‘গোপন সম্পর্ক হয়েছিল দু’জনের সম্মতিতে’ এত দিন পর মুখ খুললেন মনিকা

মনিকা লিউনস্কি। হোয়াইট হাউসের সাবেক ইন্টার্ন। তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বিপাকে পড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। অবৈধ যৌন সম্পর্ক গড়ার অভিযোগে তাকে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা রফার মাধ্যমে সে যাত্রায় রক্ষা পান। প্রথম দিকে মনিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। সেই মনিকা লিউনস্কি এতদিন চুপচাপ ছিলেন। এখন নতুন করে ওই সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন। বলেছেন অনেক না বলা কথা। তিনি লিখেছেন, বিল ক্লিনটন আমার কাছ থেকে ফায়দা লুটেছেন। নিজের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনে। আগামী সংখ্যায় তা প্রকাশ পাবে। তাতে তিনি লিখেছেন- আমি নিশ্চিত যে, বস (বিল ক্লিনটন) আমার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে। তবে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা দু’জনার সম্মতিতেই। এর পরে যে অবমাননা এলো তা হলো তার প্রতিষ্ঠা রক্ষা করার জন্য আমাকে হতে হয়েছে পরিসিথতির শিকার। সে ১৯৯৮ সালের কথা। চারদিকে অকস্মাৎ যেন বোমা ফাটলো। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম মনিকা লিউনস্কি ও বিল ক্লিনটনের মধ্যকার গোপন সম্পর্কের কথা। ওই সময় সব কথা ফাঁস করে দিতে মনিকাকে ১ কোটি ডলার দেয়ার টোপ ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ‘মনে করেননি এটা করা ঠিক হবে’। ফলে ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়ালে নিয়ে যান। মনিকার বয়স এখন ৪০ বছর। এতদিন ওই সম্পর্কের কথা গোপন রাখার পর তা আর ধরে রাখতে পারছেন না। তাই মুখ খুললেন ভ্যানিটি ফেয়ারের কাছে। তিনি লিখলেন, এখন সময় এসেছে সেই বেরেট (মাথার হ্যাট) ও নীল পোশাকটি পুড়িয়ে ফেলার। উল্লেখ্য, ওই নীল পোশাকে তাদের অভিসারের চিহ্ন ছিল যা তদন্তকালে ধরা পড়ে। তা নিয়ে ‘ক্লিনটন প্রশাসন, স্পেশাল প্রসিকিউটরের লোকজন, দু’পক্ষের রাজনৈতিক কর্মকর্তারা ও মিডিয়া আমাকে শিকার বানিয়ে ফেলে। মনিকা বলেছেন, ওই সময় তিনি বার বার আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই সে সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। আগামী ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বিল ক্লিনটনের স্ত্রী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। এ বিষয়ে মনিকা লিখেছেন, ‘এখন আমাকে ফের সতর্ক হতে হবে। তিনি (হিলারি) নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে আমি হয়ে উঠতে পারি একটি ইস্যু- এ নিয়ে আতঙ্কে আছি। তাই বলে কি আমি আমার জীবন থেকে আরও ৮ থেকে ১০টি বছর লুকিয়ে থাকবো?’ হিলারি ক্লিনটনের ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় সম্পর্কে মনিকা লিখেছেন, ‘প্রেসের অনুরোধ সত্ত্বেও আমি তখনও নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম’। ২০১২ সালের নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি নিজেকে মিডিয়া থেকে সরিয়ে রাখি। আমাকে একটি বই লিখতে কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সব বাতিল করে দিই’।

তবে এখন তিনি তাদের সেই সম্পর্কের বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন। সেই অনুভূতি থেকে নিজেকে পরিষ্কার করতে চান। মনিকা বলেন, ‘আমার ও প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের মধ্যে যা ঘটে গেছে তার জন্য আমি নিজে গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমাকে এ বিষয়টি আবার বলতে দিন। আমি নিজে গভীরভাবে অনুতপ্ত যা ঘটেছিল তার জন্য’।

ভ্যানিটি ফেয়ারে মনিকা দাবি করেছেন, বারবারা ওয়াল্টারের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার দেয়া ও বেশ কিছু মিডিয়ায় তার উপস্থিতি থাকলেও তিনি নিজের বিষয়ে ছিলেন নীরব। মনিকা লিখেছেন ‘এতটাই নীরব যে তা দেখে কিছু কিছু লোক মনে করতে থাকলো আমার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিল ক্লিনটন আমাকে অর্থ দিয়েছেন। আমি কেন কথা বলা থেকে বিরত থাকবো? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি সত্যের চেয়ে বড় কিছু নেই।’ ক্লিনটন-মনিকা যৌন সম্পর্কের কারণে সারাবিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন মনিকা লিউনস্কি। তারপর তাকে চাকরি দিতে চায় অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিজের লজ্জাজনক অতীতের কারণে তিনি তা-ও গ্রহণ করতে পারেন নি। ফলে নিজের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন তিনি। মনিকার সঙ্গে ক্লিনটনের ওই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ১৯৯৬ সালে। কিন্তু তা প্রকাশ পায় ১৯৯৮ সালে। কারণ, তখন তিনি এ কাহিনী শেয়ার করেছিলেন লিন্ডা ট্রিপ নামে এক বান্ধবীর সঙ্গে।
সেই বান্ধবী তাদের কথোপকথন রেকর্ড করেন। তা চলে যায় মিডিয়ার কাছে। তখন তিনি ভেঙে পড়েন। এ সময় তাকে শক্তি যুগিয়েছেন তার মা। এ বিষয়ে লিখেছেন- ‘তিনি আমাকে তার চোখের আড়ালে যেতে দিলেন না। তিনি ওই সময়টাতে প্রতি রাতে আমার বিছানার পাশে অবস্থান করতেন। কারণ, আমি তখন আত্মহত্যার মুডে ছিলাম।’