ভারতে বাঙালি অভিবাসীদের টার্গেটে পরিণত করা হচ্ছে
ভারতে বাঙালি অভিবাসীদের টার্গেটে পরিণত করা হচ্ছে এমনটি জানিয়েছে দি এশিয়ান এইজ শিরোনামের পত্রিকাটি। অথচ তারা ভারতের মানুষকে সেবা দিচ্ছেন। তাদের অফিসে, কারখানায় কাজ করছেন। রিকশা টানছেন। এমনকি তারা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের কোন পছন্দ নেই। তাদের সন্দেহজনক আচরণ নেই। তাদের নেই কোন মুখপাত্র। তাদেরকে শত্রু হিসেবে না দেখে, অনাকাক্সিক্ষত হিসেবে না বিবেচনা করে তাদেরকে মেনে নেয়াটাই হবে বেশি সমীচীন।
ভারতীয়রা মনে করেন, তাদের যে প্রবাহ ভারতের দিকে তাতে ভারতের স্থানীয় জনসংখ্যার বিস্তারের ধরনই পাল্টে যাবে। তাদের মতে, এর একটাই সমাধান। তাহলো বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে হবে এবং সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে। নয়া দিল্লিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাংলাদেশী অভিবাসীদের শনাক্ত করতে ও তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে অনেক অভিযান পরিচালনা করেছে।
সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী প্রচারণায় সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানো ইস্যুতে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এখন নির্বাচন শেষ। এ সময় এ ইস্যুতে দ্য এশিয়ান এইজ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘টার্গেটিং অ্যান্ড মারজিনালাইজিং বাংলা ইমিগ্র্যান্টস ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে অবস্থানরত বাঙালিরা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের শিকার হন। বিশেষ করে সেই আক্রমণ আসে ভারতের রাজনীতির ডানপন্থিদের তরফ থেকে। তারা বাঙালিদের দেখে থাকেন হুমকি হিসেবে। বাঙালি অভিবাসীদের বেশির ভাগই মুসলিম। তাদেরকে দেখা হয় সন্দেহের চোখে।
এসব মানুষের পরিণতি কেউ জানে না। কেউ জানে না তারা বাংলাদেশে ফিরে যান নাকি তারা অন্য কোন জটিল ও সর্পিল জীবনের পথ বেছে নেন। এ সমস্যার শেষ নেই কোনো। পর্যায়ক্রমে এ ইস্যুতে ভারতের এক বা একাধিক রাজনীতিক এ ইস্যুতে হুমকি দেবেন। ভারতে হয়তো কয়েক হাজার বাংলাদেশি মুসলমান বসবাস করছেন। তবে তাদের সংখ্যা কয়েক লাখ নয়। তাদেরকে শনাক্ত করা ও তাদের ফেরত পাঠানো উত্তম ধারণা হতে পারে, কিন্তু ঘড়িকে তো পিছন দিকে নেয়া যায় না। যে মানুষ ভারতে বসতি স্থাপন করেছে, গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়েছে তাদেরকে ধ্বংস করা যায় না, ফেরত পাঠানো যায় না। এমন উদ্যোগ হবে অবাস্তব। অমানবিক। তা হবে ব্যর্থ এক উদ্যোগ।
দি এশিয়ান এইজ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, তবে এখনও যেসব ব্যক্তি বসতি স্থাপন করেননি তাদেরকে টার্গেট করা যেতে পারে। তাদেরকে তুলে এনে ফেরত পাঠানো যেতে পারে। এমন চর্চা করা হলে তা নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ শিরোনাম হবে। খুশি হবেন অনেকে। কিন্তু তাতে অর্জন হবে সামান্যই। বাংলাদেশি অভিবাসীদের শত্রু মনে না করে তাদেরকে মেনে নেয়াই উত্তম।
বাংলাদেশি অভিবাসীর কারণে ভারতের জনসংখ্যা তত্ত্ব পরিবর্তন হয়ে যাবে এমন আতঙ্কের পিছনে কোনো ভিত্তি নেই। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ও আসামের কোনো কোনো অংশে বাংলাদেশি অভিবাসীরা রয়েছেন একপেশে হয়ে। তারা গরিব। তারা সবসময়ই রাজনীতির টার্গেটে পরিণত হন। অভিবাসীদের ভারতের প্রতি ভালবাসা কম আছে- এটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। একই সঙ্গে রাজনীতিতে ইসলামের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন তারা- এমন ধারণাও ঠিক নয়। এটা পরিষ্কার যে, এর জন্য ভারতীয়রাই দায়ী। ভীষণ গরিব যেসব মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন, শুধু বাংলাদেশিরাই নন, নেপালি নন, এমনকি পাকিস্তানি নন, তাদেরকে ভারত থামাতে পারে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র তার ব্যাপক জনসম্পদ ও পুলিশি ব্যবস্থা দিয়ে হিস্পানিক অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে পারেনি।