সাংবাদিক, তাই চিকিৎসা হলো না
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’দিন বিনা চিকিৎসায় ভর্তি থাকার পর অবশেষে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয় পত্রিকার এক ফটোসাংবাদিক। ভুক্তভোগী গুলবার আলী জুয়েল রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক নতুন প্রভাতে কর্মরত। হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগের ১নং ওয়ার্ডের ইন্টার্নি চিকিৎসকরা এ হাসপাতালে কোন সাংবাদিকের চিকিৎসা হবে না বলে জানান। পরে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে আসেন জুয়েল। এ ঘটনায় সাংবাদিক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র মতে, গত ২রা ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হামলায় এক পা ভেঙে যায় ফটো সাংবাদিক জুয়েলের। সে সময় রামেক হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডে ভর্তি হলে তার পায়ের অপারেশন করে রড লাগিয়ে দেন চিকিৎসকরা। গত রোববার সেই ভাঙা পায়ের অপারেশন করে রড বের করতে রামেক হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সোমবার তার ওই অপারেশন করার কথা ছিল। তবে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের চাপের কারণে সিনিয়ার চিকিৎসকরা তার অপারেশন করেননি বলে দাবি করেন জুয়েল। ফটো সাংবাদিক জুয়েল সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি রোববার রামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। দু’দিন হাসপাতালে থাকার পর কোন চিকিৎসক তার দেখাশোনা করেননি। পরে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে অর্থপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বি কে দাম ওই ওয়ার্ডে রাউন্ড দেয়ার সময় সব রোগীর কাছে গেলেও তার কাছে আসেননি। ওয়ার্ড থেকে চলে যাওয়ার সময় ডা. বি কে দামকে ডেকে জুয়েল জানতে চান তার পায়ের রড খোলা হবে কিনা। এ সময় তিনি হবে বলে রক্ত ও ইসিজি পরীক্ষার জন্য লিখে দিয়ে জুনিয়ার চিকিৎসকদের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী দুপুর দেড়টার দিকে পরীক্ষা লিখে নিতে কাগজপত্র নিয়ে তার স্ত্রী অর্থপেডিক্স বিভাগের ১নং ওয়ার্ডের চিকিৎসক সোহেলের চেম্বারে গেলে সেখানে বসে থাকা কয়েকজন ইন্টার্নি চিকিৎসকরা তাকে জানিয়ে দেন এ হাসপাতালে কোন সাংবাদিকের চিকিৎসা হবে না। পরে বাধ্য হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে অর্থপেডিক্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বি কে দাম তার ওয়ার্ডের কোন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক জুয়েলকে হাসপাতাল ছাড়তে বলেননি বলে দাবি করেন। তবে অন্য ওয়ার্ডের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতাল ছাড়তে বলেছেন এমনটি শুনেছেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, অন্য ওয়ার্ডের রোগীদের অপারেশন করার জন্য সোমবার তাকে ওটিতে নেয়া হয়নি। তবে জুয়েল আবার ভর্তি হলে নিজে তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে, এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজশাহী সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি।
একই সঙ্গে এর প্রতিবাদসহ রামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের ওপর হামলকারী ইন্টার্নি চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার এবং সারা দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজশাহীতে আজ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। গতকাল সকালে রাজশাহী সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক শ. ম. সাজুর সভাপতিত্বে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২০শে এপ্রিল রামেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগে বাকবিত-ায় জড়ালে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের বেধড়ক মারপিট করে। খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহে গেলে দফায় দফায় সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ জন সাংবাদিকে আহত এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে ভাঙচুর চালান চিকিৎসকরা। আহতদের মধ্যে যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন তারেক মাহমুদ রাসেল ও চ্যানেল২৪-এর ক্যামেরাপারসন রায়হান ঢাকায় চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় সাত ইন্টার্নি চিকিৎসকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করে পৃথক দু’টি মামলা হয়।