দরপত্র জমা নিয়ে আ.লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ; পিডিবি কার্যালয়ে ভাঙচুর, আহত ১০
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাজের দরপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
আহতদের মধ্যে যুবলীগ কর্মী নজরুল, বাবুল দে, আজম এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাসুমকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ছিল বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের ২২ লাখ টাকার চার গ্রুপ কাজের দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। দরপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই দল যুবকের মধ্যে পিডিবি কার্যালয় চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন যুবক কার্যালয়ে ঢুকে কম্পিউটার, আসবাব ও জানালার কাচ ভাঙচুর করে।
বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অতিক্রম চাকমা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে কে বা কোন দলের লোক ভাঙচুর চালিয়েছে, তা বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন বলতে পারেননি।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, চার গ্রুপ কাজের প্রতিটিতে মাত্র দুটি করে দরপত্র জমা পড়েছে।
আওয়ামী লীগ ও ঠিকাদারদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোলায়মান গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। গতকালও কোনো ঠিকাদার যেন দরপত্র দাখিল করতে না পারেন, সে জন্য সোলায়মান গ্রুপের লোকজন সকাল থেকে শহরের চম্পকনগরের বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় চত্বর এবং বনরূপা কোর্ট রোড এলাকার হ্যাপীর মোড় এলাকায় পাহারা বসায়।
সকাল সাড়ে নয়টা থেকে পৌনে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পঙ্কজ পুরকায়স্থ গ্রুপের লোকজন পঙ্কজ ও পিডি সেলিমের দরপত্র জমা দিতে যায়। কিন্তু আগে থেকে সেখানে অবস্থানরত সোলায়মান গ্রুপের লোকজন তাদের বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পঙ্কজ গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে বনরূপার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পিডিবি কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেনাবাহিনীর একটি পিকআপও সেখানে গেলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা কার্যালয় চত্বর থেকে চলে যায়।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা জাকির হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে পঙ্কজ গ্রুপের লোকজন আবার মিছিলসহকারে হ্যাপীর মোড়ের দিকে আসার চেষ্টা করে। এ সময় সোলায়মান গ্রুপের লোকজন প্রকাশ্যে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে এগিয়ে গেলে ওই এলাকায় পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম রাঙামাটি সড়কে কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ দুই পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যায়। পরে পঙ্কজ গ্রুপের লোকজন মিছিলসহকারে বনরূপা হয়ে কাঁঠালতলীর দিকে চলে যায়।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোলায়মান দরপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এখন (গতকাল) ঢাকায়। আমার কোনো গ্রুপ নাই। কে বাধা দিয়েছে, তা আমার জানা নাই। সবাই একই দল করি। পঙ্কজ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। তারা আমাকে ফোন করেছে। আমি তাদের মিলেমিশে কাজ করার জন্য বলেছি।’
বেলা পৌনে তিনটার দিকে যোগাযোগ করা হলে পঙ্কজ পুরকায়স্থ বলেন, ‘আমি দরপত্র জমা দিতে যাইনি। যারা গেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে কী হয়েছে তা জানাব। এখন কিছুই বলতে পারব না।’