লালবাগে ঐতিহ্যবাহী পুকুর দখল

এখানে একসময় ছিল লালবাগের ঐতিহ্যবাহী পুষ্প সাহা পুকুর৷ আবর্জনা ও ইটপাথর ফেলে দখলের ফলে পুকুরের চিহ্নটিও এখন নেই৷
এখানে একসময় ছিল লালবাগের ঐতিহ্যবাহী পুষ্প সাহা পুকুর৷ আবর্জনা ও ইটপাথর ফেলে দখলের ফলে পুকুরের চিহ্নটিও এখন নেই৷

দখল হয়ে যাচ্ছে পুরান ঢাকার লালবাগের জগন্নাথ সাহা সড়কের পুষ্প সাহা পুকুর। ইতিমধ্যে পুকুরটির প্রায় পুরো​টাই ভরাট করা হয়েছে৷ এর এক-তৃতীয়াংশ জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল দুটি আবাসিক ভবন। বাকি অংশও দখলে নিতে পাঁয়তারা চালাচ্ছেন স্থানীয় ভূমিদস্যুরা।
অভিযোগ রয়েছে, এ দখলের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল্লা সরোয়ার্দী, লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি দেলোয়ার ও তাঁর বোনজামাই নাজিম উদ্দিন।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি দখলমুক্ত করতে সরকারকে তিন মাস সময় দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। গত শুক্রবার ওই পুকুরের পাড়ে এক যৌথ নাগরিক সমাবেশে এ ঘোষণা দেয় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, গ্রিনমাইন্ড সোসাইটি ও পুষ্প সাহা পুকুর রক্ষা কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালের পর থেকে প্রায় অর্ধ একর আয়তনের পুকুরটির দক্ষিণ পাড়ে আবর্জনা ফেলে ভরাট শুরু করেন হাজি দেলোয়ার ও নাজিম উদ্দিন। পরে ২০০৯ সালে ওই অংশে নাজিম উদ্দিনের নামে নির্মাণ করা হয় দুটি পাঁচতলা আবাসিক ভবন। গত নভেম্বরে পুকুরের প্রায় মাঝে বানানো হয় আরও একটি একতলা ভবন। পাশাপাশি পুকুরটির পশ্চিম পাড়ে চারটি ও পূর্ব পাড়ে দুটি টিনের ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন নাজিম উদ্দিন। এতে প্রায় পুকুরের জমির ২৫ শতক তাঁর দখলে রয়েছে। এ ছাড়া পুকুরের পূর্ব-উত্তর পাড়ে ১২ কক্ষের একটি টিনের ঘর নির্মাণ করেছে ইকরামুল্লা সরোয়ার্দী।

পুষ্প সাহা পুকুর রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সায়েমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরোনো ভবনের ইটপাথর ফেলে পুকুরটি ভরাট করে তা দখল করেছে স্থানীয় একটি মহল। দখলের ফলে পুকুরটি হারিয়ে যাচ্ছে৷ তাই পুকুরটি দখলমুক্ত করতে পুরান ঢাকার সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আবর্জনা ও ইটপাথর ফেলার কারণে পুকুরটির প্রায় পুরোটাই ভরাট হয়ে গেছে৷ পুকুরে আবর্জনার স্তূপ জমে সড়ক থেকে প্রায় দুই ফুট উঁচু হয়ে আছে৷ তবে নাজিম উদ্দিনের দখল করা অংশে ‘ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক নাজিম উদ্দিন’ লেখা দুটি সাইনবোর্ড থাকলেও ইকরামুল্লার অংশে তা নেই৷

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, নাজিম উদ্দিনের দখল করা অংশ থেকে প্রতি মাসে ভাড়া আসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা, যার অর্ধেক নেন হাজি দেলোয়ার৷ এ ছাড়া ইকরামউল্লার অংশ থেকে মাসে ভাড়া আসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের সঠিক নজরদারির অভাবে পুকুরটি দখল করছেন স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। তাই আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকারকেই পুকুরটি দখলমুক্ত করতে হবে।

ঢাকা জেলা প্রশাসক সূত্র জানায়, পুকুরটি দখলমুক্ত করতে ২০১০ সালে অভিযান চালায় ঢাকা জেলা প্রশাসকের লালবাগ বিভাগ। তখন ছয় মাসের সময় চেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন নাজিম উদ্দিন। সময় পাওয়ার পর ওই পুকুরটির মালিকানা দাবি করে হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি।

একই সূত্র জানায়, ২০১২ সালের এপ্রিলে অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তফসিলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই তফসিলে পুকুরটির মালিক ঢাকা জেলা প্রশাসক লেখা রয়েছে। পরে পুকুর দখলের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করেন জেলা প্রশাসক।

পুকুর দখলের বিষয়ে কথা বলতে হাজি দেলোয়ারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ক্রয়সূত্রে এ পুকুরের মালিক আমি। হাইকোর্ট মামলার রায় দিলেই চূড়ান্ত ফলাফল পাব।’

ঢাকা জেলা প্রশাসকের লালবাগ বিভাগের জরিপকারক মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। গত শনিবার তিনি  বলেন, নাজিম উদ্দিন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পুকুরটির মালিকানা দাবি করে হাইকোর্টে মামলা করেছেন।

জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই৷ খোঁজ নিয়ে ​ দেখব৷’

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend