রেলস্টেশনের চা বিক্রেতা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
বাবা দামোদারদাস মুলচাঁদ মোদি ছিলেন একজন চা বিক্রেতা। পরিবারের খরচ জোগাতে বাবার সঙ্গে চা বিক্রি করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এক সময়ে ভাইয়ের চায়ের দোকানেও বসেছেন তিনি। তবে চা বিক্রির সঙ্গে থাকলেও পড়াশোনা ছাড়েননি তিনি।
মোদি জন্ম নিয়েছেন ১৯৫০ সালে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় নরেন্দ্র মোদির শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বেশ কষ্টেই। তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি’র (বর্তমান গুজরাট) মহসানা জেলার ভাদনগরে জন্ম নেওয়া মোদির বাবা দামোদারদাস মুলচাঁদ মোদি ছিলেন একজন চা বিক্রেতা। পরিবারের খরচ চালাতে গিয়ে বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় ভাদনগর রেলস্টেশনে চা বিক্রি করতে হয়েছে মোদিকে। কিশোর অবস্থায় নিকটস্থ বাস টার্মিনালে ভাইয়ের সঙ্গে চায়ের দোকানও চালিয়েছেন তিনি। চা বিক্রয়ের পেশায় থাকলেও পড়ালেখা ছাড়েননি মোদি। ভাদনগরের একটি বিদ্যালয় থেকে স্কুলজীবন শেষ করা মোদি সাধারণ মানের ছাত্র হলেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।
স্কুলজীবনে পড়ালেখার পাশপাশি আরেকটি বিষয়ে আগ্রহ ছিল মোদির। সেটি হল বিতর্ক। এমনকি থিয়েটারের প্রতিও অনুরাগ ছিল তার। তবে ভাগ্য তাকে রাজনীতির মাঠে নিয়ে এলেও এখানে বিতর্কের পিপাসা মেটানোর সুযোগ হয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারণায় বিতার্কিক হিসেবে তার ‘দক্ষতা’ দেখল ভারতবাসী!
পারিবারিকভাবে মাত্র ১৩ বছর বয়সে যশোদাবেনের সঙ্গে মোদির বাগদান হলেও বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সে। তবে তাদের সংসার করা হয়েছে অল্পদিনই। এতদিন অবশ্য এ বিষয়টি চেপে রাখলেও এবারের নির্বাচনী হলফনামায় যশোদাবেনকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন মোদি।
মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই রাষ্ট্রীয় সমাজসেবক সংঘ’র (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোদি। ছাত্রজীবনে ২০-২২ বছর বয়সে আরএসএস’র একজন প্রচারক মনোনীত হন। আরএসএস’র সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায়ই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও একই বিষয়ে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আরএসএস করা অবস্থায় বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া মোদি ১৯৮৮ সালে বিজেপি’র (ভারতীয় জনতা পার্টি) গুজরাট শাখার সাংগঠনিক সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। সেখান থেকেই তার রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক উত্থান। এরপর থেকে আর কখনো পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। ভাগ্যদেবী সবসময়ই তার সহায় ছিলেন।
১৯৯১ সালে ‘একতা যাত্রা’য় মোদির উপস্থিতি ও কার্যক্রম দলের মধ্যে তার ভাবমূর্তি আরও সুসংহত করে। এরপর ১৯৯৫ সালে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। তিন বছর পর ১৯৯৮ সালে দলটির জেনারেল সেক্রেটারি হন।
২০০১ সালে নাটকীয় উত্থান ঘটে মোদির রাজনৈতিক জীবনে। তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী কেশুবাই প্যাটেল মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ছিল প্যাটেল সরকারের বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতারা তাই সেখানে বিকল্প নেতা খুঁজছিলেন। এ সময় মোদিকে প্যাটেলের ডেপুটি হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইলে তাতে সম্মত হননি তিনি। অবশেষে ওই বছরই প্যাটেলের পরিবর্তে মোদিকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয় বিজেপি।
২০০২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর পদে দ্বিতীয়বারের মতো বসেন মোদি। যদিও ওই বছর সংগঠিত গুজরাট দাঙ্গায় মোদির সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল।
এরপর ২০০৭ সালের সহিংসতাময় নির্বাচনে আবারও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আসনটা অনেকটা নিজেরই করে নেন তিনি।