সাংবাদিকদের সঙ্গীকথন

image_89922_0সাংবাদিকদের অফিস আওয়ার কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট শেষ হলেও তাদের ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকতে হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। সাংবাদিকদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তাদের ঈদ হোক,পূজা হোক, বাঙ্গালির উৎসব পহেলা বৈশাখ হোক কিংবা সরকারি ছুটি হোক  তাতে কিছুই যায় আসে না, প্রতিদিনই তাদেরকে কাজের মধ্যে থাকতে হয়। উৎসবের দিনগুলোতে সাংবাদিকেরা পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। এসব নিয়ে সাংবাদিক দম্পতিদের পরস্পরের প্রতি অভিযোগ, অনুযোগ, ভালোলাগা-মন্দলাগা, সহযোগী মূলক কথা, এসব নিয়েই এবারের আয়োজন।
 এটিএন নিউজের নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের এডিটর প্রভাষ আমিনের স্ত্রী মুক্তি শিকদার বলেন, স্বামীর পেশা সাংবাদিক হলে তার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলে সমস্যা হয় না। বিয়ের পর যখন রাত জেগে অপেক্ষা করতাম কখন বাসায় ফিরবে তখন আমার ননদ জেসমিন আমাকে রাগানোর জন্য বলতো, ‘সে যে ক্যানো আসে না আর ভালো লাগে না…।’ আমার রাত জাগা দেখে জেসমিন বিরক্ত হয়ে প্রায়ই বলতো ‘আমাকে কোনো সাংবাদিকের কাছে বিয়ে দিও না।
 সাংবাদিক পেশার খারাপ দিক যেমন আছে তেমনি ভালো দিক আছে, সময় পেলে ঢাকার বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানকার প্রতিনিধিরা সব কিছু আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখে। স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিতে পারি।
 উৎসবের আগের রাতে হয়তো আমি ঘর গুছানো কিংবা রান্না নিয়ে ব্যস্ত, সে দেখা যায় বেকিং নিউজ কি যাচ্ছে, নিউজ রুমে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা নিয়ে ব্যস্ত। বাসায় থাকলেও মন থাকে নিউজরুমে। যখন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ম্যাসিভ দুর্ঘটনা হয় তখন স্থানীয় প্রতিনিধি ছাড়াও নিউজ কভার করতে রির্পোর্টার ও ক্যামেরাম্যানকে পাঠাতে হয়। তখন মনে হয় আমার স্বামীতো তাও বাসায় আছে আর যে প্রতিনিধি স্পটে যাচ্ছে তার পরিবারতো আমার চাইতে কষ্টে আছে। সব কিছুর পরও আমি বলবো সাংবাদিকেরা সাদা মনের মানুষ। তারা ভালো-মন্দ সব বিষয় বুঝতে পারে। সাংবাদিকরা পরিবারকে সময় দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সময় দিতে পারে না।
download (1)বাসসের নিউজ এডিটর মো. শওকত আলীর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার কাজ করেন অনলাইন পত্রিকার ডেস্কে। সাংবাদিক পেশায় থাকার কারণে স্ত্রীর সঙ্গে কোনো মনোমালিন্য হয় কিনা শওকত আলীর কাছে জানতে চাইলে খানিকটা মৃদু হেসে উল্টো তিনিই জানতে চান, সমস্যা হবে কেন? একই পেশায় থাকার কারণে আমাদের মধ্যে পেশাগত বোঝাপড়াটা খুব ভালো। আমার স্ত্রী সকালের শিফটে কাজ করে বাসায় আসে, আমি বের হই বিকেলে। বাচ্চার লেখাপড়া থেকে শুরু করে সংসারের সব দায়িত্ব দুজনে মিলেমিশে করি। আমাদের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
 সাবিকুন নাহার সুমি একজন গৃহিনী। তার স্বামী আকবর হোসেন একজন রিপোর্টার। স্বামী পেশা সাংবাদিক হওয়ার কারণে সুমির অভিযোগের যেন শেষ নেই। বাংলামেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ওতো সারাক্ষণ নিউজের জন্য বাইরে থাকে। কাজ শেষে অনেক রাতে বাসায় এসেও নিউজ করে। বিশেষ দিনগুলোতে আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারে না, বাসায় এসেও আমাকে একটু সময় দেয় না। এছাড়া তিনি আরো বলেন, কোনো রিস্ক অ্যাসাইনমেন্টে গেলে বাসায় যতক্ষণ না ফিরে ততক্ষণ অজানা আশঙ্কায় থাকি।
আলাপ কালে জানতে চাইলাম অনেক রাতে বাসায় ফিরে তখন মনে হয় না কোনো মেয়ের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আসছে কিনা? বলতেই হা হা হা করে সুমী হেসে বলেন, আকবরের প্রতি আমার শতভাগ বিশ্বাস আছে, কিন্তু আমাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন সাংবাদিকতা পেশায় নেই। আকবরের রাতে ফেরা নিয়ে মাঝে মাঝে আমার বাবার বাড়ির অনেকেই যখন প্রশ্ন তোলেন তখন মাঝে মাঝে সন্দেহ হলেও খানিকটা পর ঠিক হয়ে যায়।
download (2)ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সুলতানা রহমানের স্বামী নুরুর রহমান বলেন, আমি ব্যবসা নিয়ে যতই ব্যস্ত থাকিনা কেন, তারপরও পরিবারকে সময় দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার স্ত্রী অফিস শেষে কিংবা অফডেতে বাসায় থাকলেও শুধু নিউজ নিয়ে ব্যস্ততায় সময় কাটে। সারক্ষণ মাথার মধ্যে থাকে নিউজের সোর্স ফোন দিলো কিনা, কোথাও কোন দূর্ঘটনা ঘটলো কিনা। বাসার বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে দেখা যায় সুলতানা দেখতে থাকে আপডেট নিউজ কি, যেখানে ঘুরতে গেছে সেখানকার উপর কোনো নিউজ করা যায় কিনা। এছাড়া সুলতানা যখন বাসায় আসে তখন আমরা সবাই ঘুমে থাকি, মাঝে মাঝে আবার দেখা যায় আমাদের ঘুমে রেখেই অ্যাসাইনমেন্টে চলে গেছে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend