থামছে না হাতি মানুষের যুদ্ধ ; অসহায় হয়ে পড়েছে শ্রীবরদীর সীমান্তবাসী
রোম্মান আরা পারভীন রুমী : ভারতীয় সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো এখন বন্য হাতির অভয়াশ্রমে পরিনত হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে বন্য হাতির দল সিংগাবরুনা ইউনিয়নের রাজা পাহার ও এর আশ পাশের এলাকায় দল বেধে অবস্থান করে লোকালয়ে হামলা চালাচ্ছে। খেয়ে সাবাড় করছে মাঠের পাকা ধান, কাঠাল, বেল সহ অন্যান্য ফলদ বাগান। হামলা করছে পাহাড়িদের ঘর বাড়িতে। হাতি তাড়াতে গিয়ে অথবা অজান্তে হাতির দলের আক্রমণে পঙ্গু ও জীবন হারাচ্ছে লোকজন। দীর্ঘ ১ যুগের বেশি হলে থামছে না বন্যহাতি আর মানুষের যুদ্ধ। প্রতিনিয়তই বন্যহাতির আক্রমণে দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা। তিগ্রস্থ হচ্ছে হাজার হাজার একর জমির ধান ও সবজি। তছনছ করছে বন বাগানের বিপুল পরিমাণ গাছ। লন্ডভন্ড হচ্ছে ঘড়বাড়ি। বনহাতির দল শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী কয়েকটি পয়েন্টকে স্থায়ী আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহার করায় সীমান্তবর্তী ৩০ টি গ্রামের মানুষের জীবন এখন হুমকির মুখে।
জানা গেছে, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় প্রদেশের সীমান্তঘেষে অবস্থিত জনপদ শ্রীবরদীর বালিজুরি, রাঙ্গাজান, খাড়ামোড়া, হালুয়াহাটি, মালাকোচা, কর্ণঝোড়া, বাবেলাকোনা, হারিয়াকুনা, ঝোলগাও, পাঁচমেঘাদল, গারোপাড়া,কোচপাড়া সহ ১৮টি ও পাশ্ববর্তী বকসীগঞ্জের বালুঝুরি, টিলাপাড়া, লাউচাপড়া, ডুমুরতলা, দিঘলকোনা, হাতিবেড়কোনা, শোকনাথপাড়া, সাতানিপাড়া, কনেকান্দা, চন্দ্রপাড়া সহ ১২টি গ্রামে বাঙালি, হিন্দু গারো কোচ হাজং মিলে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। উলেখিত এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের ভূখন্ডে রয়েছে বিশাল বনভূমি। বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপোকৃত সমতল। একসময় বন্যহাতির দল মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের ভূখন্ডে আসলেও বর্তমানে কয়েকশত হাতির দল বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে শ্রীবরদী সীমান্তে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। বিগত ১০-১৫ বছর ধরে এসব বুনো হাতি তান্ডবলীলা চালিয়ে সীমান্তবর্তী উলেখিত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে কয়েকশত ঘড়বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার একর জমির ধান, শাকসবজি, ফসল খেয়ে এবং বাগানের গাছপালা দুমড়ে-মুচড়ে সাবাড় করে চলছে। এছাড় বন্যহাতির আক্রমণে রানীশিমূল ইউনিয়নের হালুয়াহাটি গ্রামে আমিনুল ইসলাম, মিষ্টার। বালিজুরি গ্রামের হামির উদ্দিন, বাবুল মিয়া, খ্রিস্টান পাড়ার স্টারসন, ঝুলগাও গ্রামের মজিবর, সিরাজ, হাতিবর গ্রামের বৃন্দাবন দাস, মাখনের চর গ্রামের হাসান, হাবিব, বাঘার চর গ্রামের আবু তালেব সহ অর্ধশতাধিক মানুষের প্রান হানি ঘটেছে। কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কমপে ১৫-২০ জন পঙ্গুত্ব বরণ করে দূবির্ষহ জীবন যাপন করছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার।
ঝুলগাও গ্রামের হযরত,রাজ্জাক, শাহজাহান, ফিলিস মারাক জানান, আগে আগুন দেখে হাতি ভয়ে চলে যেত। কিন্তু এখন আগুন ঢাকডোলে কাজ হচ্ছে না। বালিজুরি গ্রামের আতুয়ার, জন্টু, মহেদ আলী, ফটিক, রসিদ খাড়ামোড়াগ্রামের বারেক, তোতা, রফিকুল, আমিনুল, তৈয়ব আলী, জহুরুল সহ তিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, এলাকায় প্রথম হাতি আসে ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে। সে সময় মাঝে মধ্যে ভারত থেকে ছোট ছোট হাতির দল ধান তে নষ্ট করতো। কিন্তু ভারত সরকার তাদের ভূখন্ডে সীমান্তঘেষে বিদ্যুতায়ন করলে হাতি বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসস্থল গড়ে তুলে। খাড়ামোড়া, বালুবাড়ি,বালু চড়াট ও নয়াবাড়িতে বুনোহাতিরদল নিজেদের স্থায়ী আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহার করছে। গ্রামবাসী আরও জানান, এতদিন হাতির দল আক্রমণ করে পাকা ধান সাবাড় করেছে। এখন ক্ষেতের ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে ।ক্ষেতে ধান শেষ পর্যায়ে থাকায় আক্রমণ করছে কৃষকদের ধানের গোলায়। এতে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তারা ধারনা করছে। এলাকাবাসীর ধারনা ভারতে যেমন বিদ্যূত দেয়ার ফলে হাতিদল এদিকে চলে এসেছে তেমনি এ অঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করলে হাতির আক্রমন থেকে তারা রা পাবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ছোহরাব আলী বলেন, আগে হাতি ফলপাকা ও পাকা ধানের সময় অত্যাচার করতো। কিন্তু এখন সারাবছরই অবস্থান করে জানমাল ও ফসলের তি করছে। তিনি জানান, সীমান্তবর্তী বালিজুড়ি বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে সাবেক এমপি এম.এ বারী সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। সেখান থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দাবি জানান।সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে এবং পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে। ুধা, দারিদ্র্য অশিা, অস্বাস্থ্য, বঞ্চনা তাদের নিত্যসঙ্গি। এর ওপর বন্যহাতির আক্রমন তাদের দিশেহারা করে দিয়েছে। হাতি আতংকে অনেক জমি এমনিতেই পতিত থাকছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে আবাদ করলেও সে ফসল তারা ঘরে তুলতে পারছে না। বরং এখন হাতির দল হামলা করছে বসতবাড়িতে। ফলে পাহাড়ি জনপদের মানুষ হাতির সঙ্গে নিয়মিত যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বন্যহাতির সমস্যা থেকে পরিত্রানে হাতিউপদ্রব গ্রামগুলোতে বিদ্যুতায়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সীমান্তবাসী।