র্যাবের অবস্থান এখন জনগণের বিরুদ্ধে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরণের নির্মম হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, যে র্যাবকে জনগণের জীবন রক্ষার জন্য, মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য, নিরাপত্তার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল; তারা আজ টাকার বিনিময়ে মানুষের জীবনকে হরণ করছে। প্রকৃতপক্ষে র্যাব আজ জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিকেলে খেলাফত মজলিসের বর্ধিত দায়িত্বশীল সভার সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। অতিথি ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে.জে (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম (কাজী জাফর) সদস্য এসএমএম আলম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরসহ অন্যরা।
আওয়ামী লীগকে ‘প্রতারক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেছেন, ‘তারা কখনও কথা রাখে না। কখনও কথা রাখেনি। তারা বলেছিল- শুধু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার তাগিদে তারা দেশে নির্বাচন করবে। পরবর্তী সময়ে দ্রুত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের উদ্যোগ তারা নেবে। কিন্তু এখন তারা বলছে অন্য কথা। আসলে আওয়ামী লীগ প্রতারণার মাধ্যমে দেশের মানুষকে শাসন করছে।’
ফখরুল বলেন, দেশে যারা ইসলামকে ভালবাসেন, আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চান; আজ তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। শুধু তারাই নন, আজ দেশের ১৬ কোটি মানুষই উদ্বিগ্ন-উৎকন্ঠিত।
তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, সে উদ্দেশ্য স্বাধীনতার পর শাসকগোষ্ঠী হত্যা করেছিল। ১৯৭২-৭৪ সালের মতো আজকেও দেশের ভিন্নমতকে হত্যা করা হচ্ছে। সেদিনের মতো একই কায়দায় আমাদের ভাইদের ঘর থেকে, তাদের মায়েদের কোল থেকে তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। নৃসংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, ৫ জানুয়ারীর পর থেকে দেশে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১০ জনেরও বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কদিন আগে শীতলক্ষ্যা নদীতে ৩০টি লাশ ভেসে উঠেছে। এ লাশ কার, কে এদের নির্মমভাবে খুন করেছে- আজকের এই গায়ের জোরের সরকারকে তার জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন, কেউ কি কোনো দিন শুনেছে যে একটি দেশের জাতীয় নির্বাচনে ১৫৪জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে যায়? একটি দেশের জাতীয় নির্বাচনে গড়ে ৫% ভোটও পড়ে না। শুধু ঢাকাতে যেখানে প্রতিরোধটা খুব বেশি ছিল না, সেই ঢাকাতেও ভোটের হার শতকরা ১০ ভাগেরও কম।
তিনি আরও বলেন, ৫ মে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই প্রতারক সরকার নির্মম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে- এদেশের আকাশে বাতাসে সেদিনের হত্যা ও প্রতারণার শিকার নিরীহ মজলুম মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভেসে বেড়াবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা দেশের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি। শান্তির জন্য আন্দোলন করছি। নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন করছি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। আর এই আন্দোলন করতে গিয়ে দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ বিএনপি ও ১৯ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, এই ঐক্য ভাঙার জন্য বর্তমান অনৈতিক ও অবৈধ সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কিন্তু সকল লোভ-লালসা, ভয়-ভীতির পরও দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করতে পারবে না।