘটনা যে কমবে তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? তবে যে ধরণের পদক্ষেপই নেয়া হোক অপহরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যবস্থাই করতে হবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। আর মানুষও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে পারবেন এর আগে ঘটে যাওয়া অপহরণকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে। যেটা এখনো সম্ভব হয় নি।