নতুন কুটুমের মায়ের যত্ন
প্রসবপূর্ব সেবাঃ
একজন নারী যখন গর্ভধারন করেন তখন তার দেহে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে৷ এ সময় অনাগত শিশু ও মায়ের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হয়৷ গর্ভাবস্থায় তাই প্রতিটি নারীকে দেয়া হোক যথাযথ সুবিধা, যত্ন ,মানসিক প্রশান্তি ,মিষ্ট আচরন । একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান জণ্ম দেওয়া পর্যন্ত কী কী বিশেষ সেবা প্রযোজন সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
কখনমা হবেন
বিয়ের পর স্বাভাবিক নিয়মেই সবাই মা হতে চান৷ তবে সবার মনে রাখতে হবে একজন সুস্থ মা-ই জণ্ম দিতে পারেন একটি সুস্থ সুন্দর শিশু৷ শিশু সবার কাছেই অনেক আশা আকাঙ্ক্ষার ধন৷ সেই আশা যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য বাচ্চা নেওয়ার পূর্বে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত৷
গর্ভধারণের পূর্বে যে বিষয় বিবেচনা কার উচিত
* গর্ভধারণে ইচ্ছুক মহিলার বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হওয়া উচিত৷
* বর্তমানে মহিলার কয়টি শিশু আছে৷ অধিক বাচ্চার মাকে পরিবার পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ করুন৷
* ছোট বাচ্চার বয়স যেন কমপক্ষে ২ বছরের বেশি হয়৷
* পূর্বের গর্ভকালীন সময়ের ইতিহাস৷
* পূর্বের প্রসবকালীন সময়ের বিস্তারিত ইতিহাস (বিশেষ করে কোনও জটিলতা হয়ে থাকলে)
* পূর্বে গর্ভপাতের কোনও ঘটনা আছে কিনা
* পূর্বে মৃত বাচ্চা প্রসব হয়েছিল কিনা
* পূর্বে জমজ বাচ্চা প্রসব হয়েছিল কিনা
* পূর্বে অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা জণ্ম হয়েছিল কিনা
* আগের বাচ্চা জণ্মের সময় ওজন কত ছিল
* গর্ভধারণে ইচ্ছুক মহিলার শারীরিক উচ্চতা ও ওজন
* তার শারীরিক কোনও অক্ষমতা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে
* তার দীর্ঘস্থায়ী কোনও রোগ আছে কিনা (ডায়াবেটিস, যক্ষা, ম্যালেরিয়া, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, জটিল ধরনের জন্ডিস ইতাদি)
* তার রক্তের গ্রুপ, রক্তশূন্যতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন৷
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ও পরীক্ষা
উর্বর সময়ে কোনও সক্ষম মহিলার ডিম্বাণু এবং কোনও সক্ষম পুরুষের শুক্রাণু মিলিত হলে ভ্রূণের সঞ্চার হয় অর্থাত্ মহিলা গর্ভবতী হয়৷ ভ্রূণ জরায়ুতে বড় হতে থাকে, এই অবস্থাকে গর্ভাবস্থা বলা হয়৷ একটি সুস্থ বাচ্চা জণ্ম দেয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলাকে বিভিন্ন ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়৷ গর্ভধারণের সময় শরীরের অনেক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়৷
গর্ভাবস্থার লক্ষণ
* মাসিক স্রাব বন্ধ হওয়া
* বমি বা বমি বমি ভাব
* ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগ
* স্তনের পরিবর্তন
* জরায়ুর পরিবর্তন
* তলপেটে ও মুখে কালো দাগ দেখা যায়, তল পেটের ত্বক টান ধরেল পেটের ত্বকে সাদা দাগ দেখা যায়
* শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়
* গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়া (৪ মাস পর)৷
* গর্ভস্থ শিশুর হৃদস্পন্দন (৫ মাস পর)৷
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা * নিয়মিত তারিখে মাসিক না হবার আরও ২ সপ্তাহ পর প্রস্রাব পরীক্ষা করে গর্ভাবস্থা বোঝা যায়৷
* যে সব মহিলার মাসিক অনিয়মিত বা অন্য কোনও সমস্যা থাকে তাদের আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় (নিয়মিত তারিখে মাসিক না হবার কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ পর)৷
গর্ভাবস্থায় যে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেনঃ
পরিশ্রমঃ
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা কতোটা পরিশ্রম করবেন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়৷ সাধারণভাবে বলা যায়, মা গর্ভাবস্থায় তার স্বাভাবিক সংসারের সব কাজই করবেন৷ তবে প্রথম তিন মাস এবং শেষের দু-এক মাস খুব ভারী বা পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো৷ যেমন- কাপড় কঁাচা, ভারী জিনিস তোলা, পানি আনা, ধান ভানা ইত্যাদি না করা৷ গর্ভাবস্থায় সিঁড়িতে ওঠা-নামার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত৷
বিশ্রামঃ
গর্ভবতী মায়ের যেন ভালো ঘুম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ গর্ভবতীকে দৈনিক নয় থেকে দশ ঘন ঘণ্টা ঘুমোতে হবে৷ দিনে দুঘণ্টা এবং রাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে৷ যদি কারো ঘুমের অসুবিধা থাকে, তা হলে তাকে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে, গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম নিতে হবে৷ দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে অথবা বসে (৪/৫ ঘণ্টার বেশি) কাজ করা উচিত নয়৷
খাদ্যঃ
স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে একটু বেশি (প্রতিবারে অন্তত স্বাভাবিকের চেয়ে ১ মুঠো খাবার বেশি) খাওয়া উচিত৷ গর্ভবতীর পুষ্টিকর ও পরিমিত খাবার খাওয়া উচিত৷ সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত৷ প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমান সবুজ ও হলুদ সবজী, যেমন পালংশাক, লাল শাক, মুলাশাক, সজনে শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ইত্যাদি খেতে হবে৷ এছাড়া হলুদ ফলমুল, দুধ, ডাল, ছোটমাছ, ডিম, মাংস অধিক পরিমাণে খেতে হবে৷ আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে তবে বেশি নয়৷
গর্ভবতী মায়ের সঠিক পরিচর্যার জন্য আমরা ফলমূলের প্রতি বিশেষ নজর দেই কিন্তু গর্ভবতী অবস্থায় যে ফলটি বর্জন করা উচিৎ তার নাম হল আনারস । আনারসে ব্রোমেলিয়ান নামক এক ধরনের উপাদান থাকে, যা ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং আনারসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও খনিজ উপাদান থাকে, যা পাকস্থলীর বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে কিন্তু বিশেষ ভাবে মনে রাখা প্রয়োজন গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আনারস খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও ডিম থেকে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য, পনির, অপাস্তরিত দুধ মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে এই সকল খাবার বর্জন করাই উত্তম।
ফরমালিন যুক্ত ফলঃ
গর্ভাবস্থায় বেশী বেশী ফল খাওয়া উচিৎ ,কিন্তু আজকাল সব ফলেই ফরমালিন দেয়া থাকে এমনকি কলাতেও তাহলে গর্ভবতী মা খাবেন কিভাবে ? ফরমালিন যুক্ত ফল খেলে গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
একটু সচেতন হয়ে আপনি খান এবং সুস্থ থাকুন ।
কিভাবে মাছ থেকে ফর্মালিনের দূর করবেন ?
o পরীক্ষায় দেখা গেছে পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়।
o লবনাক্ত পানিতে ফর্মালিন দেওয়া মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফর্মালিনের মাত্রা কমে যায়।
o প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারন পানিতে ফর্মালিন যুক্ত মাছ ধুলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ফর্মালিন দূর হয়।
o সবচাইতে ভাল পদ্ধতি হল ভিনেগার ও পানির মিশ্রনে (পানিতে ১০ % আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফর্মালিনই দূর হয়।
কিভাবে ফল ও সবজি থেকে ফর্মালিনের দূর করবেন ?
o খাওয়ার আগে ১০ মিনিট গরম লবণ পানিতে ফল ও সবজি ভিজিয়ে রাখতে হবে।
প্রোটিন বা আমিষ
প্রোটিন শরীরের গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে৷ গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রোটিনে চাহিদা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি হয়৷ প্রোটিন মাছ, মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মটরশুটি, ডাল, বাদাম, ইত্যাদি বেশি পরিমানে খাবেন৷
ক্যালসিয়াম
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি৷ গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য অনেক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়৷ দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছ, বাদাম, কমলালেবু, শুকনো ফল, সবুজ পাতাসহ শাক-সবজি, ফুলকপি ও তৈলবীজ খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে৷
আয়রন
আমাদের দেশের বেশির ভাগ গর্ভবতী মহিলাই রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন৷ গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়৷ এই সময় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করা না যায় তাহলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে৷ তাই রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ করার জন্য মাকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে৷ গরু কিংবা খাসির কলিজা, বাচ্চা মুরগি, ডিম, মাছ, কলা, কচুশাক, পালং শাক এ সবের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে৷
ফলিক এ্যাসিড
কোষ বিভাজনে ফলিক এ্যাসিডের বড় ধরণের ভূমিকা থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ফলিক এ্যাসিড দরকার৷ ফলিক এ্যাসিড শিশুর মেরুদন্ড গঠনে সহায়তা করে৷ কোন কারণে ফলিক এ্যাসিডের অভাব হলে শিশুর মেরুদণ্ডে জণ্মগত ত্রুটি থাকতে পারে৷ সবুজ সবজিতে পাওয়া যায় ফলিক এসিড৷
ভিটামিন-এ
ভিটামিন এ-এর অভাবে বাচ্চাদের রাত কানা রোগ হয়৷ এ ছাড়া হাড় ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহের গঠনের জন্য ভিটামিন এ প্রয়োজন৷ এ কারনে গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত, যেমন – মাংস, ডিম, তৈলাক্ত মাছ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, তেল ও বাদাম৷
ভিটামিন-বি
এ সময় অনেক গর্ভবর্তী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়৷ এই ভিটামিন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শক্তি বাড়ায়৷ যেমন – কলিজা, মাংস, মুরগির মাংস, যকৃত, মাছ, দুধ, দই, ডিম, ডাল, আটা, গম, ভুট্টা, কলা, পাকা বেল, পেয়ারা, পাকা পেপে, জাম, কাঠাল, লিচু, বাদাম, সবুজশাক সবজি, ঢেঁকি ছাটা চাল, সয়াবিন, সবুজ ফুলকপি, সিম, বাঁধাকপি ইত্যদি৷
ভিটামিন-সি
ভিটামিন সি শিশুর হাড় তৈরিতে সাহায্য করে৷ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন – আমলকী, পেয়ারা, কমলা লেবু, বাতাবি লেবু, সবুজ শাক-সবজি, টমেটো এবং আলু খেতে হবে৷ মনে রাখবেন বেশিক্ষণ রান্না করলে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়৷
ভিটামিন-ই
ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে৷ আপেল, বাদাম, গাজর, বাঁধাকপি, ডিম, অলিভ তেল ও ও সূর্যমুখি বীজে ভিটামিন ই পাওয়া যায়৷
জিন্ক
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস জিংক এবং ফলিক এ্যাসিডের ভূমিকা অপরিসীম৷ জিংক গর্ভপাত প্রতিরোধ করে এবং শিশুর ওজন বাড়ায়৷ এই জিন্ক পাওয়া যাবে প্রানিজ প্রোটিনে৷ তাছাড়াও চিনে বাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, গম এসবে প্রচুর পরিমাণ জিন্ক থাকে যা আপনার গর্ভাবস্থায় চাহিদা পূরণে সক্ষম৷
ভিটামিন ট্যাবলেট
গর্ভাবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিনের প্রয়োজন হয়৷ এই অতিরিক্ত ভিটামিনের চাহিদা খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব না হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হবে৷
গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ
খাদ্যের নাম খাদ্যের পরিমাণ
চাল/আটা ৪২৫ গ্রাম
ডাল ৬০ গ্রাম
মাছ/মাংস/ডিম ৬০ গ্রাম
আলু/মিষ্টি আলু ৬০ গ্রাম
শাক ১৮০ গ্রাম
সবজি ঌ০ গ্রাম
ফল ১ টা
তেল/ঘি ৬০ মিলিলিটার
গোসলঃ
প্রতিদিন ভালোভাবে গোসল করা উচিত৷ তবে পুকুরে সাঁতার কাটা বা পানিতে ঝাঁপ দেওয়া ঠিক নয়৷ গ্রীষ্মকালে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা ও আরামের জন্য প্রয়োজন হলে একাধিকবার গোসলে করতে পারেন তবে ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে৷
পোশাকঃ
গর্ভাবস্থায় যাতে পেটের ওপর চাপ কম পড়ে এবং চলাফেরায় আরাম পাওয়া যায় সেজন্য ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত৷ অন্তর্বাস প্রয়োজনানুপাতে ঢিলা থাকতে হবে৷ এ সময় সিনথেটিক ব্যবহার না করে সুতির পোশাক পরাই ভালো৷
জুতাঃ
গর্ভাবস্থায় উঁচু হিলের জুতা ব্যবহার করা উচিত নয়৷ জুতা নরম এবং ঠিক মাপমতো হওয়া উচিত৷ জুতা পরে স্বাচ্ছন্দো চলাফেরা করতে যেন কোন রকম ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ এসময় শরীরের ওজন ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ তাই ভারসাম্য রক্ষার জন্য নিচু অথবা মাঝারি ধরনের হিলওয়ালা জুতা পরাই ভাল৷
দাঁতের যত্নঃ
দাঁতের যত্ন ৬ মাস বয়স থেকে সারা জীবনই নিতে হয়। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই সবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করার কথা ভুললে চলবে না। গর্ভাবস্থায় দাঁতের যত্ন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থার দুই মাস পর থেকে মুখ এবং দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়।
অ্যাপথাস আলসারঃ গর্ভাবস্থায় অনেকেরই মুখের অভ্যন্তরে বার বার অ্যাবথাস আলসার হতে দেখা যায়। এই সময় পোভিডন আয়োডিন মাউথওয়াশ ১% সমপরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুই বার কুলি করতে হবে। পাশাপাশি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ফলিক এসিডও দেয়া যেতে পারে।
প্রেগন্যান্সি জিনজিভাইটিসঃ গর্ভাবস্থার দুই মাস পরে মাড়ির প্রদাহ দেখা দিতে পারে যা প্রেগন্যান্সি জিনাজিভাইটিস নামে পরিচিত। মাড়িতে পাথর থাকলে ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে স্কেলিং করিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় ব্যাকটেরিয়া বংশ বৃদ্ধি করে গর্ভবর্তী মায়ের ক্ষতি করতে পারে। তাই সবচেয়ে ভাল হয় গর্ভাবস্থায় পুরো সময় একজন ডেন্টাল সার্জনের তত্ত্বাবধানে থাকা।
পায়োজেনিক গ্রানুলোমাঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মাড়িতে এক ধরনের টিউমার দেখা যায় যা পায়োজেনিক গ্রানুলোমা নামে পরিচিতি। তবে অনেকে এ টিউমারকে প্রেগন্যান্সি ইপুলিস বলে থাকেন। গর্ভাবস্থা শেষ হলে এ টিউমার আপনা আপনিই ভাল হয়ে যায়। তবে কোন জটিলতা দেখা দিলে বা কোন সমস্যা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাথে সাথে চিকিত্সা নেয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় দাঁতের চিকিত্সার সময়ঃ গর্ভাবস্থায় দাঁতের চিকিত্সার সবচেয়ে উত্তম সময় হল গর্ভাবস্থার তিন মাস থেকে ছয় মাস সময়। এ সময় ওষুধ সেবনও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে জরুরী চিকিত্সা যেকোন সময়ই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
স্তনের যত্নঃ
গর্ভাবস্থায় গর্ভের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত স্তনের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত৷ গর্ভাবস্থায় শরীরের স্বাভাবিক সব প্রক্রিয়ার একটি বিরাট পরিবর্তন ঘটে। যার প্রভাবে স্তনবৃন্ত বা নিপল আকারে বড়, সংবেদনশীল এবং গাঢ় রং ধারণ করে। নিপলের চারদিকের কালো অংশ অর্থাৎ এরিওলাও এ সময় তুলনামূলকভাবে বড় হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় এরিওলার সেবাসিয়াস গ্রন্থিগুলো বেশি সক্রিয় হবার ফলে সেখানে ১৫/২০টি বড় বড় দানা দেখা যায়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় মন্টগোমেরী’স টিউবারকল বলে। পেটের ঠিক মাঝখানে একটি লম্বা বাদামী রংয়ের দাগও অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘লিনিয়া নাইগ্রা’।
গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসে মায়ের শরীরের ওজন ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় শরীরের বিশেষ বিশেষ কিছু অংশ (যেমন ঃ স্তন, পেট ইত্যাদি) আকার আয়তনে তুলনামূলকভাবে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। ফলে এ সমস্ত স্থানের ত্বকের নিচের টিসুগুলোর পরিবর্তন হয়ে দ্রুত এবং বেশি সম্প্রসারণের কারণ ত্বকের দ্বিতীয় স্তর ডার্মিসে থাকা ইলাস্টিক ফাইবার ছিড়ে গিয়ে আড়াআড়ি ফাটা ফাঁকা চিকন সাদাটে বা গোলাপী রংয়ের দাগের সৃষ্টি করে। এ স্থানের ত্বক কিছুটা কুচকানো থাকে। ডাক্তারি ভাষায় ত্বকের এ পরিবর্তনকে ‘স্টায়া’ বলে। যেহেতু এটি গর্ভাবস্থায় হচ্ছে, সেহেতু এক্ষেত্রে এর নাম ‘স্ট্রায়া গ্রাভিডেরাম’ বা ‘প্রেগনেন্সি স্ট্রেচ মার্ক’।দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে এই দাগ ফর্সা, মোটা এবং প্রথম সন্তান প্রসবকারী মায়েদেরই বেশি চোখে পড়ে। সাধারণত এই দাগ হওয়া শুরু হয় গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাস থেকেই। তারপর গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসে মায়ের শরীরের ওজন ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে, আর এ পরিবর্তনও বাড়তে থাকে। গর্ভাবস্থায় ত্বকের আরো অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন-গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে কারো কারো চুলের বৃদ্ধি কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে শেষ দিকে এবং প্রসবের পর পর চুল সাধারণত আরো বেশি পড়ে। শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ায় গরমের দিনে গর্ভবর্তী মায়েদের ফাংগাল ইনফেকশন এবং ঘামাচির উৎপাত বেশি হতে পারে। সে জন্য প্রয়োজনে ভালো উন্নতমানের ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে এবং সব সময় সুতী কাপড় ব্যবহার করতে হবে। ঘামে ভেজা কাপড় বেশিক্ষণ ব্যবহার না করে এ সময় কাপড় ঘন ঘন বদল করলেই ভালো। সাবান ও কুসুম গরম পানির সাহায্যে পরিষ্কার করে পরে ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলে শুকনো নরম তোয়ালে দিয়ে মোছা উচিত৷ তা ছাড়া স্তনের বেঁাটা বা নিপল যাতে ফেটে না যায় এবং গঠন সুঠাম হয় সেজন্য গ্লিসারিন মাখতে পারেন অথাব বেঁাটা সামনের দিকে একটু টেনে আঙুলে তেল (অলিভ ওয়েল হলে ভালো হয়) নিয়ে বুড়ো আঙুলের সাহায্যে আস্তে আস্তে ম্যাসেজ করতে পারেন৷ এতে পরে নবজাতকের স্তন্যপানের সুবিধা হয়৷
ত্বকের যত্ন
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন গোসলের পরে তলপেটে আস্তে আস্তে কুসুম গরম তেল মালিশ করা ভালো৷ তাহলে পেটের ত্বক সহজে প্রসারিত হবে এবং ত্বকে টান কম পড়ার কারণে সাদা সাদা দাগ কম হবে৷ ত্বকেও অনেক ধরনের পরিবর্তন এবং নানা ধরনের চর্মরোগ সৃষ্টি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় খাবারের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি থাকে, তাই সেই অনুপাতে খাওয়া-দাওয়া না করলে মায়ের ত্বকে হতে পারে বিশেষ কোনো খাদ্য উপাদানের ঘাটতিজনিত রোগ অর্থাৎ অপুষ্টিজনিত কারণেও এ সময় বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায়ও এ সময় পরিবর্তন হয়। ফলে বিভিন্ন জীবাণু (যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদি) সংক্রমণের দ্বারাও ত্বকে অনেক চর্মরোগ হতে পারে। এছাড়া বেশকিছু চর্মরোগ এ সময় হয়ে থাকে, যার প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। আর এ ধরনের কিছু নির্দিষ্ট চর্মরোগ রয়েছে, যা কেবল গর্ভাবস্থায়ই হয় এবং সরাসরি গর্ভাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন-প্রুরাইগো জেসটাসোনিস, পেমপিগোয়েড জেসটাসোনিস, ইমপিটিগো হারপিটিফরমিস ইত্যাদি চর্মরোগ। উল্লেখ্য যে, গর্ভাবস্থার আগে থেকেই যদি কারো কোনো চর্মরোগ থেকে থাকে, গর্ভাবস্থায় তার অবস্থা বিভিন্নজনের বেলায় বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে কোনো কোনো চর্মরোগ গর্ভাবস্থায় আরো বেড়ে যায়, আবার কারো বেলায় উল্টো অর্থাৎ কমে যায়। হরমোনসহ শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের কারণেও অনেক উপসর্গ এ সময় দেখা দিতে পারে। ত্বক কালো হয়ে যাওয়া এবং চুলকানি এর মধ্যে অন্যতম। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টরণ ও মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোনের পরিমাণ শরীরে বেড়ে যায়। ফলে ত্বকে কালো কালো ছোপ এবং মুখে মেছতাসহ বেশ কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। স্তন, যৌনাঙ্গ এবং অন্যান্য কিছু অঙ্গ এ সময় অতিরিক্ত কালো হয়ে যেতে পারে।
চাকরিঃ
গর্ভবতী মা চাকরিজীবী মহিলা হলে, কী ধরনের কাজ এবং কতদিন ঐ কাজ আপনি করতে পারবেন তা নিয়ে আপনার চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করুন৷ আপনার স্বাস্থ্য ও গর্ভকালীন আপনার শরীরের অবস্থার ওপর কাজ করা বা না করা নির্ভর করবে৷
ব্যায়ামঃ
শরীর সুস্থ রাখা এবং সহজ প্রসবের জন্য গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা একান্ত প্রয়োজন৷ প্রত্যহ সকল-সন্ধায় এক ঘণ্টা করে হঁাটলে ঠিকমতো রক্ত চলাচলে সহায়তা করে এবং পেশিগুলোও সুস্থ ও সবল অবস্থায় থাকে৷ব্যায়াম কতোটা শ্রমসাধ্য হওয়া উচিত সে বিষয়ে কিছু সাধারণ জ্ঞান সকলেরই থাক ভালো৷ যাদের আসবাবপত্র পরিষ্কার বা রান্না এ ধরণের কাজ করতে হয় তাদের আলাদাভাবে ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না৷যারা কর্মজীবী তারা চাকরি থেকে ছুটি না নিলে পৃথকভাবে ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না৷ তবে গর্ভাবস্থায় শেষ দিকে কাজ কমে গেলে দুবেলা কিছুক্ষণ হাঁটা উচিত৷ যাদের অফিসে সারাক্ষণ বসে কাজ করতে হয় তাদের অনেকক্ষণ বসে থাকার জন্য দিনের শেষে ক্লান্তি আসে৷ এ অবস্থায় এক সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেয়া ভালো৷ সাধারণ ব্যায়ামের মধ্যে সমান রাস্তায় বা জমিতে হাঁটা খুবই উপকারী৷ তবে হাঁটার দূরত্ব এমনভাবে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত যাতে অহেতুক ক্লান্তি না আসে৷
সহবাস সাধারণভাবে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস সহবাস থেকে বিরত থাকাই ভালো৷ দ্বিতীয় তিনমাসে দম্পতির ইচ্ছেমতো সহবাস করা যায়৷ তবে তাও নির্ভর করে গর্ভবতীর শারীরিক অবস্থার ওপর৷ প্রয়োজনে নিয়মিত চেকআপকারী ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো৷ শেষ তিন মাস গর্ভবতীর শারীরিক অবস্থার জন্য সহবাসে অসুবিধা হতে পারে৷ তা ছাড়া সহবাসের ফলে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে৷ তাই শেষ তিন মাসও সহবাস না করাই ভালো৷
মানসিক শান্তিঃ
গর্ভাবস্থায় সব সময় মন ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ অনেকের ধারণা এ সময় সত্ চিন্তা করলে সন্তান সৎ চিন্তার অধিকারী হয়৷ তবে এটা ঠিক গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তা, রাগ, ভয় বা শোকের ফল গর্ভবতী মায়ের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে৷
মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য হালকা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন ,ভালো ভালো কথা শুনবেন ,বলবেন , এমন কোন অনুষ্ঠান দেখবেন না বা কোন আচরণে পরবেন না যাতে আপনি মনে আঘাত পান ,এমন কোন মুভিও দেখবেন না যাতে আপনি ভয়পান ,অথবা কষ্ট পান ,এসব সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে । এসময় স্বামী যদি সহযোগিতা করেন তবে গর্ভবতী নারীর সময়গুলো আরও ভালো যাবে ,পরিবারের বাকি সদস্যদেরও তার মনের দিকগুলো খেয়াল করা উচিৎ । এমন কোন আচরন করা উচিৎ নয় যাতে মা কষ্ট পান । জোরে ,উচ্চস্বরে কথা বলা ,ঝগড়া বা শব্দ দূষণেও মনের ও শরীরের উপর প্রভাব পড়তে পারে ,তাই এই ব্যাপারগুলি এড়িয়ে চলা উচিৎ ।
ভ্রমণঃ
বর্তমানে অনেক মহিলাই কর্মজীবী৷ কর্মজীবী মহিলাদের একেবারে ঘরে বসে থাকা চলে না৷ কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়৷ তবে ভ্রমণ বলতে আমরা বুঝি দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া৷ দূরে কোথাও বেড়াতে হলে সাবধানে যাতায়াত করতে হবে৷ যে ভ্রমণে বেশি ঝাকুনি লাগে (যেমন খারাপ রাস্তায় রিকশা, স্কুটার বা বাসে চলা) ও বেশি পরিশ্রম বোধ হয়, তা না করাই ভালো৷ লম্বা, ক্লান্তিকর ভ্রমণ (প্রথম ৩ মাস এবং শেষ দেড় মাস) এড়িয়ে চলুন৷ একান্ত যদি ভ্রমণ করতে হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷
গর্ভাবস্থায় ওষুধঃ
একজন নারী যখন গর্ভবতী হন, তখন তাঁর দেহমনে বিরাট একটা পরিবর্তন সূচিত হয়। কারণ, তাঁর ভেতরে বেড়ে উঠছে অনাগত একটি জীবন। তাই গর্ভবতী নারীকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, সামান্য অসতর্কতার ফলে তাঁর কিংবা শিশুটির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত ওষুধ সেবনে। বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে কোনো ওষুধই পারতপক্ষে খাওয়া উচিত নয়। এমনকি ভিটামিন বা আয়রনও নয়। নিচে আমরা কিছু ওষুধের তালিকা তুলে দিলাম, যা গর্ভাবস্থায় কোনো পর্যায়েই খাওয়া উচিত নয়।
অ্যাসপিরিন (ব্যথানাশক): এটি খেলে শিশুর (ডিএফএন, ইকোস্পিরিন) শারীরিক গঠনে অসুবিধা হতে পারে। এটি কার্ভা ইত্যাদি নামে বাজারে পওয়া যায়।
এন্ডোমিথাসিন: আইমেট, ইন্ডোমেট ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। (বাতের জন্য) শিশুর শারীরিক গঠনে অসুবিধা হতে পারে।
ক্লোরোকুইন (ম্যালেরিয়ার ওষুধ): গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে ব্যবহারে শিশু বধির ও বোবা হতে পারে।
ক্লোরামফেনিকল (টাইফয়েডের ওষুধ): শিশুর মৃত্যু ঘটায়।
সালফোনামাইড (ডায়াবেটিসের ওষুধ): এটি খেলে শিশুর জন্ডিস হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে ইনসুলিন ব্যবহার করা শ্রেয়।
টেট্রাসাইক্লিন: এটি শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে ক্ষতি করে।
কর্টিসোন/প্রেডনিসোলন (স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ): মৃত শিশু জন্ম নেবে।
ইস্ট্রোজেন/স্টিলবেস্টরন (হরমোন-জাতীয় ওষুধ): মেয়েশিশু
হলে ভবিষ্যতে যৌনাঙ্গে ক্যানসার হতে পারে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি (ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল): ভ্রূণের গঠন বিকৃতি করবে।
ভিটামিন-এ: বেশি মাত্রায় ব্যবহারে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
কৃমিনাশক: (যেমন—অ্যালবেন, অ্যালমক্স, আরমক্স ইত্যাদি) গর্ভপাত ঘটানোর আশঙ্কা থাকে।
মেট্রনিডাজল: (যেমন—ফ্লাজিল, ফিলমেট, অ্যামোডিস ইত্যাদি) আমাশয়ের ওষুধ, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ব্যবহারে শিশুর গঠনে বিকৃতি দেখা দিতে পারে।
ডায়াজিপাম: (যেমন—সেডিল, রিলাক্সেন ইত্যাদি) ঘুমের ওষুধ, এটি খেলে শিশুর মাংসপেশির দৃঢ়তা থাকবে না। মায়ের স্তন চুষতে পারবে না।
প্রত্যেক গর্ভবতী মা ওষুধের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন; যা আপনার ভবিষ্যৎ সন্তানের মঙ্গল আনবে।
ধূমপান
গর্ভাবস্থায় ধূমপান করা মোটেও উচিত নয়৷ ধূমপায়ী মায়েদের ক্ষেত্রে শিশুর ওজন কম হয়৷ এ ওজনের কমের কারণে মাতৃগর্ভে শিশুর বিকাশের বিঘ্নের সৃষ্টি হয়৷ এ ঘটনা সরাসরি ধূমপানের মাত্রার ওপর নির্ভরশীল৷ গর্ভবতী মায়েদের পাশে বসে যদি তার স্বামী অথবা অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধূমপান করেন তা হলেও গর্ভস্থ সন্তানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে৷
যোনিপথের কোন রোগঃ
গর্ভাবস্থায় যোনির নিঃসরণ বেড়ে যায়৷ কিন্তু অতিরিক্ত যোনি নিঃসরণ, দুর্গন্ধযুক্ত বা সঙ্গে চুলকানি থাকলে অথবা অন্য কোনও রোগ থাকলে তা চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে প্রসবের আগেই সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলতে হবে৷ তা না হলে প্রসবের সময় যোনিপথের রোগ শিশুর চোখে, নাভিতে বা শরীরের অন্য কোনও জায়গায় আক্রমণ করতে পারে৷ যেমন – গনোরিয়া রোগ যোনিপথ থেকে শিশুর চোখে সহজেই সংক্রমিত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে শিশুর চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷
এড়িয়ে চলবেন যেগুলোঃ
তেজস্ক্রিয়তাঃ
গর্ভস্থ শিশু বিভিন্নভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মির সংস্পর্শে আসতে পারে। গর্ভবতী মা অনেক সময় চিকিৎসাগত কারণে তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ওষুধ খেয়ে থাকেন, যা মায়ের মূত্রাশয়ের দেয়ালে অনেক দিন জমা থাকে এবং মূত্রাশয়ের পেছনে অবস্থিত জরায়ু ও ভ্রূণের ওপর তেজস্ক্রিয় রশ্মি ছড়িয়ে দিতে পারে। সারা বিশ্বেই মানুষ প্রতিনিয়ত অল্পমাত্রায় তেজস্ক্রিয় রশ্মির সম্মুখীন হচ্ছে। একে বলা হয় প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা। এর উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ, বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি, যা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে।প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ছাড়াও একজন গর্ভবতী মা তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা পদার্থের সম্মুখীন হতে পারে-এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, ফ্লুরোস্কোপি (বিশেষ ধরনের এক্স-রে) পরীক্ষা করালে, ক্যানসার চিকিৎসার জন্য রেডিওথেরাপি গ্রহণ করলে কিংবা তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করলে।
গর্ভবতী অবস্থায় বিমান ভ্রমণঃ দূরপাল্লার বিমানগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচু দিয়ে যাতায়াত করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে যাওয়া যায় ততই প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। অল্প সময়ের জন্য অনিয়মিত বিমান ভ্রমণে গর্ভবতী মা বা ভ্রূণের ক্ষতির আশঙ্কা বেশ কম। তবে যাঁরা ঘন ঘন দূরপাল্লারবিমানে ভ্রমণ করে থাকেন, তাঁদের নিজেদের ওপর তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার হিসাব রাখা প্রয়োজন।
লেখকঃ এস এম নওশের
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।