নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখেন না আ.লীগ নেতারা
ঢাকা সিটি করপোরেশনে এখন ‘রাজা যায় রাজা আসে’ অবস্থা। এক প্রশাসক আসছেন। তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে; আসছেন আরেকজন। নির্বাচন হচ্ছে না; তাই মেয়রেরও দেখা পাচ্ছেন না রাজধানীবাসী।আওয়ামী লীগের নেতারাই বলছেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই হচ্ছে না ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই অংশের নির্বাচন। এমনকি এই নির্বাচন কবে হবে, সেটা নিয়ে দলের মধ্যে কোনো আলোচনাও হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম প্রশাসক নিয়োগ হয়। স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) একজন প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিন। হিসাব অনুযায়ী দুই অংশে ভাগ করার পর ইতিমধ্যে প্রতি সিটি করপোরেশনে চারজন প্রশাসক বিদায় নিয়েছেন। এখন সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে রয়েছেন পঞ্চম প্রশাসক। তাঁরও বিদায়ের সময় আসন্ন। ঢাকা সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সীমানা জটিলতা কোনো বাধা হতে পারে না। এটা সরকারের সম্পূর্ণ সদিচ্ছার অভাব।’
কেন এই গড়িমসি: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুজন এবং ঢাকা মহানগরের এক নেতা বলেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সিটি নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা। বরং সরকারি কর্মকর্তাদের বদলে সিটি করপোরেশনে রাজনৈতিক কাউকে প্রশাসক হিসেবে বসানো যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখছে দলটি। এ জন্য বর্তমান সিটি করপোরেশন আইনও সংশোধন করা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারসচিব মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলেই নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ সবকিছু চূড়ান্ত সেটা তিনি জানাতে পারেনি।
তবে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর ঢাকা কেন্দ্রিক আন্দোলনের অনুমতি নিতে হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে। যেটা সরকার এখন সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ বিরোধী শক্তির হাতে গেলে, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশের অনুমতি তারা সহজেই পাবে। সে ক্ষেত্রে বিরোধীদের আন্দোলন দমাতে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি নিজেদের আওতায় রাখতে ঢাকা সিটির নেতৃত্ব কোনোভাবেই বিরোধী শক্তিকে দিতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
অতিরিক্ত নাগরিক সুবিধা: ‘অতিরিক্ত নাগরিক সুবিধার’ কথা বলে ২০১২ সালের ৩১ মে ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ করা হয়। সংশোধন করা হয় স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন)। সংশোধিত আইনের ২৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত সিটি করপোরেশনের কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে। যাঁর মেয়াদ হবে ১৮০ দিন।’ এই ১৮০ দিন পার হচ্ছে; প্রশাসক যাচ্ছেন, প্রশাসক আসছেন। আসছেন না সিটি মেয়র। আর অতিরিক্ত নাগরিক সুবিধার কিছুই এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালে।
কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে: আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে নগরের নেতৃত্ব এখন এলোমেলো। সভানেত্রী চাইছেন, ঢাকা মহানগরের কমিটি হওয়ার পর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হোক। আরেকজন নেতা বলেছেন, আগামী কয়েক বছর তিনি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। তাঁর মতে, জনগণকে সন্তুষ্ট করার মতো দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার উত্সাহী হবে না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠিত হওয়ার পর; ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারে সরকার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা শুরু হবে আগামী জুনের শেষ দিকে। এরপর ঈদুল ফিতর। এরপর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সমন্বয় হলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কিছুটা সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তবে কী হবে না হবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের ওপর।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করতে আরও সময় লাগবে। এর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে কেন্দ্র থেকে আমাদের সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর কমিটি হলে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হবে।’
গত বছরের ২৬ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের নির্দেশনা চেয়ে দুটি আলাদা রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়নি। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের সভাতেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। অনবরত স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণ না হওয়ার অজুহাতে এড়িয়ে যাচ্ছে বিষয়টি।
নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেছেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে আমাদের বাধা নেই। তবে এ জন্য স্থানীয় সরকারকে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে।’