ধানমন্ডি মাঠে ভাঙচুরের প্রতিবাদ, শাস্তি দাবি সাজানো ঘটনার তিনটি দৃষ্টান্ত দিলেন স্থপতি ইকবাল

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর ধানমন্ডি মাঠ ক্লাবে গত শুক্রবারের ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেছেন, একটি কুচক্রী মহল এ কাজ করেছে। তিনটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এটিকে একটি সাজানো ঘটনা হিসেবে দাবি করেন তিনি।

আজ রোববার ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। সরকার ও বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ধানমন্ডি মাঠ রক্ষা আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চক্রান্তকারীদের বিচারের দাবিতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মূল বক্তব্য দেন স্থপতি ইকবাল হাবিব।

তিনটি দৃষ্টান্ত
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, গত শুক্রবারের ভাঙচুরের ঘটনা যে সাজানো, তা তিনটি বিষয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এগুলো হলো—
প্রথমত, মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সব ব্যানার, ফেস্টুন সাধারণ কাপড়ে তৈরি হয়। কিন্তু গতকাল যেসব ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে, সেগুলো ছিল দামি কাপড়ে (টিভিসি) তৈরি।

দ্বিতীয়ত, দুর্বৃত্তরা লিখেছে ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের হোসেন। এ আন্দোলনের কোনো কর্মী ভুল করেও কথাটি লিখবেন না। কারণ তিনি স্থপতি।

তৃতীয়ত, এই ব্যানারগুলোতে প্রচারে পরিবেশবাদী কথাটি লেখা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা কোনোদিন কোনো প্রচারে পরিবেশবাদী শব্দটি ব্যবহার করে না। সংগঠনের নাম স্পষ্ট করে লেখা হয়।
গ্রেপ্তার ইশতিয়াক আহমেদের সুবিচার দাবি
স্থপতি ইকবাল হাবিব আরও বলেন, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডি মাঠ রক্ষা আন্দোলনের কর্মী ইশতিয়াক আহমেদ আপত্তিকর একটি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এরপর ক্লাবের লোকজন তাঁকে মারতে আসে। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যায়। বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁকে ধানমন্ডি থানায় রাখা হয়। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে ইশতিয়াক আহমেদকে আবার ধানমন্ডি থানায় নেওয়া হয়। সারা রাত তাঁকে সেখানে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ইশতিয়াককে যখন দ্বিতীয়বার ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাঁরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বিষয়টির সুরাহা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের একটি উচ্চ মহলের নির্দেশে ইশতিয়াককে গতকাল রাতে থানায় রেখে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আমরা সব সময় দাবি করেছি প্রয়োজনে ধানমন্ডি খেলার মাঠটির নামকরণ শেখ জামালের নামে হোক। কিন্তু নাম ব্যবহার করে দুর্বৃত্তায়নের বিরোধিতা করি আমরা।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, ক্রীড়াবিদ কামরুন নাহার, স্থপতি সালমা এ শফি প্রমুখ।

গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর আলোচিত ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে ভাঙচুরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করা ক্লাবের কর্মীদের বক্তব্যের অসংগতি এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের ফটকের বাঁ দিকে শেখ জামালের ম্যুরালে কালো কালি লেপ্টে দেওয়া হয়েছে। ম্যুরালটি একপর্যায়ে ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেন ক্লাবের লোকজন। ম্যুরালের নিচে নেমপ্লেটটি ভাঙা। এ ছাড়া ফটকের পাশে ক্লাবের একটি ঘরের জানালার কাচ ভাঙা ছিল। মাঠের ভেতরে ১১টি ব্যানার দেখা যায়। একটি ব্যানারে লেখা আছে, ‘অবৈধ সরকার এবং শেখ পরিবারের হাত থেকে ধানমন্ডি মাঠ রক্ষা ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করায় ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের, ইকবাল ভাই, ডানা আপা, সালমা আপাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। প্রচারে: পরিবেশবাদী।’

মাঠটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনকারীরা এ ঘটনাকে তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ধানমন্ডি মাঠ জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৮ এপ্রিল মাঠে ঢুকে সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনসহ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend