স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মুনিম হত্যা : যুবকের টাকা লেনদেনের জেরে হত্যা
বহুধাপ বিপণন প্রতিষ্ঠান যুবকের টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কলাবাগান থানা শাখার সভাপতি শেখ মুনিম ফয়েজকে (৪০) হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিবি কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন কাজী সিরাজুল আলম, শাকিল খান, জাহিদ হাসান, নবীন হোসেন, রফিকুল ইসলাম ওরফে ফরিদ, মোস্তফা ও ইমরান হোসেন। গত বুধবার থেকে আজ ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ৫ এপ্রিল কলাবাগানের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন মুনিম। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ৬ এপ্রিল গাজীপুর চৌরাস্তার বর্ষা সিনেমা হলসংলগ্ন মহাসড়কের পাশ থেকে তাঁর লাশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে উদ্ধার করা হয়। পরদিন স্বজনেরা গাজীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মুনিমের লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবির উপকমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নেমে ডিবি জানতে পারে, এ হত্যায় সাতজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাঁদের গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, যুবকের টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।
কৃষ্ণপদ রায় জানান, নিহত মুনিম যুবকের একজন পরিচালক ছিলেন। এ সূত্রে তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার কাজী সিরাজুল ও এক নারীসহ কয়েকজনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। কাজী সিরাজুল এবং ওই নারী যুবকে মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি করেছিলেন। এ ছাড়া যুবকে অর্থ লগ্নি করা অনেকের টাকা আদায়ের জন্যও কাজ করছিলেন তাঁরা। আর তাঁদের হয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন নিহত মুনিমও। কিন্তু একপর্যায়ে সিরাজুলদের সন্দেহ হয়, মুনিম আর তাঁদের হয়ে কাজ করছেন না। তখন তাঁকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবির পরিকল্পনা করেন সিরাজুল এবং ওই নারী।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ এপ্রিল ওই নারী ফোন করে তাঁর রাজধানীর রায়েরবাজারের বাসায় মুনিমকে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত থাকা সিরাজুলসহ কয়েকজন তাঁকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে ওই বাসা থেকে মুনিমকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রেপ্তার নবীনের কামরাঙ্গীর চরের বাসায়। সেখানে মুনিমের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে চেতনানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। সেখানে মারা যান মুনিম। মুনিমের লাশ একটি প্রাইভেটকারে করে ৬ এপ্রিল ভোরের দিকে রওনা হন হত্যাকারীরা। কিন্তু মোহাম্মদপুরে এলে চালক রফিকুল আর বেশি দূর যেতে অস্বীকৃতি জানান। তখন রফিকুলের মাধ্যমে ভালুকা পর্যন্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়। ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালক গ্রেপ্তার মোস্তফা ও সহযোগী ইমরান। মুনিমের লাশ নিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তায় বর্ষা সিনেমা হলের পাশে পৌঁছলে সিরাজুলেরা আত্মীয়ের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে একটি ভ্যান ভাড়া করেন। লাশ ভ্যানে উঠিয়ে দিয়ে কৌশলে সটকে পড়েন তাঁরা। ভয়ে ওই ভ্যানগাড়ির চালক লাশ মহাসড়কের পাশে ফেলে দেন।
ব্রিফিং শেষে তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান তত্ত্বাবধানকারী ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, সম্প্রতি ধানমন্ডিতে যুবকের মালিকানাধীন একটি বাড়ি বিক্রি হয়। হত্যায় জড়িতদের ধারণা ছিল, মুনিম ওই টাকা তাঁদের দিচ্ছেন না। মূলত এ কারণে তাঁকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত মারধরের কারণে মুনিম মারা গেলে তাঁদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়।
এডিসি বলেন, হত্যায় জড়িত ওই নারী পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁর নাম বলা যাচ্ছে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন নিহত মুনিমের স্ত্রী নাহিদ ফারজানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ সালে মুনিম যুবকের পরিচালক পদে যোগ দেন। তখন থেকে যুবকের জন্য বিভিন্ন জায়গা জমি নিবন্ধনের কাজ করতেন তিনি। ‘যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে তাদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’