বৃদ্ধের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা : কালিগঞ্জে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা : মহিলাসহ আহত ৫
কালিগঞ্জে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মহিলাসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের উজায়মারী গ্রামে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উজায়মারী গ্রামের আয়জুল কারিকরের ছেলে আসাদ ও শাহমত আলী গাজীর ছেলে আমিনুরসহ কয়েকজন যুবক বিচিত্রানুষ্ঠান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মথুরেশপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জিএম মাহাতাব উদ্দীনের।
কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিফাতুল্লাহ জানান, উজায়মারি ও দেয়া গ্রামের মধ্যবর্তী একটি মাঠে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দুদলী গ্রামের মতলুব রহমানের ছেলে শাহীনুর রহমান নাচতে ওঠে। এ নিয়ে দেয়া গ্রামের কয়েকজন বাধা দেয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
তিনি আরো জানান, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেয়া গ্রামের কয়েকজন উজায়মারি চার রাস্তার মোড়ে কয়েকজনের ওপর পরপর তিনটি বোমা হামলা চালায়। এর মধ্যে দু’টি বোমা বিস্ফোরিত হলে দুদলি গ্রামের পাঁচজন আহত হন। তারা হলেন দুদলী গ্রামের শেখ আব্দুর রহমানের স্ত্রী আমেনা খাতুন (৩৫), রমজান মীরের ছেলে হেমায়েত আলী ওরফে ছোট বাবু (৩০), সৈয়দ শাহ আলমের ছেলে নুরে আলম (২৫), মৃত মোহর আলীর ছেলে শেখ আব্দুর রহিম (৪০), কাজী সাদুয়ার রহমানের ছেলে কাজী নাসারুল ইসলাম বাচ্চু (৪৫) আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়। বোমার আঘাতে আহতরা বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে এ ঘটনায় আরো কয়েকজন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও কিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বোমা হামলায় আহত দুদলী গ্রামের শেখ আব্দুর রহিম বাদী হয়ে কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নম্বর: ৪, তারিখ: ০৬/০৫/২০১৪) দায়ের করেছেন।
বৃদ্ধের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা : এদিকে কালিগঞ্জে সুকুমার ঘোষ (৭০) নামে এক বৃদ্ধের দুই পা ও হাত ভেঙে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তিনি উপজেলার তারালী ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের মৃত সুবির কৃষ্ণ ঘোষের ছেলে। এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আহতের পরিবারের সদস্য ও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত রাত সাড়ে ৭ টার দিকে জাফরপুর গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর ছেলে আমিনুর রহমান সরদারের ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে তারালী হতে বিশ্বনাথপুর মন্ডলপাড়া পূজামণ্ডপে যাচ্ছিলেন সুকুমার ঘোষ। তিনি পূজামণ্ডপের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পৌঁছানোর পর পূর্ব থেকে সেখানে অবস্থানকারী তেঁতুলিয়া গ্রামের গোবিন্দ ঘোষের ছেলে শেখর ঘোষ ওরফে বপ্পা (২৭), একই গ্রামের শহীদ কারিকরের ছেলে মনি কারিকর (৩০), মৃত মাধব অধিকারীর ছেলে গৌর অধিকারী (৩০) ও মৃত সুধান্য ঘোষের ছেলে গোবিন্দ ঘোষ (৫০)সহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন সন্ত্রাসী তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। তারা পরস্পর সংঘবদ্ধ হয়ে সুকুমার ঘোষের ওপর লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের হামলায় নিরামিষভোজী বৃদ্ধ সুকুমার ঘোষের মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এ সময় লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার দুই পা ও বাম হাতের কয়েক স্থানে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা ওই বৃদ্ধের ১৭ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। সুকুমার ঘোষ ও মোটরসাইকেল চালকের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে উপস্থিত জনতা গুরুতর আহত অবস্থায় সুকুমার ঘোষকে উদ্ধার করে মাইক্রোবাসে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সোমবার রাত ১০টার দিকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বৃদ্ধের ছেলে সঞ্জয় ঘোষ বাদি হয়ে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গকে আসামি করে গতকাল কালিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।