ফুটবল দলের ভরসা যখন নারী
ব্রাজিলে সব ছেলেই নাকি বড় হয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর সব মেয়েই চায় সুন্দরী-লাস্যময়ী হয়ে উঠতে। পাদপ্রদীপের আলোয় আসার সৌভাগ্য অবশ্য সবার হয় না। কিন্তু প্রতিবছরই স্বপ্নপূরণের সুযোগ থাকে অ্যামাজনের মানাউস শহরের অধিবাসীদের সামনে। ফুটবল আর গ্ল্যামারের দারুণ সমন্বয়ে এখানে অনুষ্ঠিত হয় অদ্ভুত এক ফুটবল লিগ। মানাউসবাসীর কাছে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল প্রতিযোগিতা।
সত্যিই হয়তো তাই। ‘পেলেডাও’ নামের এই ফুটবল লিগে প্রতিবছর অংশ নেয় ৭০০টিরও বেশি দল। এতগুলো দল নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতার কথা শোনা যায় না। তবে শুধু আকার-আকৃতির দিক থেকেই না। মানাউসের এই ফুটবল লিগ নিয়মাবলির দিক থেকেও অনন্য। প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর জন্য শুধু ফুটবলার থাকলেই হবে না। প্রতিটি দলেই থাকতে হবে একজন নারী, যাঁরা অংশ নেবেন সুন্দরী প্রতিযোগিতায়। ফুটবল আর গ্ল্যামারের সমন্বয়টা এখানেই ঘটে। সুন্দরী প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব নিয়ে মানাউসের স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে পরিচালিত হয় টিভি শো। লাস্যময়ী হিসেবে তারকাখ্যাতি পাওয়ার সুযোগ পান মানাউসের নারীরা।
ফুটবলারদেরও নজর থাকে সুন্দরী প্রতিযোগিতার দিকে। কারণ সঙ্গিনীটির সাফল্যের ওপর পুরো দলেরই ভাগ্য নির্ভর করে। লিগ থেকে ছিটকে যাওয়া কোনো দলও আবার লড়াইয়ে ফিরতে পারে সুন্দরী প্রতিযোগিতার সুবাদে। দলের নারীটি যদি সুন্দরী প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে যেতে পারেন, তাহলে আবারও শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে ফেরার সুযোগ থাকে ফুটবলারদের সামনে। ১৯৮৮ সালে ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছিল। শুরুতেই বাদ পড়ে যাওয়া একটা দল শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতেছিল সুন্দরী প্রতিযোগিতার সাফল্যে।
এতটুকু পড়ে মনে হতে পারে যে মানাউসের ব্যতিক্রমী এই ফুটবল লিগটি শুধু বিনোদনই জোগায়। কিন্তু এখানে খেলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পা রাখার নজিরও আছে। ২০০০ সালে ব্রাজিলের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ফ্রাঙ্কার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল এই অপেশাদার লিগ দিয়েই। ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি গোলও করেছেন এই ‘পেলেডাও’ তারকা। তবে পেশাদারি ক্যারিয়ার শুরু করার পর আর পেলেডাওয়ে খেলতে পারেননি ফ্রাঙ্কা। কারণ মানাউসের এ লিগটি শুধু অপেশাদার ফুটবলারদের জন্য। কোনো পেশাদার ফুটবলার এখানে অংশ নিতে পারেন না।
সাধারণত এলাকাভিত্তিক অনেক দল অংশ নেয় এই লিগে। বড় কোনো পরিবারের সদস্যরা মিলেও গঠন করে ফেলেন ফুটবল দল। অনেক সময় কোনো অফিসের সহকর্মীরা মিলেও একটি দল বানিয়ে ফেলেন। সফল দলের খেলোয়াড়েরা হয়ে যান মানাউস শহরের তারকা।
১৯৭৩ সালে শুরুর পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানাউসবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করে নিয়েছে ব্যতিক্রমী এই ফুটবল লিগ। ২০১২ সালে ফাইনাল ম্যাচটি দেখার জন্য স্টেডিয়ামে ভিড় জমিয়েছিলেন ৪২ হাজার দর্শক। ২০০৫ সাল থেকে অ্যামাজনের আদিবাসীরাও অংশ নেন পেলেডাওয়ে। অনেক সময়ই খালি পায়ে, আদিম পোশাক পরে মাঠে নেমে যান বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কহীন এই মানুষগুলো।