‘পাট কিনে চাষিদের দাম পরিশোধ করবেন না, তা মানা যাবে না’- সৈয়দ আবুল মকসুদ
লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘উনার বয়স হয়েছে। তাই মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা কথা বলেন। কিন্তু তাই বলে চাষিদের কাছ থেকে পাট নিয়ে দাম পরিশোধ করবেন না, তা মানা যাবে না।’
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী ও পাটচাষি সমিতি আয়োজিত এক সভায় সরকারের কাছে পাটচাষি ও ব্যবসায়ীদের পাওনা ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধের তাগিদ দিতে গিয়ে আবুল মকসুদ এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সভায় তিনি পাট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ নিয়ে কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেন। ওই কমিটির পরামর্শ নিয়ে পাট খাতকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত পাটচাষি ও ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে তাঁদের পাওনা ২৫০ কোটি টাকা দ্রুত পরিশোধ করার দাবি জানান। একই সঙ্গে আগামী পাট মৌসুমের জন্য প্রতি মণ পাটের সর্বনিম্ন দাম দুই হাজার টাকা করাসহ সাত দফা দাবি জানান তাঁরা।
সভায় শ্রমিকনেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী দেশের পাট খাতের এই করুণ দশার জন্য ভারতের বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাকে দায়ী করে বলেন, ‘এ কারণে আমরা অন্য বাজারগুলো হারিয়েছি। পাটকল পরিচালনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় ও বেশি দামে পাট কিনলে পাট খাত কখনোই লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারবে না।’
ফরিদপুর থেকে আসা পাটচাষি আবদুল লতিফ লাল বলেন, ‘ছয় মাস আগে সরকারি কলে পাট দিয়েছি। এখন পর্যন্ত টাকা পাইনি। একদিকে ব্যাংকের সুদ বাড়ছে আর অন্যদিকে টাকার অভাবে সন্তানের পড়ালেখা ও চিকিত্সার খরচ জোগাড় করতে পারছি না।’
বৈঠকে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, কৃষকের হাতে যখন পাট থাকে তখন বিজেএমসির কাছে তা কেনার টাকা থাকে না। আর ওই পাট যখন ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীদের হাতে গিয়ে দাম বেড়ে যায়, তখন বিজেএমসি সরকারের কাছ থেকে টাকা পায় ও পাট কেনা শুরু করে। এতে চাষি ও সরকার দুই পক্ষই লোকসানের শিকার হয়। পাটচাষিদের পাওনা আগামী পাট ক্রয় মৌসুমের আগে পরিশোধ করা হবে এবং মৌসুমের শুরুতে নগদে চাষিদের কাছ থেকে পাট কেনা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হুমায়ুন খালিদ বলেন, ২০০৯ সালে যখন বন্ধ পাটকলগুলো চালু হয়, তখন থেকে সেখানে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রতি সপ্তাহে ৮২ হাজার শ্রমিককে ১৮ কোটি টাকা মজুরি পরিশোধ করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইন বাস্তবায়ন হলে পাট খাত এই সংকটে পড়ত না।
অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী ও পাটচাষি সমিতির সভাপতি ইউনুস মিঞা সভাপতিত্ব করেন।