আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ : সুজন
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘গুম ও অপহরণ : নাগরিক উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, অপরাধীদের বিচার না হওয়ার কারণে দেশে আজ গুম, খুন ও অপহরণ বেড়ে গেছে। অথচ এসব বিষয় সরকার দীর্ঘদিন ধরেই অবজ্ঞা করে আসছে।
অনুষ্ঠানে পুলিশের সাবেক আইজি এএসএম শাহজাহান বলেন, যে সমাজে আইনের শাসন নেই সে সমাজে সমস্যার সমাধানও নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হলো আইনের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধাশীল হওয়া। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আস্থাশীল হওয়া। সরকারের কারণেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশে খুন, হত্যা, গুম ও অপহরণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন। রাজনীতিবিদদের প্রশ্রয় ছাড়া এ ধরনের ঘটনা কেউ ঘটাতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যের বিরুদ্ধেই যে এরকম অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তা নয়। অধিকাংশ সদস্যই ভালো কাজ করছেন। এ কারণে যারা এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আইন ভাঙছেন, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনা অন্য ঘটনার চেয়ে আলাদা, তাই সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, এ ঘটনা যদি অন্য ঘটনার সঙ্গে মেলাতে চান তাহলে ওই সমস্যার সমাধান হবে না। অপরাধী কার ছেলে কিংবা কার জামাই, সেটা বিবেচ্য নয়। এটি একটি দৃষ্টান্ত মনে করে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বের করতে হবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, যদি বের করা যায় তাহলে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে এটাও প্রমাণিত হবে। না হলে মানুষ মনে করবে সরকারে ইচ্ছার অভাব রয়েছে। জনগণ বর্তমান সরকারকে অকার্যকর মনে করবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান তার বক্তৃতায় বলেন, ‘দেশে এখন জাতীয় সংকট চলছে। এ সংকট মোকাবিলায় সুশীল সমাজকেই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু আমাদের সুশীল সমাজের ভূমিকা পর্যাপ্ত নয়।’
হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘গুম, খুন, অপহরণের প্রতিবাদে আমরা জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে একটি মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে অনেকেই উপস্থিত হননি। এটা প্রমাণ করে, আমরা ঐক্যবদ্ধ নই।’
আলোচনাকালে গত পাঁচ বছরের অপহরণের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অপহৃত হয়েছে ২৮২ জন। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৪৬ জন, ২০১১ সালে ৫৯ জন, ২০১২ সালে ৫৬ জন, ২০১৩ সালে ৬৮ জন এবং ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৩ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।