অপহরণের ১৫ ঘণ্টা পর ব্যবসায়ী উদ্ধার : মুক্তিপণ নিতে গিয়ে ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাসহ সাতজন আটক
একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নেওয়ার সময় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাসহ সাতজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানার পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে এই সাতজনকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে অপহূত মুঠোফোনে টাকা ভরার (রিচার্জ) ব্যবসায়ী ফরহাদ ইসলামকেও উদ্ধার করা হয়। এদিকে, আটক হওয়া নেতাদের ছাড়িয়ে নিতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুলিশের ওপর ব্যাপক চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান। আটক হওয়া ছাত্রলীগের নেতাদের শাহবাগ থানায় না রেখে রমনা থানার হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কারণ জানতে চাইলে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিল হোসেন বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে ছাত্রলীগের ওই নেতাদের রমনা থানার পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-ক্রীড়া সম্পাদক সৃজন ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সহসভাপতি তানভীরুল ইসলাম, জগন্নাথ হল কমিটির সহসভাপতি অনুপম চন্দ্র, মুহসীন হল কমিটির ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, জসীমউদ্দীন হল কমিটির সাবেক সহসম্পাদক বাপ্পী ও ছাত্রলীগের কর্মী হিমেল। এঁদের সঙ্গে আরফান পাটোয়ারি নামের আরেক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে। এঁদের মধ্যে জগন্নাথ হলে সৃজন ঘোষের কক্ষে অপহূত ব্যবসায়ীকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে ফরহাদকে অপহরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার নামে ফাঁদ পেতে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে সাতজনকে আটক ও অপহূতকে উদ্ধার করে পুলিশ।
রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আটক হওয়া নেতাদের ছেড়ে দিতে পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি, শাহবাগ থানার হাজতে জায়গা সংকটের কারণে আটক হওয়া ছাত্রলীগের ছয়জনকে রমনা থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে।’
গতকাল সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ব্যবসায়ী ফরহাদের। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি চাঁদপুরে। ঢাকায় মুঠোফোন রিচার্জের ব্যবসা করেন। অপহরণের নেতৃত্বে ছিলেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু আরফান।
ফরহাদ বলেন, তাঁর এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে দেখা করতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ এলাকায় যান। তখন আরফান ১৫-১৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে অপহরণ করেন। এরপর তাঁকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেখানে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এ সময় তিনি নির্যাতনের চিহ্ন হিসেবে শরীরে সিগারেটের পোড়া দাগ দেখান। ফরহাদকে অপহরণের এ ঘটনায় তাঁর বাবা তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
এদিকে, এ মামলায় শেষ পর্যন্ত কতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে, এ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। গতকাল রাত ১০টার দিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আটক হওয়াদের মধ্যে তানভীরুল ইসলামকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
তবে রাত পৌনে ১১টায় রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, তানভীরুলসহ ছয়জন রমনা থানার হেফাজতে আছেন। প্রায় একই সময় মুঠোফোনে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, এ মামলায় আরফান ছাড়াও সৃজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। কারণ, তাঁরা ঘটনায় সম্পৃক্ত নয়, তাঁরা তদবির করতে এসেছিলেন।
বিভ্রান্তি নিরসনে রাত ১২টায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন বলেন, আটক হওয়া কাউকেই ছাড়া হবে না।