অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে … মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক

মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক
মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক

৪ মে ২০১৩ তারিখ ছিল শনিবার। ৪ মে ২০১৪ ছিল রোববার। এক বছর আগের এই দিনটিতে দুপুরের পর, বিকেলবেলা ঢাকা মহানগরীর মতিঝিল শাপলা চত্ব¡রে ১৮ দলীয় জোটের বিরাট জনসভা ছিল। তিনটি রাস্তায় জনগণ বসেছিলেন, সবার মুখ এক দিকে অর্থাৎ শাপলার দিকে। মিটিং শুরু হওয়ার আগে, অনেক লোকের মনে অনেক রকম প্রশ্ন ছিল। একটি প্রশ্ন ছিল এ রকম যে, জনসভার পর এখানে কি অবস্থান ধর্মঘট বা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদী অবস্থান চলবে নাকি জনসভা শেষ হওয়ার পর সবাই যার যার বাড়িতে ফেরত যাবে? সরেজমিনে জনসভার সর্বশেষ বক্তা মাননীয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। প্রতিবাদী অবস্থানের কোনো ঘোষণা দেননি। অতএব, জনসভার লাখ লাখ লোক বাড়িতে ফেরত যায়। তবে ওই জনসভায় আগত লাখো জনতার একটি অংশ আশপাশেই থাকে, কারণ তারা পরের দিন ৫ মে তারিখের জনসভার জন্য ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসে পৌঁছে গিয়েছিলেন। পরের দিন রোববার ৫ মে তারিখে, একই মতিঝিল শাপলা চত্বরে স্টেজ বানিয়ে হেফাজতে ইসলাম নামক আন্দোলন, বিশাল জনসভার আয়োজন করেছিল। সেখানেও লাখের ওপর মানুষ হয়েছিল বলে পর্যবেকেরা মনে করেন। ৫ মে ২০১৩ তারিখ রোববার হেফাজতে ইসলামের জনসভা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত অবধি চলতে থাকে। গভীর রাতে জনসভার মানুষজন বিপ্তিভাবে নিজ বাড়ির দিকে রওনা দেয়া কষ্টকর বিধায়, তারা সেখানে অবস্থান করেন। সেখানে উপস্থিত জনতা মহাসড়কে, আশপাশের বিল্ডিংগুলোতে এবং বাসাবাড়িতে, যে যেখানে যেভাবে পেরেছিলেন সে রকমভাবে রাত কাটানোর বন্দোবস্ত করেন। নিজেদের সুঅভ্যাস মোতাবেক হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বেশির ভাগই গভীর রাতে ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত হন। ওই রকমই একটি পর্যায়ে, গভীর রাতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক অপারেশন চালানো হয়েছিল। সেই অপারেশনে কতজন গুম হয়েছেন, কতজন খুন হয়েছেন ইত্যাদি সংখ্যা আজ অবধি আনুষ্ঠানিকভাবে অনির্ধারিত। ২০১৪ সালের ৫ মে বিকেলবেলা আমার অফিসে বসে এই কলাম লিখতে গিয়ে তাদের সবার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাচ্ছি এবং যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
ইতঃপূর্বে, অন্য একটি সপ্তাহে, নয়া দিগন্ত পত্রিকার কলামে আমি বলেছিলাম যে, কলাম লেখার জন্য এত বিষয় সামনে থাকে যে, কোনটা ছেড়ে কোনটা নিয়ে লেখা উচিত সেটা স্থির করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এতদসত্ত্বেও কোনো না কোনো বিষয়বস্তুকে বেছে নিতে হবে। এই মুহূর্তের সর্বাধিক আলোচিত বিষয় নারায়ণগঞ্জের সাতজন হত্যা। এই কলাম লিখছি সোমবার ৫ মে ২০১৪ বিকেল ৫টার সময়, আমার অফিসে বসে। সম্মানিত পাঠক পড়বেন বুধবার ৭ মে ২০১৪ তারিখে নিজের সুবিধাজনক সময়ে। আগামী ৩৬ ঘণ্টা সময়ে নারায়ণগঞ্জের ওই ভীষণ আলোচিত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আর কী কী কথা মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সামনে উপস্থাপিত হয় সেটা আমার পে এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। কারণ অপহরণের দুই দিন পর লাশ পাওয়া গিয়েছে এবং এই মুহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন টকশোতে, অনলাইন পত্রিকায় এবং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের নিয়মিত নিউজের ফাঁকে ফাঁকে অনেক তথ্য ও মন্তব্যই উঠে আসছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম নির্বাচিত এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অন্যতম একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুরের নাম সংবাদে বহুবার উচ্চারিত হচ্ছে। ঘটনার ছয়-সাত দিন পর আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী, কেউ বলতে চাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের উপদলীয় কোন্দলের ফলে এই সাতটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আবার কেউ বলছেন, উপদলীয় কোন্দলন নয়, ব্যবসায়িক কারণেই ঘটেছে। নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর বলেছেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাব-১১-এর সদস্যরা এই গুম ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রচারিত বা আলেচিত বক্তব্য কোনটা সত্যা আর কোনটা মিথ্যা সেটা আমার পে বলা সম্ভব নয় এবং আমি এ নিয়ে মন্তব্যও করতে চাই না। আমার মনে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলো হলো, (প্রথম) দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন অবস্থায় গেলে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে পারে? (দ্বিতীয়) আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর মধ্যে অভিজাত এবং সুপরিচিত র‌্যাবের কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে কতটুকু প্রশ্নবিদ্ধ হলে, একজন ভুক্তভোগী প্রকাশ্যে মিডিয়ায় এই অভিযোগ আনতে পারে? (তৃতীয়) আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী তথা পুলিশ কতটুকু অবহেলাপূর্ণ মনোভাবের হলে, ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রায় ছয়-সাত দিন পর প্রথম অভিযানে নামে? (চুতর্থ) দেশের শাসন মতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের চিন্তা ও মনোযোগ কী পরিমাণ একচোখাভাবে শুধু বিরোধী দলের দিকে নিবদ্ধ করে রেখেছিলেন যে, তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি। (পঞ্চম) শাসক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক দেওলিয়াপনা কত গভীর ও ব্যাপক হলে, তারা অবলীলাক্রমে হাসতে হাসতে বলতে পারে যে, এ ঘটনা বিরোধী দল ঘটিয়েছে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য। (ষষ্ঠ ও শেষ) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা কতটুকু বেহিসেবি ও ‘লুজ’ হলে তিনি প্রকাশ্যে তাবৎ দুনিয়াকে সাী রেখে বলতে পারেন যে, এই কাজ বিএনপি করেছে, যেখানে তার দলের স্থানীয় নেতারাই হাজারবার বলছেন, আওয়ামী লীগেরই কেউ না কেউ এই ঘটনায় জড়িত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন শিতি ভদ্রমহিলা, অভিজাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, প্রায় চার দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ভারযুক্ত। তিনি দুইবার সুনিপুণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। একবার তথা বর্তমানে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কাউকে না কাউকে দেশ চালাতে হবে, তাই তিনি চালাচ্ছেন; কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দেশের সব ভোটার বা নাগরিককে বোকা মনে করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই; কিন্তু তিনি তাই মনে করছেন এবং সে জন্য বলতে দ্বিধা করছেন না যে, নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ড বিএনপি ঘটিয়েছে। এখন থেকে বছরখানেক আগে, কোনো একজন (নাস্তিক বা অনাস্তিক) ব্লগার ঢাকা মহানগরীর পল্লবী এলাকায় খুন হয়েছিলেন। ওই সময়ের (তথা বছরখানেক আগের) রাজনৈতিক-সামাজিক প্রোপটে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই নিহত ব্লগার রাজিবের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রাজিব হচ্ছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। সাতজন নারায়ণগঞ্জে নিহত হলেন; কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গেলেন না। মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও গেলেন না। পাঠক সম্প্রদায় বিচার করবেন, মাননীয় শেখ হাসিনা পল্লবীতে গিয়েছিলেন রাজনৈতিক বাহবা কুড়ানোর জন্য এবং তার সরকারের বা তার সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট গণজাগরণের নেতাকর্মীদের কাছে রাজনৈতিকভাবে প্রিয় হওয়ার জন্য। পাঠক সম্প্রদায় এটাও বিচার করবেন যে, মাননীয় শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জে গেলেন না, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির আশঙ্কায়। অথচ তিনিই বিপুল জনপ্রিয়তায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আস্থাভাজন প্রধানমন্ত্রী। আফসোসের বিষয়!
বিখ্যাত সাংবাদিক নির্মল সেন এক সময় লিখেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, অথবা এ রকমই একটি কথা। এটি আজকে লাখো মানুষের কথা। মানুষ মারা যাবে এটাই বাস্তব; কিন্তু পরিবার-পরিজনবিহীন অবস্থায়, নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে, এমনকি মৃত্যুর আগে কলেমা পড়ার সুযোগ না পেয়ে এই পৃথিবী ছাড়তে হবে এই কল্পনা কোনো মুসলমান করে না। কল্পনা না করলেও বর্তমান সরকার মানুষকে সেই বাস্তবতাই উপহার দিচ্ছেন। গুম, খুন ইত্যাদি এখন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শতভাগ অনৈতিক ও সমাজবিরোধী কাজের জন্য রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাই দায়ী। পৃষ্ঠপোষকতা বললে যদি কম বলা হয়, অথবা বেশি বলা হয় তাহলে বিকল্প শব্দ হবে, ঘটনাবলির প্রতি শাসক দলের নির্লিপ্ততা; কিন্তু দেশ এভাবে চলতে পারে না। বহু দিন ধরে বহু মাধ্যমে বহু ব্যক্তি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার; কিন্তু সরকার কোনো কিছুকে গ্রাহ্য করেনি। রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যস্ত বিরোধী দলের রাজনৈতিক মিছিলকে দমন করার জন্য, সরকারি পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি নকল পুলিশি পোশাকে সরকারি রাজনৈতিক দলের ক্যাডার ও কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে রাজপথে ব্যস্ত থেকেছে। বহু ছবি টেলিভিশন এবং পত্রিকায় এসেছে। সরকারি রাজনৈতিক দল এবং সরকার দু’টি যখন এক হয়ে যায় তখন কোনো পার্থক্য রা করা মুশকিল। সরকারি রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা থানাকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, সরকারি অফিস আদালত নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং সার্বিকভাবে অসৎ সরকারি কর্মকর্তাদের (পোশাকধারী হোক বা পোশাকধারী না হোক) সহায়তা করেছেন। যার ফলে সরকারি আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী, তাদেরই অনানুষ্ঠানিক দোসর বা অনানুষ্ঠানিক সহকর্মী সরকারি রাজনৈতিক ক্যাডারদের শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করবে কিভাবে? কারণ উভয়প মিলেমিশেই অপকর্ম করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর ধরে কোনো প্রকারের পদপে নেয়নি। এখন নেবে কি না জানি না। নিজেদের স্বার্থে না হলেও, জনগণের স্বার্থেই তাদের পদপে নেয়া উচিত। আমজনগণের স্বার্থে না নিলেও, খাস আওয়ামী লীগার ভোটার জনগণের স্বার্থেই নেয়া উচিত। কারণ গুম, অপহরণ, হত্যা এখন আর বাছ-বিচার করছে না। এত দিন বিরোধী দল এবং ধনী ব্যক্তিরা টার্গেট ছিল, এখন আওয়ামী লীগও টার্গেট হয়েছে।
বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধান বিরোধী দল (যদিও সংসদের বাইরে) একাধিক প্রকারের ও মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। রোববার ৪ মে ২০১৪ ঢাকা মহানগরে অবস্থিত জাতীয় প্রেস কাবের সীমানার ভেতরে উন্মুক্ত অঙ্গনে বিএনপির উদ্যোগে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গণ-অনশন কর্মসূচি পালিত হয়। গুম, হত্যা, অপহরণ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার প্রতিবাদে এই গণ-অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল। কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানানোর জন্য ১৯ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চে উপস্থিত হন এবং সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। জোটের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ‘বিকল্প ধারা’-এর সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর বি চৌধুরীও মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। গুম হয়ে যাওয়া বহু ব্যক্তির স্বজন মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সবার সামনে তাদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন, কয়েকজন অশ্র“সজল নয়নে, অশ্র“ভেজা কণ্ঠে মাইকের সামনে একটি বা দু’টি বাক্য বলতে পেরেছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঢাকা মহানগরের ক্র্যাক প্লাটুনের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ঢাকা মহানগরের সফল সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। সাদেক হোসেন খোকা সাহসী বীরের মতোই উপস্থিত হাজারো জনতার প থেকে স্পষ্ট বাক্যে সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বেগম খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। শুধু আলোচ্য বিষয় নয়, আগামী দিনের আন্দোলন নিয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি জোটের সব শরিক দলকে নয়, জোটের বাইরে সব বন্ধুপ্রতিম রাজনৈতিক দলকে, বর্তমান গণবিরোধী সরকারকে হটানোর আন্দোলনে স্বাগত জানান। তিনি সবাইকে নিয়েই আন্দোলন করবেন এবং সফল আন্দোলনের পর সবার অংশীদারিত্বেই সরকার গঠন করবেন বলে ঘোষণা দেন। বেগম জিয়ার প্রত্যয়দীপ্ত কণ্ঠ এবং আহ্বানগুলো মানুষকে পুনরায় উদ্দীপ্ত করেছে। বহু লোকই বলেছে, ৪ মে তারিখের গণ-অনশনেই গণ-অভ্যুত্থানের ‘চারা’ রোপিত হলো। তবে বাংলাদেশের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষ মাননীয় বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি এবং ১৯ দলীয় জোটের কাছ থেকে আরো কঠোর আরো দ্রুত আরো বেগবান আন্দোলন কামনা করছে। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় সংবাদগুলোর নিচে মতামতে এই ধরনের বক্তব্যই আসছে। উদাহরণস্বরূপ গুডনিউজবিডিডটকম (goodnewsbd.com) নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সাধারণ মানুষের মতামত দ্রষ্টব্য। ওই নিউজ পোর্টালে ‘ফেসবুক’ শিরোনামের নিচে পাঠকদের মতামত যে কেউ দেখতে পারেন। কেউ গণ-অনশন সমর্থন করছেন, কেউ এটাকে অনেক কম বলছেন, কেউ এটাকে বিলম্বিত পদপে বলছেন, কেউ আরো কঠোর কর্মসূচির কথা বলছেন, কেউ গণ-অনশনের নেতিবাচক সমালোচনা করছেন; কিন্তু সবাই অস্থির এবং উদ্বিগ্ন। এ রকম প্রত্যেকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে বা দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এরূপ প্রচুর মতামত আছে।
শুধু ১৯ দলীয় জোট বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নয়, সাধারণভাবে সব নাগরিকই বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। এই কলাম লেখার সময়ই, ৫ মে ২০১৪ তারিখের বিকেল ৫টার সময় টেলিভিশনের পর্দায় ছবি দেখছি, জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নাগরিক সমাজ বা সুশীলসমাজের ব্যক্তিরা মানববন্ধন করছেন। সেই মানববন্ধনে যাদের চেহারা দেখেছি, তাদের মধ্যে সবাই অন্ধভাবে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সমর্থক নন। তাদের বক্তব্য পরিষ্কার। আশ্চর্যের বিষয় হলো, একই মানববন্ধন ৪ মে ২০১৪ তারিখে পুলিশ করতে দেয়নি। টেলিভিশনের টকশোগুলোতে এবং ৫ মে তারিখে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোতে দুর্দান্ত সমালোচনা হয়েছে। এই সরকার ৪ তারিখে কেন মানববন্ধন করতে দেয়নি তার উত্তর সরকারই দিতে পারবে। আমাদের অনুমানের উত্তর হলো, সরকার সমালোচনাকে ভয় পায়, সরকার দমন-পীড়ন করার কাজকে পছন্দ করে, সরকার প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠ রোধ করার কাজে আরো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। কলাম শেষ করছি প্রার্থনা দিয়ে। প্রার্থনা হচ্ছে, ‘(হে মহান সৃষ্টিকর্তা ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক) অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে’।

বাংলার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং আরো দাঁড়াবে এটা আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন।
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend