যুদ্ধশিশু: এক সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধার লড়াই
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশে বিদেশে অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেই তালিকায় এবার যোগ হতে যাচ্ছে আরও একটি ছবি- ‘চিল্ড্রেন অব ওয়ার-নাইন মান্থস টু ফ্রিডম’ বা ‘যুদ্ধশিশু’।
এটি নির্মাণ করেছেন বলিউডের প্রখ্যাত পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত। ভারতে নির্মিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন রাইমা সেন, তিলোত্তমা সোম, পবন মালহোত্রা, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ভিক্টর ব্যানার্জি, প্রয়াত ফারুখ শেখ প্রমুখ। ইতিমধ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি সিনেপ্লেঙ্ েঅনুষ্ঠিত হয়েছে ছবিটির প্রিমিয়ার শো। আর সারা দেশে একযোগে মুক্তি পাবে আগামী ১৬ মে। বাংলাদেশের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে ছবিটি বাংলায় ডাবিং করে বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে। যেসব জায়গায় উর্দুতে সংলাপ হয়েছে, সেখানে বাংলায় সাবটাইটেল দেওয়া হয়েছে। ভারতে ‘দ্য বাস্টার্ড চাইল্ড’ নামে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও ভারতের সামাজিক প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে ‘চিলড্রেন অব ওয়ার’ নামে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এটি ‘দ্য বাস্টার্ড চাইল্ড’ নামেই মুক্তি পাবে।
সিনেমায় বীরাঙ্গনার চরিত্রে রূপদানকারী রাইমা সেন এবং তিলোত্তমা সোম জানান, ধর্ষণের দৃশ্যগুলো চিত্রায়নের পর মানসিকভাবে রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন দুজনই। রাইমা জানান, এটা ছিল তার অভিনয় ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন দৃশ্যগুলোর একটি। অভিনয়ের সময় তিনি টের পাচ্ছিলেন অন্যরকম এক ভীতি তার শরীরে জেগে উঠছে। আরেক অভিনেত্রী তিলোত্তমা বলেন, ‘ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাটা সহজ নয় মোটেই। তবে একই সঙ্গে ভারতীয় নারী হিসেবে ধর্ষণের ভয়াবহতা উপলব্ধি করাটাও কঠিন নয়। কারণ, প্রতিদিনই আমরা এই ভয়ের মধ্য দিয়ে কাটাই।’ পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রতের মতও একই। তিনি বলেন, দৃশ্যগুলো দর্শকদের মেরুদণ্ডে কাঁপুনি ধরিয়ে দেবে। আমরা বিষয়টিকে এতটাই ভয়ঙ্করভাবে তুলে ধরছি যে, ধর্ষণের মতো অপরাধ করা তো দূরে থাকুক, ধর্ষকদের ক্ষমা করে দেওয়ার চিন্তাও যেন কারও মাথায় না আসে।
সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি সিনেপ্লেক্সে হয়ে গেল এই যুদ্ধশিশুর প্রিমিয়ার শো। উদ্বোধনী শোতেই ছবিটি নজর কাড়ে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের। শুরুতেই ছবির কলাকুশলীদের নাম ওঠে আর ফ্লাশ করে এক মার্কিন সাংবাদিককে দেওয়া ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ দেখানো হয়। ছবিটির মূল অংশ শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করার জন্য বেতার বরাবর পাঠানোর ভেতর দিয়ে। এরপর আলাদা গল্পকে অবলম্বন করে এগোতে থাকে ছবিটি। একটি গল্প এই সময়ের। অন্য একটা গল্প একাত্তরের। ২৬ মার্চ। দেখানো হয় ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই গণহত্যার দৃশ্য। ছবিটির চিত্রায়নে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। সবুজ-শ্যামল গ্রামবাংলার অপার সৌন্দর্য চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিটিতে। ছবিটির বড় একটি অংশজুড়ে স্থান পেয়েছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একটি পরিবারের দুরবস্থার চিত্র। হানাদার পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধার লড়াই চলচ্চিত্রটির মূল উপজীব্য। ওই সাংবাদিকের সহধর্মিণীর সংগ্রামী জীবনচিত্রসহ তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। এই সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় তৎকালীন অবস্থা ও চিত্র। ফুটিয়ে তোলা হয় ছবিটির বিন্যাস।
মুক্তিযুদ্ধে নারী, শিশু আবালবৃদ্ধবণিতার ওপর যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে পাকসেনা এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা তা যেন বড় পর্দায় নতুন রূপে চিত্রায়িত হয়েছে। রাইমা সেনের অনবদ্য অভিনয় একাত্তরের সেই যুদ্ধ দিনের সময়কার বাংলাদেশের আপামর বীরাঙ্গনার আর্তনাদকেই মনে করিয়ে দেয়। বীরাঙ্গনা চরিত্রে কম বয়সী কয়েকটি নাম নাজানা মেয়ের অভিনয় বাস্তবতাকে ছুঁয়ে গেছে।