ঝিনাইগাতীতে মহারশি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটপাটের মহোৎসব ;পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) সংবাদদাতা: শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। শামিউল ফকির নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন থেকে নদীর দু’পার কেটে বালু লুটপাট করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে। অবৈধভাবে নদীর দু’পার কেটে বালু লুটপাটের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। জানাযায়, ২০০৪ সালে তিনি মহারশি নদীর কয়েকটি মৌজার ৩৫ হেক্টর এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য নামমাত্র মূল্যে খনিজ সম্পদ মন্ত্রানালয় থেকে ১ বছর মেয়াদে ইজারা লাভ করেন। সূত্র জানায়, তৎকালিন ক্ষমতাশীন দল বিএনপি’র এক নেতার আত্মীয় হবার সুবাদে খনিজ সম্পদ মন্ত্রানালয় থেকে প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমতি লাভ করে। সরকারের বিশেষ একটি সিদ্ধান্তে দেশের বালু মহালগুলো ভূমি মন্ত্রানালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। খনিজ মন্ত্রানালয়ের লিজের বলে ছামিউল ফকির মহারশি নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে অবাধে বালু লুটপাট চালায়। লিজ এরিয়ার সীমানা নির্ধারন করা না থাকায় মহারশি নদীর শতশত হেক্টর এলাকা ও লিজ এরিয়ার বাইরে থেকেও অবৈধভাবে অবাধে বালু লুটপাট চালায়। ১ বছর পর ইজারার মেয়াদ শেষ হলে ভূমি মন্ত্রানালয়ে পুনঃরায় ইজারা নিতে গিয়ে ঝামেলায় পরতে হয় তাকে। ওই ঝামেলা এড়াতে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে তিনি একটি রীট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত মামলাটি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মহারশি নদী থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ বলে মহারশি নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু লুটপাট করে বাড়ি, গাড়ীসহ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এলাকাবাসীর মতে, ছামিউল ফকির হাইকোর্টে ওই রীট পিটিশনকে পূজি করে অবৈধভাবে বালু লুটপাট চালিয়ে কত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এদিকে, মহারশি নদীর ফাকরাবাদ, হলদিগ্রাম, গোমরা ও সন্ধ্যাকুড়া নদীর দু’পার ভেঙ্গে ২০/৩০ফুট গর্ত করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে বালু লুটপাটের কারনে মহারশি নদীর উপর সন্ধ্যাকুড়ায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নব-নির্মিত ব্রীজটি ও ফাকরাবাদ একতা উচ্চ বিদ্যালয়টি হুমকির সম্মুখীন হয়ে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ছামিউল ফকিরের অবৈধভাবে বালু লুটপাটের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষতো দূরের কথা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা পর্যন্ত প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে উকিল নোটিশের পাশাপাশি মামলার হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে কয়েকজন কর্তাব্যক্তিকে। এছাড়া গত ১০ বছরে ছামিউল ফকিরের রীট মামলাটি আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়ায় মহারশি নদী থেকে বালু লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে। বালু মহালের ইজারাদার শামিউল ফকিরকে অবৈধভাবে বালু লুটপাট সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে বালু লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও দীর্ঘ ১ মাসেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, নদীর দু’পাশ নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের জমি ভেঙ্গে বালু লুটপাটের ব্যাপারে বালু লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে মামলা করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।