জামালপুরের গুঠাইল এলাকা যমুনা গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: যমুনায় চৈত্র মাসেই পানি বাড়তে শুরু করেছে। সেইসাথে ইসলামপুরের কুলকান্দি ও গুঠাইল এলাকায় যমুনার বামতীরে ভয়াবহ নদীভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে কুলকান্দি মাখন বাজার, গুঠাইল হাট-বাজার, গুঠাইল হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও গুঠাইল সিনিয়র মাদ্রাসাসহ আশপাশের ২ সহস্রাধিক বসত-ভিটাসহ বহু ফসলি জমি যমুনাগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানাগেছে, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলা সমূহের পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যমুনার বামতীরে দুই যুগ ধরে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ইসলামপুরের উলিয়া ও গুঠাইল এলাকার পশ্চিমে প্রায় ১৩ কিলোমিটার প্রশস্তের যমুনায় নদীর পর চর আর চরের পর অসংখ্য ছোট-বড় নদীর সৃষ্টি হয়েছে। বিগত দুই যুগে যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ওই ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে এখন যমুনার বুকে জেগে উঠা নতুন চরে বসতি গেঁড়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। এছাড়াও নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ইসলামপুরের পাথর্শী, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, বেলগাছা ও চিনাডুলি ইউনিয়ন সমূহের আরও অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। তাদের বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঠসহ ওইসব ইউনিয়নের ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও বহু রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙ্গা ওই মানুষগুলোও ভুমিহীন কৃষকে পরিনত হয়ে যমুনার চরে অথবা বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও রেল লাইনের ধারে খুপড়ি বেঁধে জীবন যাপন করছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরের বস্তিগুলোতে। ইতোমধ্যে যমুনার বামতীর নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ৩কিলোমিটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। বিগত বছর গুলোর ধারাবাহিকতায় নদীভাঙ্গনের শিকার এলাকাবাসীর ধারনা, ইসলামপুরের কুলকান্দি, বেলগাছা, গুঠাইল, পশ্চিম বামনা, শিংভাঙ্গ, চিনাডুলি ও উলিয়া অঞ্চলে আগামী বর্ষা মৌসুমে যমুনার বামতীরে তীব্র নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের দাবী এবছর শুষ্ক মৌসুমেই ইসলামপুরের কুলকান্দি, গুঠাইল ও চিনাডুলি এলাকা রক্ষার্থে যমুনার বামতীর সংরক্ষনের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় আগামী বন্যায় ইসলামপুরের কুলকান্দি, গুঠাইল ও চিনাডুলিসহ আশপাশের ২সহস্রাধিক বসত-ভিটা যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম জানান, বিগত বন্যা মৌসুমের ধারাবাহিকতায় আগামী বন্যায় ইসলামপুরের গুঠাইল হার্ড পয়েন্টসহ চিনাডুলি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ ও বেলগাছা এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই এবছর শুষ্ক মৌসুমে যমুনার বামতীর সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় গুঠাইল এলাকায় বালির বস্তা ডাম্পিং ও কংক্রিটের বক ফেলে নদীভাঙ্গন ঠেকানো জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় আগামী বর্ষা মৌসুমে ইসলামপুরের শতবছরের ঐতিহ্যবাহী গুঠাইল হাট-বাজার, গুঠাইল হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও গুঠাইল সিনিয়র মাদ্রাসা সহ আশপাশের ২সহস্রাধিক বসত-ভিটা ও বহু ফসলি জমি সম্পূর্ণরুপে যমুনা গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
ইসলামপুরের যমুনা নদীভাঙ্গন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে আরও জানাগেছে, আজ থেকে প্রায় দুই যুগ ধরে যমুনার বামতীরের অব্যাহত ভাঙ্গন ঠেকাতে ও যমুনার বামতীর সংরক্ষণে প্রায় ১৫ বছর ধরে নদীভাঙ্গন এলাকায় বালি ভর্তি বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে এবং জিও টেক্সটাইল বিছিয়ে তার উপর সিসি বক সেটিং করা হচ্ছে। যমুনায় ওই বালির বস্তা ডাম্পিং ও সিসি বক সেটিং সরকারের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে দাবী করেছেন যমুনা নদী ভাঙ্গনের শিকার শতশত অসহায় মানুষ।
সরেজমিন পরিদর্শন কালে যমুনা নদী ভাঙ্গনের শিকার ইসলামপুরের কুলকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জুবাইদুর রহমান দুলাল বিএসসি আক্ষেপ করে বলেন, যমুনায় বস্তা ফেলে কি হইবো ? নদী ভাঙ্গনতো থামেনা। আগের বছর বস্তা ফেললে পরের বছরই তার কোন চিহ্ন পর্যন্ত থাকেনা। প্রায় ১৫বছর ধরে যমুনার বামতীরে প্রায় প্রতি বছরই বালির বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। অথচ নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে বস্তা ডাম্পিং কোন কাজেই আসছেনা। রাক্ষুসী যমুনার পেটে সরকারের টাকায় বালির বস্তা ফেলে কেবল অফিসার আর ঠিকাদারদের পেট ভরানো হচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায়না। তার দাবী নদী ভাঙ্গন রোধে বস্তা ডাম্পিং ও সিসি বক সেটিং এর পাশাপাশি যমুনার মূল স্রোতের লাইনে হঠাৎ জেগে উঠা নতুন চর অপসারণ ও নদীর গভীরতা ঠিক রাখতে নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে।
তিনি আরও জানান, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে ১৯৯৫ সনে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার বামতীরে ইসলামপুরের কুলকান্দি পয়েন্টে কুলকান্দি রিভেটমেন্ট টেস্ট স্ট্রাকচার নির্মান করা হয়। এর পরের বছর ইসলামপুরের গুঠাইল বাজার এলাকায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হার্ড পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও ইসলামপুরের উলিয়া বাজার এলাায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করা। সবশেষে মহাজোট সরকার যমুনার বামতীর সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনায় বিগত তিন বছর ধরে বালির বস্তা ডাম্পিং করছে। এ ডাম্পিং কার্যক্রম নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে শুধু ব্যর্থই হয়নি উল্টো বিগত দিনে নির্মাণ করা ক্রক্রিটের বাঁধগুলোও নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে পারেনি। মূলতঃ ইসলামপুরে যমুনা নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বালির বস্তা ডাম্পিং কার্যক্রমসহ সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গনের শিকার অসহায় কৃষক সবজল চৌধুরী, আজাহার মন্ডল ও মোকারম হোসেনসহ ইসলামপুরের কুলকান্দি, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, বেলগাছা ও চিনাডুলি ইউনিয়নের শতশত কৃষকের অভিযোগ, যমুনায় অপরিকল্পিতভাবে বালির বস্তা ডাম্পিং করার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছরই সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করলেও নদীভাঙ্গন রোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী জানান, যমুনার বামতীর সংরক্ষণের জন্য ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান সরকারের যমুনা তীর সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় এবছর দেওয়ানগঞ্জের ফুটানী বাজার, ইসলামপুরের পশ্চিম বামনা ও শিংভাঙ্গা এলাকায় ৯৮ কোটি টাকা ব্যায়ে যমুনার বামতীরে বালির বস্তা ও বক ডাম্পিং চলছে। যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধে বালির বস্তা ডাম্পিং পাউবো’র ব্যর্থ প্রচেষ্টা নয়। তবে ডাম্পিং পয়েন্টের উজানে কোন প্রটেকশন না থাকায় ইসলামপুরের কুলকান্দি, গুঠাইল ও কদমতলী এলাকায় ডাম্পিং করা বালির বস্তা বিগত বন্যায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও ইসলামপুরের গুঠাইল অঞ্চলে যমুনার ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।