শীতলক্ষ্যা মড়ার ভাগাড়?
নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর আবার আলোচনায় উঠে এসেছে শীতলক্ষ্যা নদী। অপহরণের তিন দিন পর গত ৩০ এপ্রিল ওই সাতটি লাশ উদ্ধার করা হয়। কাছাকাছি সময়ে পাওয়া গেছে আরও কয়েকটি লাশ।
শীতলক্ষ্যা কি তবে হয়ে উঠছে মৃত মানুষের ভাগাড়?—প্রশ্ন ওই এলাকার সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সদর আর বন্দর থানার মাঝে শীতলক্ষ্যা নদী। এই নদী দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছয় কিলোমিটারের মতো ভাটির দিকে গেলেই তিন নদীর মোহনা। মেঘনা, শীতলক্ষ্যা আর বুড়িগঙ্গা মিলেছে এখানে। এখানেই দেড় কিলোমিটারের মধ্যে শীতলক্ষ্যা অংশে কচুরিপানার মধ্যে ভাসমান অবস্থায় সাতটি লাশ পাওয়া যায়।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা থেকে এই মোহনার দূরত্ব চার কিলোমিটারের মতো। থানা থেকে প্রথমে কংক্রিটের ঢালাই, তারপর ইট বিছানো রাস্তা। এরপর কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর গুচ্ছগ্রাম চরের খেতের ওপর দিয়ে কিছুটা গেলেই খেতের পাশে তিন নদীর মোহনা। নদীর ওপারে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৬ মার্চ মেধাবী কিশোর তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী নিখোঁজ হয়। এর দুদিন পর ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার পোতাশ্রয় এলাকায়।
২০১২ সালের ১৭ জুলাই নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর শীতলক্ষ্যার ওই (বন্দর থানা) এলাকাতেই মেলে দিদারুল আলম ওরফে চঞ্চলের লাশ। বন্দর থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। ২০১১ সালের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াত্ আইভীর পক্ষে প্রচারণার কাজ করেছিলেন দিদারুল।
একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পরে শহরের টানবাজারের রং সুতা ব্যবসায়ী প্রাণ গোবিন্দ সাহা ওরফে ভুলুর লাশ মেলে শীতলক্ষ্যা নদীতে।
এর আগে ২০১১ সালের ১১ মে বাসা থেকে ডেকে নেওয়ার দুদিন পর ব্যবসায়ী আশিকুল ইসলামেরও লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। আশিকুলকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকণ্ডের কোনো কিনারা হয়নি।
যেখানে সাত লাশ মিলেছে, সেই শান্তিনগর গ্রামের স্থানীয় তরুণ মো. মাসুমের দাবি, গত ১০ বছরে তিনি ওই নদীতে অন্তত অর্ধশত লাশ দেখেছেন।
স্থানীয় আবদুল বারেক মোল্লা জানালেন, মাঝে মাঝে নদীতে লাশের গন্ধ পাওয়া যায়। কখনো কখনো ঝামেলা এড়াতে যার জমিসংলগ্ন নদীতে লাশ মেলে, তিনি লগি দিয়ে লাশ সরিয়ে দেন।
এই নদীগুলো থেকে আরও ভাটির দিকে গেলে ধলেশ্বরী নদী। ২০১১ ও ২০১২ সালে এই এলাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী থেকে ৩০টির মতো লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই লাশের বেশির ভাগেরই হাত-পা বাঁধা ছিল। কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন মুন্সিগঞ্জের পুলিশ জানিয়েছিল, ওই লাশগুলোর কোনোটিই মুন্সিগঞ্জের না। ঢাকার কেরানীগঞ্জ বা নারায়ণগঞ্জের কোনো এলাকা থেকে হত্যা করে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই লাশগুলোর বেশির ভাগের শরীরে সিমেন্টের বস্তা বাঁধা ছিল।