কিন্তু নির্বাচনকে ছাড় দেয়া যায় না! : মিনা ফারাহ
ক্রেমলিন আর হোয়াইট হাউজ যখন ঠাণ্ডা যুদ্ধে নামে, মারা যায় এমন কিছু মানুষ, যাদের মাথাপিছু আয় ২০ হাজার ডলারের বেশি। আর গণভবনের বাসিন্দারা যখন ক্রেমলিন বা হোয়াইট হাউজের বিলাসিতায় আক্রান্ত হয় তখন মারা যায় কুলি-মজুরনির্ভর দেশের মানুষেরা, যাদের দৈনিক মাথাপিছু আয় দুই ডলারের কম। ৪০০ যাত্রী নিখোঁজ হওয়ার দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করলেন দণি কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এই দৃষ্টান্ত বহু। রানা প্লাজায় কী ঘটল নতুন করে বলছি না, এরপরও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ না করার কোনোই কারণ ছিল না; কিন্তু তিনি তা করেননি। বলছি, অসীম মতার কথা।
চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভাসানী প্লানেটোরিয়াম… ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সবই তো দিলাম! কিন্তু তার পরেও কি গণভবনের হাত থেকে নির্বাচনকে ছাড় দেয়া যায় না? মনে হওয়াই স্বাভাবিকÑ দেশে যদু, মধু, রাম, শ্যাম কেউই নেই; যাদের নামে একটি দিন কিংবা একটি স্থাপনাও ছাড় দেয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল ৩২ নম্বর সড়কটি পর্যন্ত পাবলিকের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি পরিবারতন্ত্রবাদীদের কারণে খেলার মাঠগুলোও কি রেহাই পাচ্ছে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের ডোবানোর একমাত্র কারিগরকে নামানো হলো ধানমন্ডি কাবটিকে শেখ জামাল বানানোর সাফাই সাীর কাজে (দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ এপ্রিল ২০১৪)।
ভূমিদস্যুদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল। সুস্থ কোনো মানুষই বিশেষ করে শিশুদের খেলার মাঠ দখল করবে না কিংবা কাউকে করতেও সহায়তা করবে না। এমনকি ধর্মগ্রন্থেও খেলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। তবে বাধ্য হয়ে দখলমুক্ত হতে আবারো প্রধানমন্ত্রীর হস্তেেপর মতো নৈরাজ্যকর দৃষ্টান্ত। বলতে চাইছি, একে একে সবই চলে যাচ্ছে পরিবারতন্ত্রবাদীদের কোর্টে। সব নিন, কিন্তু নির্বাচনকে পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি দিতে হবে। ’৭১-এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি দেশ ভেঙে দু’খানা হওয়ার ঐতিহাসিক উদাহরণ। ভুট্টোর সমস্যা ছিল, মতা হস্তান্তর করবে না। এদের সমস্যা, ধারকাছ দিয়েই যাবে না।
নির্বাচন তো তারা করবেই, খালেদা জিয়া শিশু নন যে তিনি তা জানতেন না। তবে এখন আর নির্বাচন নয়, বরং ৩৯ বছর পর আবারো আমৃত্যু মতা দখলের অগ্রিম ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না সেটাই দুর্ভাবনা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, কিন্তু সে বিষয়ে কেউই আর মুখ খোলে না। বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে সত্য হওয়ায় এর গুরুত্ব ভয়াবহ এবং ৩৯ বছর পর আবারো আমরা আতঙ্কিত। ১৯৭৫-এর সেই বেদনার্ত দিনে কী ঘোষণা আসছিল, প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ বইটিতে সামান্য আলোকপাত হয়েছে। একটি দৈনিকে কয়েক কিস্তি প্রকাশের সাথে সাথে আতঙ্কিত উচ্চমহলে বইটি নিয়ে ধাক্কাধাক্কি। ‘দেয়ালে’ যা আছে, হুবহু প্রকাশ হলে সর্বনাশ। তাহলে কী করা উচিত? ডাকা হলো জল্লাদ। প্রথমচোটে বিনয়ের সাথে ‘দেয়াল’ বিষয়ে ওদের দ্বিমত পোষণ। বিব্রত বিশেষজ্ঞদের অস্বস্তি প্রকাশ পেল চোখেমুখে, কারো কারো সাাৎকার এবং কলামে। হুমায়ূন তো যেনতেন নন কিংবা অন্যদের মতো দলবাজও নন। ক্যান্সার-আক্রান্ত লেখক তখন আমার বাসা থেকে মাত্র এক মাইল দূরে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর। শেষ পর্যন্ত আদালতের দোহাই দিয়ে বইটিকে যা বানানো হলো, আমার ধারণা, হুমায়ূনের দীর্ঘ লেখকজীবনে এটাই সবচেয়ে বড় পরাজয়; আর ভাগ্য ভালো সরকারের। মৃত্যু সামনে, তাই প্রতিবাদ বা প্রতিশোধের কারণ কম। তবে এত ছুরি পার হওয়া বইটিতে যতটুকুই প্রকাশ হলো, বিশ্বাস করি, অত বের হলে হুমায়ূনকেও হয়তো অন্যদের মতো আদালতে ব্যস্ত থাকতে হতো। লিখেছেন, গণতন্ত্র হত্যায় বাকশালসহ সেই রাতে ‘আজীবন রাষ্ট্রপতি’ ঘোষণার ল্েয ভার্সিটির বিশাল আয়োজনের এবং আগেভাগে শিকদের দেয়ানেয়ার ব্যবস্থা পাকা করে তবেই সমর্থনপত্রে সই বা সায় যার কোনোটাই দেননি লেখক। বলছি, ইতিহাস পুনরাবৃত্তির অপ্রিয় সত্য কথা।
দেয়াল : “একটি বিশেষ গুজবের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকদের মধ্যে আনন্দময় চাপা উত্তেজনা। স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন উৎসব হতে যাচ্ছে। উৎসবের প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শোনা যাচ্ছে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকেরা আলাদা মর্যাদা পাবেন। তাদের বেতন বৃদ্ধি ঘটবে। সবার বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। যারা বাসা পাবেন না, তাদের এমনভাবে বাড়িভাড়া দেওয়া হবে যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশেই বাড়িভাড়া করে থাকতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকেরা হবেন অতিরিক্ত মর্যাদার শিক। এখানেই শেষ না, আরো আছেÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রস্তাব করা হবে যেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আজীবন প্রেসিডেন্ট হন। বঙ্গবন্ধু এই প্রস্তাব বিনয়ের সাথে মেনে নেবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকেরা এত কিছু পাচ্ছেন, তার বিনিময়ে কিছু তাদের দিতে হবে। এটাই ভদ্রতা এবং শিষ্টতা। শিকেরা সবাই এ দিন বঙ্গবন্ধুর ‘বাকশাল’-এ যোগদান করবেন। সব শিকের বাকশালে যোগদানের অঙ্গীকারনামা একটি রুপার নৌকার খোলের ভেতরে ভরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেওয়া হবে।… যাই হোক, আমি জাফর স্যারের সাথে দেখা করলাম। স্যার বললেন, তুমি এখনো পিএইচ.ডি করো নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করতে হলে এই ডিগ্রি লাগবেই। তুমি যে কাণ্ড করেছ, এতে সরকারের কাছে বৈরী হয়ে যেতে পার। তখন স্কলারশিপেরও সমস্যা হবে। আমার আদেশ, তুমি বাকশালের কাগজপত্রে সই করবে। আমি বললাম, আপনার আদেশের বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বাকশালে যোগদানের কাগজে দস্তখত করার জন্য রসায়ন বিভাগের অফিসে গেলাম। আমাকে জানানো হলো কাগজপত্র রেজিস্ট্রার অফিসে চলে গেছে। রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে জানলাম সব কাগজপত্র ভাইস চ্যান্সেলরের বাসায় চলে গেছে। আগামীকাল ভোর সাতটা পর্যন্ত সময় আছে ভাইস চ্যান্সেলরের বাসায় গিয়ে বাকশালে ভর্তি হওয়ার। আমি মনে মনে আনন্দিতই হলাম। স্যারকে বলতে পারব, চেষ্টা করেছিলাম। আমরা তখন থাকি বাবর রোডের একটা পরিত্যক্ত দোতলা বাড়ির একতলায়। সরকার শহীদ পরিবার হিসেবে আমার মাকে সেখানে বাস করার অনুমতি দিয়েছিলেন। এই নিয়েও লঙ্কাকাণ্ড। এক রাতে রীবাহিনী এসে বাড়ি ঘেরাও করল। তাদের দাবিÑ এই বাড়ি তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রীবাহিনীর কর্মকর্তা এখানে থাকবেন। মা শহীদ পরিবার হিসেবে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়ার চিঠি দেখালেন। সেই চিঠি তারা মায়ের মুখের ওপর ছুড়ে ফেলল। এরপর শুরু হলো তাণ্ডব। লেপ-তোষক, বইপত্র, রান্নার হাঁড়িকুড়ি তারা রাস্তায় ছুড়ে ফেলতে শুরু করল। রীবাহিনীর একজন এসে মায়ের মাথার ওপর রাইফেল তাক করে বলল, এই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে বের হন, নয়তো গুলি করব। মা বললেন, গুলি করতে চাইলে গুলি করুন। আমি বাড়ি ছাড়ব না। এত রাতে আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো? আমার ছোটভাই জাফর ইকবাল তখন মায়ের হাত ধরে তাকে রাস্তায় নিয়ে এলো। কী আশ্চর্য দৃশ্য! রাস্তায় নর্দমার পাশে অভুক্ত একটি পরিবার বসে আছে। সেই রাতেই রীবাহিনীর একজন সুবেদার মেজর ওই বাড়ির একতলায় দাখিল হলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে উঠে পড়লেন।” সারমর্ম : লেখাটি পড়লে যা দাঁড়ায়, বাকশাল কায়েম এবং আজীবন রাষ্ট্রপতি থাকার ইতিহাস সৃষ্টিকারী উল্লেখযোগ্য সময়ের কথাই লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ।
অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী (অস্থায়ী) তাজউদ্দীনের কন্যার লেখা বইটি যেন খরায় একপশলা বৃষ্টি। এরপর সাদাকে আর কালো বলার সুযোগ নেই।
ঘটনার ৩৯ বছর পর ২০১৪ সালে আবারো আজীবন মতার গুঞ্জন নিছক গুজব বলেই বিশ্বাস করতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই, ফের এতটা চরমে যাবে না আওয়ামী লীগ। কিন্তু ওদের বিশ্বাস কি? কারণ বারবারই বিশ্বাসের জায়গায় আঘাত হানছে ওরা। এবার আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকার প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক আলাপ অগ্রিম সম্পন্ন করার গুজব। গুজব কি কেবলই গুজব! একমাত্র শেখ হাসিনা এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছাড়া কেউ তা জানে না। তবে কেউ যদি ভুলেও চিন্তা করে এসব এক দিন বা এক মাসের পরিকল্পনা, আবারো ধরা খাবে। কারণ, তাদের অতীত ইতিহাস মোটেও ভালো না। ২০০৬ থেকে ২০০৮ দু’টি বছরে এ দেশের ভাগ্য নতুন করে সংস্কার হয়েছিল। দেশী-বিদেশী বহু কারিগর আজকের বাংলাদেশের জন্য দায়ী, যাদের অন্যতম ১/১১-এর দুই মীরজাফর, মাইনু এবং ফখরু। তখন বহু পরিকল্পনায় মাঠে নেমেছিল একাধিক মতাধর বহিঃশক্তি, ধাপে ধাপে যার প্রতিফলন দেখে জাতি শুধু টকশো আর লংমার্চ করেছে, কিন্তু খতিয়ে দেখেনি কেন ১৫তম সংশোধনী! বলতে চাইছি, বিডিআরের ঘটনা যখন ঘটল, বরং তখনই অনুমান করা উচিত ছিল, হঠাৎ কেন মিউটিনি? এ রকম বহু অঘটন ঘটলেও মানুষ নির্বিকার, সরকার অসীম মতাধর। সুতরাং চতুর্থ-এর ধারাবাহিকতায়, আজীবন মতার অগ্রিম প্রস্তুতি যে নিছক গুজব নয়, প্রথম প্রমাণ, কওয়া নেই বলা নেই নবম সংসদে শেখ পরিবারের জন্য আজন্ম নিরাপত্তার আইন পাস। আইনটি দুরভিসন্ধিপূর্ণ মনে হওয়ায় এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যেকোনো সুস্থ মানুষেরই প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। দ্বিতীয় নমুনা, সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা বারবারই জাতিকে জোর করে গেলানোর চেষ্টা। ২০২১ সালের রজতজয়ন্তী এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্নগুলো অবশ্যই রজতজয়ন্তী বা উন্নয়ন কোনোটাই নয়, বরং আমাদের আশঙ্কা, আজন্ম মতার গন্ধ এখানে। বিষয়টি নিয়ে বিদেশেও প্রকাশ্যে লবি চলছে।
এই ধারাবাহিকতায় একটি দেশের শরীরের ওপর আগাছার মতো জড়িয়ে থাকা সরকার অতি সহজে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখল। প্রভাবশালী ক’টি দেশের সাথে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় সম্প্রসারণের নামে উচ্চাভিলাষী সমরাস্ত্র ক্রয় করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কত সহজে বৈধ করল। খালেদার বুদ্ধিদাতারা হাসিনার কূটনৈতিক দুর্গের ধারেকাছেও নন। অর্থাৎ অবাক হই না যখন দেখি ১৫৪ সিটে ভোটারবিহীন বিজয় কিংবা ৪-৫ পার্সেন্টকে ৪০-৫০ পার্সেন্ট বলে চালিয়ে দিয়েও পার পেয়েছে। ভোট ডাকাতি করেও দশম সংসদের মতো অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলল প্রচণ্ড বিভক্ত দেশটিতে। বরং অবাক হই যখন দেখি, সোকলড বুদ্ধিজীবীরা কত সহজে অবৈধ নির্বাচন মেনে নিয়ে বর্বর আফগানদের কাছে পর্যন্ত আমাদের মাথা হেঁট করে দিলো। তাদের দেশে গণতান্ত্রিক এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। দুই পই বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে। বালুর ট্রাক বা জলকামান রাজনীতির ঘটনা ঘটায়নি বর্বর আফগানরা। বরং হামলাজনিত যা ঘটেছে তা রুটিন এবং পুরনো। সুতরাং মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসিকে নিয়ে যা করল আওয়ামী লীগ, আফগানরা পর্যন্ত বড়ই লজ্জায় ফেলেছে চেতনাবাদীদেরকে। এর পরও কি বলবে আফগানরা বর্বর, আমরা নই! এমনকি পাকিস্তানেও শান্তিপূর্ণ মতা হস্তান্তর। সুতরাং এ কথা বলার সুযোগ হয়তো আর নেই।
নির্বাচন নিয়ে জালিয়াতির ভূস্বর্গ স্বৈরাচারদের দেশ আফ্রিকা। নির্বাচন মানেই গোলাগুলি, হত্যা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই। যারা দশম সংসদকে বৈধতা দিলো, আফ্রিকানদের মতোই বর্বর তারা, বাঙালি বলে দাবির অধিকার তাদের নেই। অর্থাৎ এই মুহূর্তে স্বচ্ছ ও নিরপে নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছুরই প্রয়োজন নেই। কিন্তু সরকার ডেসপারেট, এই কাজে ব্যবহার হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতার অজুহাত। ভাবসাব এমন, দেশটাকে সোনার চাদরেই মুড়িয়ে দেবে। ‘ধারাবাহিকতা’ শব্দটি প্রথম শুনলাম ২০০৯-এর শুরুতে। এই কাজে বেশ কিছু উদাহরণও ব্যবহার করেছেন এবং এই উদ্দেশ্যেই যে নবম সংসদে শেখ পরিবারের জন্য আজন্ম অগ্রিম নিরাপত্তা আইনটি পাস হয়নি, জোরগলায় বলতে পারবে কি? গুজব ছিল, খালেদা জিয়া নির্বাচনে গেলে জরুরি অবস্থা জারি হতো।
৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে উন্নয়নের বিলবোর্ডগুলো আজন্ম মতার আরেকটি প্রমাণ। ৫ জানুয়ারির গৃহদাহ ঠেকাতে উন্নয়নের পাটীগণিত ও বীজগণিতে ভরা বিলবোর্ড দিয়ে ঘিরে ফেলা ৫৬ হাজার বর্গমাইল শুধু দৃষ্টি দূষণই নয়, বরং প্রাগৈতিহাসিকের চেয়েও অধিক বালখিল্য। বিদেশীদের চোখে অবশ্যই হাস্যকর। আগে-পিছে না ভেবে সব করতে চায় সরকার, পারে খুব অল্পই। ফলে বীজগণিতের বিলবোর্ডের সাহায্য নিতে বাধ্য তারা। এসবই নির্বাচনকে অপ্রয়োজনীয় করার ধৃষ্টতা। একনায়কত্ববাদীদের কথা, সরকার এত ভালো করছে, নির্বাচনের দরকারটা কী? পাঁচ বছরের জন্য মতায় এসেছি, থাকব। নাগরিকদের এক দফা, সবার আগে বৈধ নির্বাচন চাই। অবৈধ বনাম বৈধ নির্বাচনের মধ্যে অবৈধ শব্দটি এ জন্য প্রযোজ্য, নির্বাচন শুধু ভোটারবিহীনই নয়, বরং ভোট জালিয়াতির বিষয়টিও ফ্যাক্টর। আমাদের আশঙ্কা, অবৈধ নির্বাচনটি আওয়ামী লীগের সুদূরপ্রসারী হিসাব-নিকাশের জন্য জরুরি ছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে যে কথা বারবার বলা হচ্ছে, স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন জরুরি। বাস্তবেও তাই। দশম সংসদ নির্বাচনে ভোট চুরি যাওয়ার ােভ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে, যা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসঙ্কেত। ঐতিহাসিকভাবে ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার ফলাফল কখনোই সুখকর হয়নি, সে ইতিহাসে এখন যাচ্ছি না। আবারো বলছিÑ যত ইচ্ছা নিন, কিন্তু দয়া করে নির্বাচনকে নেবেন না; কারণ সুযোগ পেলে যেকোনো মূল্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে মানুষ। গণতন্ত্রের বিকল্প যদি উন্নয়ন হয়, তাহলে হিটলার, সাদ্দাম হোসেন, ব্রিটিশ কিংবা ইয়াহিয়া তাড়ানোর প্রয়োজন কেন? উন্নয়ন অবশ্যই চাই, কিন্তু তার আগে চাই বৈধ নির্বাচন।
ভোট নিয়ে বিখ্যাত উক্তিÑ
১. ‘গণতন্ত্রে একজন ভোটারের প্রতি অবিচার হলে তা সকল মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’ Ñজন এফ কেনেডি।
২. ‘আমেরিকার ভোটারদেরকে একমাত্র ভোটাররা ছাড়া কেউই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।’ Ñ ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট।
লেখক: মিনা ফারাহ নিউ ইয়র্ক প্রবাসী
farahmina@gmail.com www.minafarah.com