আজকেই না বলুন রঙ ফর্সা করার ক্রিমকে! কিন্তু কেন?

2013_08_20_32_2_bসারা পৃথিবীটাই চলছে ব্যবসার উপরে। নতুন কোনো ধারণা পেলেই ব্যবসায়ীরা জাঁকিয়ে শুরু করে দেয় তাদের ব্যবসা। কিন্তু পণ্যটির গুণাগুণ সম্পর্কে এতটুকুও চিন্তা করেন না, তারা চিন্তা করেন না পণ্যটি যদি মানুষের উপকারের পরিবর্তে করতে পারে ব্যাপক ক্ষতি। এমনই একটি পণ্য হল ফেয়ারনেস ক্রিমগুলো। এগুলো এমনই ক্ষতিকর কিছু কেমিক্যাল/ ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি যা মানুষের চেহারাকে হয়তো কিছুক্ষণের জন্য ফর্সা করে দিচ্ছে কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের চেহারায় আনছে কিছু বিকৃতির ছাপ।

যারা কালো গড়নের নারী তারা হয়ত অনেক বঞ্চনার শিকার হন। তাদের গায়ের রং নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিয়ে নিয়েও ঝামেলা তৈরি হয়। আবার দেখা যায় তারাও মানুষ হিসেবে প্রাকৃতিক নিয়মে হয়ত কাউকে ভালোবেসে ফেললে তার গায়ের রং তার কাছ থেকে পছন্দের মানুষটিকে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। এসব অনেক বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতেই এরা বেছে নেন দ্রুত রং ফর্সাকারী এই ক্রিমগুলোকে। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।

ভারতের গবেষণা সংস্থা গবেষণা সংস্থা এসিনিয়েলসেন এর মতে শুধু ভারতেই ২০১০ সালে এই বাজারের আর্থিক মূল্যমান ছিল ৪৩২ মিলিয়ন ডলার এবং প্রতি বছর ১৮% প্রবৃদ্ধি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গত বছর দেশটিতে ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করা হয়েছে ২৩৩ টন।

সম্ভবত ব্রিটিশরা উপমহাদেশে শাসন শুরু করবার পর থেকেই এই ধারণা জন্মাতে শুরু করে যে, গায়ের রং ফর্সা মানেই সুন্দর। অবশ্য এরও আগে বর্ণপ্রথার সুবাদে এই ধারণা জন্মায় যে ‘ব্রাহ্মণরা শুদ্ধ বিধায় সাদা এবং দলিত তথা নিম্ন বর্ণের লোকজন অশুদ্ধ বিধায় কালো’।

ধীরে ধীরে ফর্সা হওয়ার ধারণা এত ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে যে এশিয়া মহাদেশ কিংবা আরেকটু স্পষ্ট করে বললে ভারতীয় উপমহাদেশ ফেয়ারনেস ক্রিম কোম্পানিগুলোর সবচাইতে বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। উপমহাদেশের নামজাদা সব অভিনেতা-অভিনেত্রীই ফেয়ারনেস ক্রিম কোম্পানিগুলোর মডেল হয়েছেন,যার ফলে এইসব ফেয়ারনেস ক্রিম নারীসমাজের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়। ফেয়ারনেস ক্রিম শুধু নারীতেই থেমে থাকেনি বরং এখন পুরুষের জন্যও ফেয়ারনেস ক্রিম পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বেশ জনপ্রিয় একজন ক্রিকেটার এই মিডিয়া ক্যাম্পেইনে আছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ রং ফর্সাকারী পণ্যে মারকিউরাস ক্লোরাইডের মতো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সম্প্রতি ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) পলিউশন মনিটরিং ল্যাব-এ পরীক্ষা করা সবকটি ফেয়ারনেস ক্রিমেই পারদ পাওয়া গিয়েছে যা পরিমাণের দিক থেকে ৪৪ শতাংশেরও বেশি। বাজারে প্রথম সারির মোট ১৪টি ফেয়ারনেস ক্রিমের উপর এই পরীক্ষা চালানো হয়। যদিও কসমেটিক্সে পারদের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে অনৈতিক ও বেআইনি।

প্রাথমিকভাবে এইসব ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহারের ফলে সাময়িকভাবে ত্বকের রং কিছুটা ফর্সা হলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি মোটামুটি নিশ্চিত। ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এই সকল রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারকারীরা ভাবতে পারেন এই ক্রিম ব্যবহারের ফলে তাদের ত্বকের রঙে পরিবর্তন এসেছে। আগের চেয়ে একটু ফর্সা দেখা যাচ্ছে। আসলে তাদের ফর্সা ,নয় ফ্যাকাসে দেখা যাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রায় সব ফর্সা হওয়ার ক্রিমেই মেশানো থাকে পারদ। যার থেকে ত্বকের অ্যালার্জি, র‌্যাশ, এমনকি প্রাণঘাতী ক্যান্সারও হতে পারে। অধিকাংশ রঙ ফর্সাকারী পণ্যে মারকিউরাস ক্লোরাইডের মতো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মারকিউরাস ক্লোরাইড মূলত ব্লিচের কাজ করে, আর এটাই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ ধরনের ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হয়ে যায় ও টানটান ভাব হারায়। এতে ব্রণও সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ফেয়ারনেস ক্রিম ত্বককে ফটোসেনসেটিভ বা আলোক সংবেদনশীল করে তোলে। তাই এ ধরনের ত্বকে সূর্যের রশ্মি তুলনামূলক বেশি প্রভাব ফেলে এবং গুটি ও চুলকানি তৈরি হয়। এছাড়া অনেক সংবেদনশীল ত্বকে অয়েল প্যাক, ফেশিয়াল কিংবা ম্যাসাজ করলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তবে জাপান ও ইউরোপে বর্তমানে বেশ কিছু কার্যকরী ক্রিম পাওয়া যাচ্ছে, এগুলোকে আসলে ক্রিম না বললে উচ্চমূল্যের ওষুধ বলাই ভালো, যা মেলানিনকে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই প্রভাবিত করতে পারে। অবশ্য এসব ব্যবহারের আগে ডাক্তারের যথাযথ নির্দেশনা প্রয়োজন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend