র্যাবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ; নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও ৭ খুন : আতঙ্কে সাত পরিবার
আতঙ্কে দিন কাটছে নারায়ণগঞ্জে নজরুলসহ নিহত সাতজনের পরিবারের সদস্যদের। পরিবারগুলোকে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কোত্থেকে কারা এই হুমকি দিচ্ছে সে বিষয়েও অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে পরিবারের আরো সদস্য হারাতে হবে বলে হুমকিদাতারা জানিয়ে দিয়েছে। নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান গতকাল লিখিতি অভিযোগ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, নিহতদের পরিবারের সদস্যসহ র্যাব কার্যালয় ঘেরাও করার পরিকল্পনা করছেন এলাকাবাসী। আজ তারা র্যাব কার্যালয় ঘেরাও করতে পারেন।অপহরণের চার দিন পর গত ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও চন্দন সরকারসহ মোট ছয়জনের লাশ উদ্ধার হয়। পরদিন সকালে উদ্ধার হয় আরো একজনের লাশ। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহৃত হন নজরুল, তার তিন বন্ধু, গাড়ির ড্রাইভার এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার ড্রাইভার। অপহরণ ঘটনার পরই নাসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নূর হোসেন, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন, নজরুলের চাচাশ্বশুর হাসমত আলী হাসু, ইকবাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সূত্র জানায়, এই আসামিদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ডিসি, এসপি, র্যাব-১১-এর কমান্ডিং অফিসার, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঘটনার পরই র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন নিহত নজরুলের পরিবার। তারা বলেছেন, র্যাবের সহায়তা ছাড়া এই অপহরণ ও খুন ঘটানো সম্ভব হতো না। গত রোববার নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস কাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নজরুলের শ্বশুর র্যাব-১১-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, র্যাব-১১ ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। টাকা কিভাবে লেনদেন হয়েছে তারও সূত্র দিয়েছেন নজরুলের শ্বশুর। তিনি বলেছেন, তারই ভাই হাসুর অ্যাকাউন্ট থেকে দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই অ্যাকাউন্ট খুঁজে দেখলেই অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও মামলার তদন্তকারীরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে। ঘটনার পর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও অভিযোগ করেন, এর সঙ্গে র্যাব সম্পৃক্ত রয়েছে। এত দিন তারা মৌখিকভাবে মিডিয়ার কাছে অভিযোগ করলেও গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ অভিযোগ দাখিল করেন নারায়ণ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে। পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন তাদের এই অভিযোগ গ্রহণ করেছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও শ্বশুর শহীদুল ইসলাম পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। তাদের সাথে ছিলেন নজরুলের ভাই আব্দুস সালাম ও শ্যালক সাইদুল ইসলাম। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম আবারো বলেন, প্রশাসনের লোকজন জড়িত না থাকলে নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের পক্ষে এত বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব হতো না। নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার না করা হলে সিদ্ধিরগঞ্জের কেউ নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, নতুন এসপি আমাদের বলেছেন, দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। যে মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য নজরুল আদালতে গিয়েছিলেন, সেই মামলার ব্যাপারেও সঠিক তদন্ত ও মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
সেলিনা বলেন, এখন তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। লাশ উদ্ধারের পর থেকে তাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন অন্যান্য পরিবারকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভয়ে নিহতদের সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। সেলিনা বলেছেন, তারা ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। নজরুল হত্যা নিয়ে রাজনীতি না করার ব্যাপারেও সেলিনা সবাইকে অনুরোধ করেছেন।
নজরুলের শ্বশুরের মোবাইল ফোনেও কে বা কারা হুমকি দিয়ে আসছে। নম্বরবিহীন ওই কলগুলোর ব্যাপারে তিনি প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত হুমকিদাতাদের কোনো সন্ধান মেলাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, এত দিন যে কথাগুলো তিনি বলেছেন, সেই কথাগুলোই লিখিতভাবে তিনি পুলিশ সুপারকে দিয়েছেন।
এ দিকে, র্যাব-১১-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর র্যাব সদর দফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে। কমিটিকে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।