প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ :বোরহান উদ্দিন রুবেল
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখার মতো যোগ্যতা বা অধিকার কোনটাই আমার নেই। তবু কেন জানি অজানা এক তাড়না বার বার আমাকে তাড়া করছে যে তাঁকে নিয়ে কিছু লেখার জন্য। আজ তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’ পড়া শেষ করলাম। শেষ করে মনে হল দেয়ালের উপর একটি রিভিউ লিখি। কিন্তু লিখতে গিয়ে মনে হল ইহার স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আগে কিছু লিখে নেই। তাহলে অন্তত তাঁর সৃষ্ট “দেয়াল” নিয়ে কিছু লেখার অধিকারটুকু পাওয়া যাবে।
এই প্রখ্যাত লেখক জন্মগ্রহণ করেন নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের কুতুবপুরে। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে এসএসসি (SSC) পাস করেন ,ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি (HSC) আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন এবং পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসবে যোগ দেন।
ছোটবেলা থেকে তাঁর লেখালেখির উপর চর্চা ছিল। ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ নন্দিত নরকে ’ প্রথম প্রকাশিত হয় আহমদ ছফার উদ্যোগে। ১৯৯৪ সালে তাঁর প্রথম ছায়াছবি ‘ আগুনের পরশমণি ’ মুক্তি পায়। তিনি ২০১২ সালের ১৯ শে জুলাই নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেন। তাঁকে তাঁর প্রিয় স্থান নুহাশপল্লীতে কবর দেয়া হয়।
তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুইশতেরও বেশী। বই ছাড়াও তাঁর অনন্য একটি সৃষ্টি হল চল্লিশ বিঘা জমির উপর শিল্পকলার ছাপসহ নুহাশপল্লী। নুহাশপল্লী দেখলে মনে হয় তিনি যেন এর প্রতিটি জায়গা নিজের মত করেি তৈরি করেছেন। আর তাঁর সর্বশেষ বই হল “দেয়াল”, যদিও তা সমাপ্ত করে যেতে পারেননি।
দেয়ালের ভূমিকায় আনিসুজ্জামান বলেছেন- “যদিও এটা সংস্কারের পর প্রকাশিত হয়েছে তবুও এটা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে।”
তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় বাঙালি কথা সাহিত্যিকদের অন্যতম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হয়। তিনি একেধারে ঔপন্যাসিক , ছোট গল্পকার , নাট্যকার ও গীতিকার। বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাঁকে পথিকৃৎ বলা হয়। তাঁর কিছুকিছু সৃষ্টি মানুষকে আজীবন নাড়া দিবে। যেমন , হিমু , মিসির আলী ও বাকের ভাই। তাইতো মারা যাবার পর The Times of India ১৬ আগস্ট Tears for Humayun Ahmed : The Shakspear of Bangladesh নামক একটি শিরোনামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। যাতে লেখা ছিল- Humayun was a custodian of Bangladeshi literary culture whose contribution single handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution।
তবে তাঁর প্রথম জীবনের লেখার সাথে শেষ জীবনের লেখার অনেক পার্থক্য রয়েছে। এমনকি তাঁর ধর্মীয় চিন্তা ভাবনায়ও তিনি শেষ জীবনে এনে ছিলেন পরিবর্তন। তিনি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এঁর জীবনীও লেখার জন্য সকল নথিপত্র ঠিক করে রেখেছিলেন। তাঁর শেষ জীবনে রচিত কিছু গানেও ধর্মীয় ভাব রেখেছিলেন।
সাধারণত তাঁর লেখার যে ধরন ছিল তা হল সাধারন মানুষের কথাগুলো তাঁর গল্প উপন্যাসে এমনভাবে লিখতেন যে , যে কোন ধরণের মানুষ এটা পড়লে মনে করত এটা তাঁকে নিয়ে লেখা। তাঁর লেখা বুঝতে কাউকে মাথা খাটাতে হতনা এভাবেই বুঝতে পারত । তাঁর লেখা ছিল এরকম যে, চকলেটের মত যতক্ষণ মুখে থাকে ততক্ষণ মিষ্টি, তেমনি তাঁর লেখা যতক্ষণ পড়া হয় ততক্ষণ ভাল লাগে। তারপর আর কোন চিন্তা ভানায় অথবা শিক্ষামূলক খুব বেশি কিছু থাকেন। তবে তিনি তাঁর সহজ সরল সাবলীল ভাষার উপন্যাস দিয়ে বাংলা ভাষার কিছু পাঠক তৈরি করে গেছেন। তিনি যখন শেষ জীবনে এসে বুঝতে পারলেন যে , তাঁর এই লেখাগুলো কালের উত্থান পতনে হয়তো হারিয়ে যাবে , তাঁকে কেউ আর হয়ত নজরুল রবীন্দ্রনাথের মত মনে রাখবেনা তখন তিনি ইতিহাস ও বাস্তব ভিত্তিক কিছু বই রচনা করার পরিকল্পনা করেন। তাই তাঁর শেষের দিকের প্রকাশিত বই , মুক্তি পাওয়া ছায়াছবিতে এবং গানে আমরা পরিবর্তন দেখতে পাই । যার একটি অন্যতম উদহারন হল ‘দেয়াল’ যা তিনি শেষ করতে পারেন নি। তবুও তিনি যা লিখেছেন তার জন্য তাঁকে বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিন মনে রাখবে । তিনি বাংলা সাহিত্যের বররপুত্র হয়ে এসেছিলেন বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য । বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করে এবং করবে ।
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়