ধরে নিল পুলিশ, আগুনে পুড়ল শ্রমিকের ঘর
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বারদাগ এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৪০)। বাড়ির পাশে পদ্মা নদীতে বালুর ব্যবসা করেন। সেখানে তাঁর ৫০টির মতো নৌকা রয়েছে। এগুলো দেখাশোনার জন্য তিনি প্রায়ই লালন শাহ সেতুর পশ্চিম পাশে গোলচত্বরে রাত কাটান। গত সোমবার রাতেও ছিলেন৷ কিন্তু হঠাৎ দুটি গাড়ি এসে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে অপহরণের গুজবে তাঁর সমর্থকেরা তিনটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ পরে থানার পুলিশ জানায়, ঢাকা মহানগর ডিবির একটি দল তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে৷
লালন শাহ সেতুর টোল প্লাজার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, একটি নোয়া গাড়ি রাত তিনটা ২২ মিনিট এবং তিনটা ২৩ মিনিটে একটি হায়েস গাড়ি টোল প্লাজা পার হয়ে পাবনার ঈশ্বরদীর দিকে যায়। টোল প্লাজার সহকারী প্রকৌশলী তৌফিক আহম্মেদ বলেন, যাওয়ার সময় গাড়ি দুটি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দেওয়া হয়। এ কারণে টোল প্লাজা থেকে গাড়ির নম্বর সংগ্রহ করা যায়নি।
শফিকুল ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিকের চাচাতো ভাই। তাঁকে অপহরণের খবরে সকালে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁরা হলেন বালুশ্রমিক মন্টু সর্দার, তাঁর ছেলে অজিত সর্দার ও অপর ছেলে মাহবুব সর্দারের স্ত্রী পারভীন৷
শফিকুলের লোকজন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মন্টু সর্দার ও তাঁর দুই ছেলের বাড়িতে হামলা চালায়৷ তারা তিনটি বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়িয়ে দেয় একটি মোটরসাইকেল।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম দুপুর ১২টার দিকে জানান, শফিকুলকে রাতে ঢাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর কাছ থেকে ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। তবে এ অভিযানের ব্যাপারে স্থানীয় থানা জানত না৷
শফিকুলের সন্ধান পাওয়ার খবর শুনে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অজিত সর্দারের স্ত্রী সেলিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পরনের কাপড়টুকুও রাখেনি। পুলিশ যদি আগে ধরার কথা বইলতো, তাইলে আমার সংসারে এত বড় ক্ষতি হইতো না। আলমারিতে কাপড়ের ভাজে ১০ হাজার টাকা ছিল। সেটাও নিয়ে গেছে৷’
শফিকুলের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী চোরও না, ডাকাতও না, ব্যবসা করেন। তাঁকে কেন পুলিশ ধরবে? তিনি অভিযোগ করেন, বালু উত্তোলনের যন্ত্র কেনা নিয়ে ঢাকার ধামরাইয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিরোধ চলছে। ওই ব্যক্তিই পুলিশকে ব্যবহার করে তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে যান।
এসব ব্যাপারে কুষ্টিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) আশিস বিন হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার ডিবি পুলিশ অভিযান চালালেও স্থানীয় থানাকে অবহিত করা উচিত ছিল৷ এমনকি সকালে জানালেও আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটত না। আটককৃতদের সম্পৃক্ততা না থাকলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তুরাগ থেকে কয়েকজন আসামিকে ধরার পর তাঁদের তথ্যানুযায়ী কুষ্টিয়ায় অভিযান চালিয়ে শফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে৷