বাজেট-ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো জরুরি: আকবর আলি খান
বাজেট-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর সিএ ভবনে প্রথম আলো কার্যালয়ে ২০১৪-১৫ প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইসিএবি ও প্রথম আলো যৌথভাবে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। আইসিএবির সভাপতি শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির।
আকবর আলি খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাজেটের মূল ভিত্তি হলো, “নো ট্যাক্সেশন উইদাউট রিপ্রেজেন্টেশন”। এখন আমাদের সংসদে ৫০ শতাংশের বেশি সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সংসদে কোনো বিরোধী দল নেই। যেখানে দুই পক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনি ইশতাহারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার কথা, সেখানে আমরা কোনো বিতর্ক আশা করি না।’
আকবর আলী খান আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে যে বাজেট পেশ হয়, তা স্বচ্ছ না। এটা দেখে কোনো কিছু বোঝার উপায় নেই। আমি আগেও বলেছি যে, হঠাত্ করে সরকার বলে দিল যে, “আমরা এক লাখ ২১ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা আদায় করব।” এই টাকা কোথা থেকে আদায় হবে, সে সম্পর্কে বাজেটে বলার প্রয়োজন আছে। তাই হিসাব ছাড়া কত কোটি টাকা আদায় হবে, কীভাবে আদায় হবে, এটা সম্পর্কে সংসদে আলোচনা হয় না। সংসদে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে বাজেট সম্পর্কে আলোচনা হয় না।’ তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রস্তাবগুলো নিয়ে শুনানি হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বক্তব্য লেখা হতো। এতে করে এনবিআর তাদের প্রস্তাব সম্পর্কে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তা জানতে পারত। বাজেট-পদ্ধতি ঢেলে সাজানো দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমানে সুশাসনের অভাবে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না, মন্তব্য করে আকবর আলি খান বলেন, সুশাসনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘প্রতিবছর রেভিনিউ বাজেটের আকার বাড়ছে। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা তুলনামূলক কম। আর এ কারণে চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। অনেক সময় বেতন-ভাতা বাড়ানো হলেও তা রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়। তা ছাড়া বাজারও বেড়ে যাওয়ায় এতে খুব একটা লাভবান হন না চাকরিজীবীরা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইসিএবির কাউন্সিল সদস্য নেছার উদ্দিন বলেন, আয় বাড়াতে হলে বাজেটে কর বাড়াতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
আইসিএবির সাবেক সভাপতি পারভীন মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সামাজিক সূচকগুলো উন্নত অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থান ধরে রাখা দরকার। পাশাপাশি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা, শ্রমিক সুরক্ষা এবং শ্রমিকদের জন্য বিমা ও ক্ষুদ্র বিমার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, রাজস্ব বিভাগের কর্মীদের দক্ষতার অভাব ও দুর্নীতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই বিভাগের সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। কারণ এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হওয়ায় দ্রুত এখান থেকে লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই যে সব কোম্পানির শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে, সেগুলোর শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন সম্ভব।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, নারীনেত্রী সালমা খান, আইসিএবির সহসভাপতি কামরুল আবেদিন ও দেওয়ান নুরুল ইসলাম, আইসিএবির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সবুর খান, আইসিএবির সাবেক সভাপতি আব্বাস উদ্দিন খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রমুখ।