প্যানেল মেয়র তুহিনকে অপহরণ করেছে র্যাব, অভিযোগ স্ত্রীর
সালমা আক্তারের দাবি, শুরু থেকে তিনি অপহরণের সঙ্গে র্যাবের জড়িত থাকার ব্যাপারে অভিযোগ করলেও পুলিশ বিষয়টি আমলে নেয়নি। সালমার বক্তব্যের রেকর্ড প্রথম আলোর কাছে রয়েছে। অপহরণের ১৫ মাসেও মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও তুহিনের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৩ সালের ৭ মার্চ দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাম ভবনে যশোর-১ আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিনের ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়ার পর তারিকুল নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর তুহিনের চাচাতো ভাই সুমন মাহমুদ বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা করেন। তিন মাস পর ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি আট মাস ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের অধীনে ছিল। বর্তমানে তা ডিবির মানবপাচার প্রতিরোধ টিমের অধীনে রয়েছে।
অপহূত তুহিনের স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের ধারণা, র্যাবের লোকজন তুহিনের অপহরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’ র্যাবকে সন্দেহ করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অপহরণের চার দিন আগে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম ওরফে লিটনের লোকজনের সঙ্গে তুহিনের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় বেনাপোল শহরে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। এ ঘটনার পর ৩ মার্চ রাত একটার দিকে র্যাবের লোকজন বাড়িতে এসে তুহিনকে খোঁজ করেন। এ সময় তাঁরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। হুমকি দিয়ে বলেন, তুই যেখানেই থাকিস, তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।’
সালমা বলেন, এর এক দিন পর ৫ মার্চ রাত একটার দিকে আবার র্যাবের সদস্যরা বাড়িতে আসেন। তাঁরা গেটের তালা কাটার চেষ্টা করেন। তুহিন বাড়িতে নেই জানালে তাঁরা চলে যান।
সালমা আরও জানান, যেদিন তুহিন অপহূত হন, সেদিন বিএনপি-জামায়াতের কড়া হরতাল ছিল। হরতালের মধ্যে সাধারণ কেউ গাড়ি নিয়ে রাজধানী থেকে অপহরণ করা অনেকটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল।
সালমা অভিযোগ করেন, নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পরে তুহিনের মুঠোফোন থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে। ফোনে এক ব্যক্তি তাঁকে জানান, তুহিন তাঁদের কাছে আছেন। ১০ লাখ টাকা দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পাঁচ লাখ টাকা দিতে রাজি হন তিনি (সালমা)। সেই টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। দুই দিন পর হঠাত্ তুহিনের মুঠোফোন থেকে ফোন করে অপহরণকারীরা আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। অনেক দেন-দরবার করে আরও তিন লাখ টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু তুহিনকে ফেরত দেওয়া হয়নি। তাঁর ফোন নম্বরটিও আর খোলা পাওয়া যায়নি।
ডিবির ঢাকা কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও তেজগাঁও জোনাল টিমের সুপারভাইজার আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপহরণের আগে দুই দিন র্যাব সদস্যরা তুহিনের বাড়িতে গিয়েছিল, এটি আমরা জানি। তবে অপহরণের সঙ্গে র্যাব জড়িত থাকতে পারে, এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে তেমন জোরালো অভিযোগ করা হয়নি।’ মামলার অগ্রগতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে চার-পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। এখন কে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে আছেন তা আমার জানা নেই।’
আবুল কাসেম জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগের রাতে যাঁরা ন্যাম ফ্ল্যাটে তুহিনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তাঁদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। অপহরণকারীরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাঁর স্ত্রী সালমা খাতুনের কাছ থেকে মুক্তিপণের আট লাখ টাকা নিয়েছে বলে জানা গেছে। যেসব নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ নেওয়া হয়েছে, মোবাইল সেবাদানকারী কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই সব নম্বরের গ্রাহকের কোনো হদিস মেলেনি। এ কারণে তদন্তের অগ্রগতি হয়নি।
এক সময় তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপহরণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকতে পারেন, এমন সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। বিষয়টির গভীরে গেলে “কেঁচো খুঁড়তে কেউটে” বের হতে পারে।’
অপহূত তুহিনের স্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব-৬-এর কমান্ডিং অফিসার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপহরণ হলেই র্যাবের ওপর দোষ চাপানোর একটা প্রবণতা এখন দেখা যাচ্ছে। তার পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’