যেভাবে উদ্ধার করবেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
ফেসবুক বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট এ কথা সবাই জানেন। সাইবার দুর্বৃত্তরাও এই সাইট ব্যবহারকারীদের দুর্বলতার খোঁজে ওঁত্ পেতে থাকে। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাঁরা অবৈধ পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখানো, সম্ভাব্য গ্রাহক বা ক্রেতার তথ্য চুরি, স্পাইওয়্যার, ম্যালওয়্যার ছড়ানোর মতো কাজ করে থাকে। এ ছাড়াও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঘটিয়ে ফেলতে পারে অঘটন।
হ্যাক হয়েছে কিনা বুঝবেন যেভাবে
আপনার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ফেসবুকে আপনার বন্ধু তালিকায় অপরিচিতদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি টের পাওয়া। হ্যাক হলে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার বন্ধুদের কাছে স্প্যাম ছড়ানোর পাশাপাশি ওই অ্যাকাউন্টে ভায়াগ্রা, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। আপনি যখন আপনার দেওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবেন না তখনই বুঝবেন সর্বনাশ হয়ে গেছে। অনেক সময় ফেসবুক হ্যাক হয়ে গেলেও হ্যাকার চুপচাপ থাকে, নজরে পড়ার মতো কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। তখন ফেসবুক হ্যাক হয়েছে কিনা বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে হ্যাকার চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পোস্টের অপেক্ষায় থাকে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অজান্তেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে যায় এবং দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।
ফেসবুক হ্যাক হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে আপনি প্রথমে স্ক্রিনের ডান দিকের ওপরে ‘ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সেটিংস’ অপশনে যান। সেখান থেকে ‘সিকিউরিটি’ অপশনে যান এবং তারপর যান ‘অ্যাকটিভ সেশন’। এই পেজে আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের সর্বশেষ তথ্য জানতে পারবেন। এখানে যদি আপনার অগোচরে ফেসবুক ব্যবহারের কোনো তথ্য পান তবে মনে রাখবেন আপনার অ্যাকাউন্ট আর নিরাপদ নেই।
যেভাবে উদ্ধার করবেন
যদি হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে না ফেলে তবে মনে করবেন যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নিয়ন্ত্রণেই আছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে আপনি দ্রুত অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করে নিতে পারবেন। এজন্য প্রথমে আপনার কম্পিউটারে কোনো স্পাইওয়্যার বা কী লগার রয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত হন। স্পাইওয়্যার হচ্ছে একধরনের সফটওয়্যার যা আপনার অজান্তেই আপনার কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়ে ইনস্টল হয় এবং আপনার কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন ধরণের তথ্য ইন্টারনেটে অন্য কারো কাছে পাচার করে। এগুলো অনেক সময় আপনার কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয়, আপনার বিরক্তি বাড়িয়ে তোলে আর গুপ্তচরবৃত্তি করে। স্পাইওয়্যার থাকলে তা কম্পিউটার স্ক্যান করে দূর করুন। এরপর পুরোনো পাসওয়ার্ডটি বদলে নতুন জটিল একটি পাসওয়ার্ড দিন। পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পাশাপাশি আপনার গোপন নিরাপত্তা প্রশ্নটি ও এর উত্তর বদল করে ফেলুন।
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে যদি বন্ধুদের কাছে স্প্যাম মেসেজ যেতে থাকে, তবে দ্রুত ‘ফেসবুক হ্যাকড’ পেজে গিয়ে ফেসবুকের কাছে একটি অনুরোধ পাঠান। আপনি যদি ফেসবুককে এ বিষয়টি অবহিত না করেন তবে ফেসবুক আপনার অ্যাকাউন্টটির ব্যবহার সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে। এমনকি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেও দিতে পারে।
হ্যাকার যদি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে থাকে তবে আপনাকে তা উদ্ধারে একটু বেশি কষ্ট করতে হবে। আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করলেও যখন তা পারবেন না তখন ‘ফরগট পাসওয়ার্ড’ অপশনে যান। এখানে যে তথ্যগুলো চাওয়া হয় তা সঠিকভাবে পূরণ করলে আপনি ফেসবুকের অ্যাকাউন্টটি ফেরত পাবেন। যে ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল তা ব্যবহার করেন তবে দ্রুত অ্যাকাউন্টটি উদ্ধার করতে পারবেন। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উদ্ধারে আপনার নাম ও বন্ধুদের নাম ও তথ্য চাওয়া হয়। আপনি যদি ইমেইল অ্যাড্রেস বা ফোন নম্বর দিয়েও আপনার অ্যাকাউন্টে যেতে না পারেন, তখন আপনার বর্তমান ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দিয়েও তা উদ্ধার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার তিনজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। তারা ফেসবুকের কাছ থেকে সিকিউরিটি কোড পাবেন এবং সেই কোড ব্যবহার করে আপনার অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে পারেন। ফেসবুক হেল্প সেন্টার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারেন।
কীভাবে করবেন?
১. প্রথম ধাপ: এই লিংকে যান https://www.facebook.com/hacked এবং ‘ইওর অ্যাকাউন্ট হ্যাজ বিন কমপ্রোমাইজড’ বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।
২. পুরোনো পাসওয়ার্ড দিন।
৩. পুরোনো পাসওয়ার্ড দিলে নতুন একটি পেজ আসবে। সেখানে রিসেট মাই পাসওয়ার্ড বাটনে ক্লিক করুন।
৪. ‘নো লংগার অ্যাকসেস টু দিজ’ লিংকে যান।
৫. নতুন ইমেইল অ্যাড্রেস দিন।
অনিরাপদ অ্যাপ্লিকেশন
ফেসবুকে আপনি হয়তো অনেকগুলো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছেন। এগুলোর মধ্যে কোন কোনটি হয়তো অনিরাপদও থাকতে পারে। অ্যাকাউন্ট সেটিংস পেজ থেকে অ্যাপ্লিকেশনে যান। আপনি যে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন না এবং অনিরাপদ মনে করেন তা বাতিল করে দিন। নতুন অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার সময় আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কী ধরনের তথ্য চাচ্ছে সে বিষয়টি খেয়াল করুন। অ্যাপ্লিকেশনে যদি অপ্রয়োজনীয় তথ্যও চাওয়া হয় তবে সে অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন। সেটিংসের অ্যাপ পেজে কোন অ্যাপ্লিকেশন কী করেছে সে তথ্যও জানতে পারবেন। এখান থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশনগুলো বেছে তা বন্ধ করে দিন।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
১. যদি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বলে মনে সন্দেহও জাগে তবে দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
২. পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের আগে বিশ্বাসযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করে কম্পিউটার স্ক্যান করুন।
৩.মোবাইল ফোন ও ওয়েবের সবখানে এক রকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না।
৪. প্রতি মাসে একবার অন্তত পাসওয়ার্ডে পরিবর্তন আনুন।
৫. আপনি কতক্ষণ ফেসবুক ব্যবহার করেছেন তা পরীক্ষা করে দেখুন।
৬. লগইন নোটিফিকেশন ফিচারটি ব্যবহার করুন এতে কেউ আপনার ফেসবুক হ্যাক করলে মোবাইল ফোনে বার্তা পাবেন।
৭. অনিরাপদ অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার আগে আরেকবার চিন্তা করুন।
৮. অপরিচিতের কম্পিউটারে লগ ইন করার সময় সতর্ক থাকুন।