কোচ হওয়ার প্রস্তাবে ভেবে দেখবেন বুলবুল
জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার এবং প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখন ভিন দেশের কোচ। জাতীয় দল থেকে সদ্য বিদায়ী প্রধান কোচ শেন জার্গেনসেনের উত্তরসূরীর প্রস্তাব পেলে ভেবে দেখবেন বলে জানান এই সাবেক ব্যাটসম্যান। মঙ্গলবার এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের কাজে ঢাকায় এসে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদকর্মীদের এমন কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশের কোচ নিয়ে তিনি বলেন,‘আমি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের একটা কাজে ঢাকায় এসেছি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে এশিয়া কাপের কিছু আর্থিক লেনদেনের ব্যাপার আছে। মূলত সেটার জন্য দেশে আসা। বাংলাদেশ টিমের কোচিংয়ের ব্যাপারে বিসিবি’র কাছ থেকে এখনও কোন প্রস্তাব পাইনি। যদি প্রস্তাব পাই তখন চিন্তা করে দেখবো।’
জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ও জার্গেনসেন চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,‘আসলে এটা টিমের পারফরমেন্সেনর কারণে হতে পারে। কোচ টিম থেকে যে ফলাফল আশা করেছিলেন প্রত্যাশা অনুযায়ী রেজাল্ট না হওয়ার কারণে চলে যেতে পারেন। সাংগঠনিক ব্যর্থতা, বোর্ডের সাথে কোচের চুক্তির সমস্যার কারণেও হতে পারে। তবে এটা একটা চিন্তিত ব্যাপার, কেন! কোচ তার শতভাগ দিতে পারছেন না। এ ব্যাপারগুলো নিয়ে একটু ভাবা উচিত। তাপরও বাংলাদেশ হলো এমন একটা দেশ, যেখানে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। কোচিং করারও বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে।’
আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আসলে সমস্যা কোথায় এটা কিন্ত কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে না এবং এর প্রতিষেধকও দিতে পারবে না। এটা ওভারকাম করলে বাংলাদেশ বিশ্বের সমীহ পাবে এটা কেউই বলতে পারবে না। তারপরও আপনি যদি পারফরমেন্স, পরিসংখ্যান দেখেন, বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা নেই। এটা একটা কারণ হতে পারে। আরেকটা কারণ হতে পারে প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা খেলতে পারছি না। সত্যি কথা হলো, আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে আমরা কোথায় আছি, সেটা একটা বিরাট ব্যাপার। সেটা নিয়ে আমাদের ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা উচিত।’
ক্রিকেটে কোচিং আসলে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আসলে কোচিংটা পুরোটাই হলো একটা রিলেশনশিপ। ম্যানেজম্যান্টও একটা বড় ব্যাপার। কোচের উচিত একটা খেলোয়াড়কে ভালো করে বুঝতে পারা। টপ লেভেল কোচিং হচ্ছে পয়েন্ট ওয়ান পার্সেন্ট। একটা খেলোয়াড়কে যখন আমরা মানসিক দিক থেকে পয়েন্ট ওয়ান পার্সেট ডেভেলপ করাতে পারবে, সেটা অবশ্যই রিলেশনশিপের উপর নির্ভর করছে। জানা থাকবে সব সফল কোচরা নিজের লেভেলের ক্রিকেটে বেশি কাজ করে থাকেন। তারা টপলেভেলের ক্রিকেটারদের ফাইন টিউনিং করেন। আর মুল কাজটা করেন ডেভেলপমেন্টের জায়গায়। বাংলাদেশ দলের জন্য এমন একটা কোচ আশা করছি যিনি টপ লেভেলের খেলোয়াড়দের সাহায্য করবেন এবং উদীয়মান ক্রিকেটারদের প্রস্তুত করবেন।’
এছাড়া তিনি বলেন,‘ক্রিকেট কোচিংয়ের জন্য তৃতীয় লেভেলের যে পড়াশুনা আছে, আমাদের দেশের আট-দশজন লেভেল থ্রি সম্পূর্ণ করে বসে আছেন। আমার মনে হয় দেশীয় কোচদের সুযোগ দেয়া উচিত। আমরা যদি তাদেরকে সুযোগ না দেই তাহলে কিভাবে বলবো তারা পরিপূর্ণ হতে পারছেন কি না। আরেকটা ব্যাপার হলো আমাদের যে কোচ ডেভেলপমেন্টের একটা জায়গা আছে। কোচ তৈরির জন্য আমরা যে কাজ করে থাকি। তাহলে পনের বছর পরেও কি আমরা বলবো আমাদের দেশে মানসম্পন্ন কোন কোচ নেই। তাহলে আমরা কি এই জায়গাটাতে কাজ করিনি? এই বিষয়টা ভেবে দেখা উচিত।’
নিজের কোচিং নিয়ে তিনি বলেন,‘আমি একজন পেশাদার কোচ। আমি একটা জায়গায় চাকুরী করি। পেশাদারি কোচের ব্যাপারে প্রস্তাব আসলে অবশ্যই তা ভেবে দেখবো। আমাদের কোন টেমপ্লেট নেই। আমাদের কোন ব্যারোমিটার নেই যে এটা করলে জাতীয় দলের কোচ হতে পারবো। আর এটা করলে শুধু মাত্র অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হতে পারবো। এ রকম কোন কিছু নেই। আমার মনে হয় দেশীয় কোচদের মধ্যে প্রধান কোচের দায়িত্ব নেয়ার জন্য অনেকেই প্রস্তুত আছেন।’
কোচের স্বাধীনতা বিষয়ে জানতে চাইলে,‘যদি ইন্টার ফেয়ারিং থাকে তাহলে শতভাগ কোচিং করা সম্ভব না। কোচিংটা শুধু খেলা শেখানোই না। এখানে খেলোয়াড় সিলেকশনেরও ব্যাপার থাকে। খেলোয়াড় উন্নয়নের ক্ষেত্র থাকে। কেউ যদি নাক গলায় তাহলে বাংলাদেশে কেন পৃথিবীর কোথায়ও কাজ করা সম্ভব না।’
ক্রিকেটারদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নিয়ে সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন,‘আসলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা তৈরি করে নিতে হয়। আমার খুব মনে পরে গ্যারি কার্স্টেন প্রথম যখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হয়ে আসলেন তখন তিনি বলেছিলেন, ছোট ছোট সমস্যা আমরা দেখবো না। বড় বড় সমস্যা আমরা সমাধান করবো। আমাদেরও সেটাই করতে হবে।’
কোচের কি কি দায়িত্ব থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আসলে কোচ তো একজন শিক্ষক, একজন পিতা এবং একজন ম্যানেজারও। কোচ একজন পাবলিক রিলেশন অফিসার। এই জায়গাটায় একজন কোচের বিভিন্ন রোল থাকে। একজন সফল কোচের এই সব বিষয়গুলো সফলকাম হওয়া উচিত। এবং তার এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা উচিত, তিনি সকলের সম্মানিত হবেন। সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করবেন। সকলের সম্মননা সে সব সময় গ্রহণ করতে পারবেন।’
কোচের পেশাদারিত্বর ব্যপারে বলেন,‘আসলে এটা একটা সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের ব্যাপার। যেহেতু আমি একজন পেশাদার কোচ। সেটা নির্ভর করবে প্যাকেজের উপরে। তারা আমার কাছে কি আশা করছে এবং আমি তাদের কাছে কি আশা করছি। এই সব আমরা আমরাই আলোচনা করছি। ক্রিকেট বোর্ড থেকে এখনও কোন প্রস্তাব আসেনি। আগে প্রস্তাব আসুক। তারপর ভেবে দেখবো।