সুজানের পক্ষে আদালতের রায়

536388d9349a1-Sussanne-1গত বছর অন্যতম আলোচিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্ম দিয়ে বলিউডে হইচই ফেলে দেন হৃতিক রোশন ও সুজান রোশন। বছরের পর বছর ধরে বলিউডের অন্যতম সুখী দম্পতি হিসেবে উচ্চারিত হতো তাঁদের নাম। কিন্তু গত ডিসেম্বরে ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়ে সবাইকে বিস্ময়ে হতবাক করে দেন তাঁরা। হৃতিক ও সুজানের অভিভাবকেরা শত চেষ্টা করেও তাঁদের বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারেননি। তিন দিন আগে গত ৩০ এপ্রিল আদালতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন হৃতিক ও সুজান। আদালতের রায়ে দুই ছেলে রিহান ও রিদানের দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছেন সুজান। আদালতের রায় অনুযায়ী মায়ের কাছেই থাকবে রিহান ও রিদান। বলাই বাহুল্য, প্রিয়তমা স্ত্রী আর আদরের দুই ছেলেকে হারিয়ে খুবই মর্মাহত ‘কৃশ’ তারকা হৃতিক।

হূতিকের সঙ্গে সুজানহৃতিক ও সুজানের আইনজীবী দীপেশ মেহতার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়ান ইন্ডিয়া জানিয়েছে, হৃতিক ও সুজান পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ৩০ এপ্রিল আদালতে বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। সন্তান দেখভালের ক্ষেত্রে সুজানের পক্ষেই রায় দিয়েছেন আদালত। রায় অনুযায়ী সুজানের তত্ত্বাবধানে থাকবে হৃতিক-সুজানের দুই ছেলে রিহান ও রিদান। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৩১ অক্টোবর।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের জানুয়ারিতে ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রেখেছিলেন হৃতিক। একই বছরের ২০ ডিসেম্বর বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ও নির্মাতা সঞ্জয় খানের মেয়ে সুজানের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। চার বছর চুটিয়ে প্রেম করার পরই বিয়ে করেছিলেন হৃতিক-সুজান। ২০০৬ সালে তাঁদের ঘরে আসে প্রথম ছেলে রিহান। দুই বছর পর তাঁদের দ্বিতীয় ছেলে রিদানের জন্ম হয়।
হৃতিক-সুজানের সম্পর্কে টানাপোড়েনের খবর প্রথম চাউর হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। হৃতিকের বাবা রাকেশ রোশনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সুজান তাঁর মা-বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে অতিথি হিসেবে হাজির হন। শুধু তা-ই নয়, বেশ দেরিতে অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও মাত্র আধঘণ্টা পরেই সেখান থেকে চলে যান সুজান। তাঁর এমন সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি ও হঠাত্ চলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা কানাঘুষা ওঠে।
শুরুর দিকে দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েনের খবরকে গুজব দাবি করলেও গত ১৩ ডিসেম্বর এক বিবৃতির মাধ্যমে হূতিক জানান, ‘১৭ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুজান। আমার পুরো পরিবার কঠিন একসময় পার করছে।’
হূতিক আরও জানান, ‘আমি কোনোভাবেই চাই না, আমাদের বিচ্ছেদের খবরে আমার ভক্তদের মধ্যে বিয়ে প্রথা নিয়ে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হোক। বিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমি এ প্রতিষ্ঠানটিকে সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখি।’
রিদান ও রিহানের সঙ্গে হূতিকবিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা জানালেও, এর পেছনের কারণ সম্পর্কে হূতিক কিংবা সুজান কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বিচ্ছেদের কারণ জানতে চাইলে সুজানের ভাষ্য ছিল, ‘অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই অনেক কিছু ঘটে যায়। পরিস্থিতিই মানুষকে বাধ্য করে অপ্রত্যাশিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে। বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে আমি স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমি নিজেও একজন মা এবং মেয়ে।’
হূতিক ও সুজান বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত পাকাপাকি করলেও, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন বিবাদ মিটিয়ে আবার নতুনভাবে সংসার জীবন শুরু করুক হূতিক-সুজান। হূতিকের বাবা অভিনেতা ও নির্মাতা রাকেশ রোশন এবং সুজানের বাবা অভিনেতা সঞ্জয় খান হূতিক-সুজানের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। তাঁরা সুজানের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করতে বলেন। কিন্তু কারও কথা না শুনে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত বিচ্ছেদের পথই বেছে নেন হূতিক-সুজান।
হূতিক ও সুজান কেউই তাঁদের বিচ্ছেদের মূল কারণ না জানালেও বলিউডে জোর গুঞ্জন, ক্যাটরিনার সঙ্গে হূতিকের ঘনিষ্ঠতা আর সুজানের সঙ্গে অর্জুন রামপালের ঘনিষ্ঠতার কারণে ভেঙেছে হূতিক-সুজানের সংসার। পর্দার পাশাপাশি বাস্তব জীবনে হূতিকের সঙ্গে ক্যাটরিনার ঘনিষ্ঠতা মোটেও মেনে নিতে পারছিলেন না সুজান। ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবিতে জুটি বেঁধেছেন হূতিক-ক্যাটরিনা। ছবির সেটে ক্যাটরিনার সঙ্গে হূতিকের উপস্থিতি নিয়ে হূতিক-সুজানের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়েছিল।
হূতিক ও ক্যাটরিনার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছে, ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে গিয়ে দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল হূতিক ও ক্যাটের মধ্যে। পরবর্তী সময়েও তাঁরা বন্ধুত্ব ধরে রাখেন।
হূতিক-ক্যাটরিনাকে এক ছবিতে অন্তর্ভুক্ত করে ফের এই জুটিকে কাছে আসার সুযোগ করে দেন ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবির পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ। গত বছরের জুনে ছবিটির শুটিং শুরু করেন হূতিক-ক্যাট। ছবির একটি ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান হূতিক। শুরুতে পাত্তা না দিলেও পরে স্বাস্থ্য-পরীক্ষায় জানা যায় হূতিকের মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। গত বছরের জুলাই মাসে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। সে মাসেই রণবীর কাপুরের সঙ্গে স্পেনে অবকাশযাপনে গিয়েছিলেন ক্যাট। স্পেন থেকে মুম্বাই ফিরে সরাসরি হূতিককে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান ক্যাটরিনা।
হূতিকের অসুস্থতার কারণে ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবির শুটিং পিছিয়ে যায়। এতে করে ক্যাটরিনার হাতে থাকা অন্যান্য ছবির শুটিং শিডিউল নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু কোনো রকম অভিযোগ না তুলে হূতিকের সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন ক্যাট। শুধু তাই নয়, হূতিক যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন এ জন্য সবসময় হূতিকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাঁর মনোবল বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন ক্যাটরিনা। হূতিককে খুশি রাখার জন্য তাঁকে প্রায়ই ফোন করতেন কিংবা মজার মজার এসএমএস পাঠাতেন ক্যাট।
অন্যদিকে, হূতিক ও সুজানের বিচ্ছেদের পেছনে বলিউডের অভিনেতা অর্জুন রামপালের হাত রয়েছে বলে খবর চাউর হয়েছিল। অবশ্য বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন অর্জুন। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য ছিল, ‘হূতিক ও সুজান দুজনই আমার খুব কাছের বন্ধু। কাছের কেউ যখন বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় তখন এমনিতেই মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। জীবনের কঠিনতম সময় পার করছে হূতিক ও সুজান। এ অবস্থায় অযথা ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানোর কোনো মানে হয় না। তাঁদের বিচ্ছেদে আমার সম্পৃক্ততা নিয়ে আজেবাজে কেচ্ছা-কাহিনি রটানো হচ্ছে। এটা আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে। হূতিক-সুজানের এই কঠিন সময়ে আমি ও আমার স্ত্রী মেহের সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। বরাবরের মতো এখনও আমরা তাঁদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।’
এ ছাড়া অর্জুনের পক্ষে সুজানও সাফাই গেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হূতিক ও আমার খুবই কাছের একজন বন্ধু অর্জুন। আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন অনেক বেশি দৃঢ়। অযথাই কাউকে দোষারোপ করার বিষয়টি একদমই অনুচিত একটি কাজ।’

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend