জামাতার কারণে এবার আলোচনায় মন্ত্রী মায়া
আবারো ঘুরে ফিরে আলোচনায় এসেছেন বর্তমান সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তবে এবার ছেলের অপকর্মের জন্য নয়, জামাতার জন্য আলোচনায় এসেছেন মায়া। কয়েক দিন ধরেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। এমনকি দলের মধ্যেও তিনি এখন আলোচনার শীর্ষে। দলের মধ্যে যারা তার বিরোধী রয়েছেন তারা এই বিষয়টাকে আরো বড় করে উপস্থাপন করছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ যাদের কর্মকাণ্ডে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল তাদের অন্যতম ছিলেন মায়ার বড় ছেলে দিপু চৌধুরী। সরকারি জমি, বাড়ি, মাঠ, বাজার দখল থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ ছিল না, যা তিনি করেননি। এ কারণে শুধু মায়া চৌধুরীর পরিবারই নয়, দলও বেশ খেসারত দিয়েছে ওই সময়। এখন তিনি পুরোপুরি নিশ্চুপ। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এখন আর শোনা যায় না। বর্তমান সরকারের সময়েই শুধু নয়, মহাজোট সরকারের গত পাঁচ বছরেও তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। এ সময়ে তিনি ব্যবসায়-বাণিজ্য আর ফোর লেন রাস্তার একটি কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তবে নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম চেয়ারম্যান দিপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, কিলার নূর হোসেনের সাথে দিপু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সখ্য রয়েছে।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবার আলোচনায় এসেছেন তার মেয়ের জামাতা চাকরিচ্যুত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদকে দিয়ে। নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যায় অভিযুক্ত তারেককে গত মঙ্গলবার সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তারেক র্যাব-১১-এর অধিনায়ক ছিলেন। ক্ষমতাধর এই কর্মকতাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ২ মে সেনাবাহিনী থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এর পরদিন (৩ মে) নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদ চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘নূর হোসেনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র্যাব-১১ নজরুলকে হত্যা করেছে।’ শহিদ চেয়ারম্যানের এ অভিযোগের পর গণমাধ্যম নড়েচড়ে ওঠে। তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে নেমে পড়েন সাংবাদিকেরা। আস্তে আস্তে রহস্যের জটও খুলতে শুরু করে। গত মঙ্গলবার নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম চেয়ারম্যান র্যাব-১১-এর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেন। নজরুলের স্ত্রীও শুরু থেকে এই ঘটনার সাথে র্যাবের সম্পৃক্ততার কথা বলে আসছেন। তিনিও অভিযোগ করেন, র্যাবের সম্পৃক্ততা ছাড়া নূর হোসেনের পক্ষে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব ছিল না। অবশেষে ৬ মে তারেকসহ আরো দু’জন কর্মকর্তা চাকরি হারান। চাকরিচ্যুত লে. কর্নেল তারেকের (বিএ ৪১২৭) বিরুদ্ধে এটিই প্রথম অভিযোগ নয়। এর আগে লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যেসব হত্যা-গুমের ঘটনা ঘটেছে তারও কিছু ঘটনা তার জ্ঞাতেই হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা থেকে অপহরণের পর লক্ষ্মীপুরে শামসুল ইসলাম সোলায়মান নামে এক যুবদল নেতার লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনাটিও তারেকের জ্ঞাতেই ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও গত ২৫ নভেম্বর তার নেতৃত্বাধীন ফোর্সের হাতে নিহত হন লাকসাম জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম হীরু এবং লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ। একাধিক সূত্র জানায়, এবার খোদ আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নিহত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সরকারের ওপর মহলও ুব্ধ। আর এ কারণেই মায়া চৌধুরীরা জামাতা তারেককে বিপাকে পড়তে হয়।
এসব ঘটনায় গণমাধ্যমে ঘুরে ফিরে বারবার আলোচনায় আসছেন সরকারের ক্ষমতাধর মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নিয়ে কোনো আলোচনায় না এলেও তিনি তার জামাতার কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দেশব্যাপী এখন শুধুই আলোচনা লে. কর্নেল তারেককে নিয়ে। আলোচনার শুরুই হয় ‘তারেক হলেন মায়া চৌধুরীরা জামাতা’ এই দিয়ে। তার সাথে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে গণমাধ্যমের তদন্ত প্রতিবেদন। এতে সংবাদ শিরোনামও হচ্ছেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের ভেতরেও মায়া চৌধুরীর বিপক্ষে একটি শক্তিশালী গ্রুপ রয়েছে।