জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক নয় ‘বেতার ঘোষক’- ড. আবুল বারকাত
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নয় তিনি ‘বেতার ঘোষক’। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান কুশিলব কবি বেলাল মোহাম্মদকে উদ্ধৃত করে এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
শুক্রবার দুপুরে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘জাতীয় বিতর্ক উৎসব-২০১৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আবুল বারাকাত বলেন, ইতিহাস ঘটা এক জিনিস আর তা লেখা অন্য জিনিস। ইতিহাসের রচয়িতা আর প্রত্যক্ষদর্শী কখনো এক হয় না। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের অন্যতম কবি বেলাল মোহাম্মদ জীবিত থাকাকালে তার সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেনে একদিন আমার কথা হয়। বেলাল মোহাম্মাদ বলেছিলেন, ‘কোনো রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার জন্য যে ছয়টি শর্ত পূরণ করতে হয়, একমাত্র বঙ্গবন্ধুই তা পূরণ করতে পেরেছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন, তিনি বেতার ঘোষক মাত্র। বেতার ঘোষক হিসেবে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন মাত্র। আর জিয়াউর রহমান যদি ঘোষক হয়েই থাকেন তাহলে যে কয়জন ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন সবাই ঘোষক।’
এ সময় স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম দাবি করাকে অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান বেশি। কারণ পুরুষরা যুদ্ধ করেছে দেশরক্ষার জন্য, কিন্তু নারী একই সাথে দেশ ও নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তারা সবাই পুরুষ, কোনো নারী রাজাকার নেই। তাই তাদের অবদান পুরুষের চেয়েও বেশি।
এসময় ছেলে-মেয়ের বিভাজন না করে সব সন্তানকেই সমান ভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ (এনডিএফ)’র আয়োজনে ও সংগঠনটির সভাপতি একেএম শোয়েবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরসহ এনডিএফ বিডির সাবেক ও বর্তমান নেতারা।
বক্তারা বলেন, বিতর্ক মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করে, সত্য মিথ্যার প্রভেদ নির্ণয়ের ক্ষমতা দান করে। কোনো বিষয়ের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস স্থাপন না করে বিষয়টি সম্পর্কে যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। বিতর্ক চর্চা মানুষের মেধাকে শাণিত করে।
এ উৎসবের গণমাধ্যম সহযোগী হিসেবে রয়েছে দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, চ্যানেল আই, দৈনিক ইত্তেফাকসহ কয়েকটি গণমাধ্যম।
এনডিএফ বিডির পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভবনের সামনে থেকে বের করা হয় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি দোয়েল চত্বর, জাতীয় প্রেসক্লাব ঘুরে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
উৎসবে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বিতর্ক কর্মশালা, বাংলা বিতর্ক (সংসদীয়), ইংরেজি বিতর্ক (সংসদীয়), পাবলিক স্পিকিং, প্লানচেট বিতর্ক ইত্যাদি। নতুন সংযোজন হিসেবে থাকবে প্রথম শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণির শিশুদের বিতর্ক।
দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় উৎসবের মূল আকর্ষণ বিভিন্ন ফরমেটের বিতর্ক প্রদর্শনীর।
সন্ধ্যায় থাকবে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।