৭ হত্যাকাণ্ড: র‌্যাবের ৩ কর্মকর্তার মধ্যে দুই জনকে গ্রেফতার

2_rab_smবহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাবের সেই তিন কর্মকর্তার মধ্যে দুই জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার ভোর সোয়া চারটায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে তাদের গ্রেফতারে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ঢাকায় আসে এবং ভোর পৌনে ৩টায় ঢাকা সেনানিবাসে প্রবেশ করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন র‌্যাব-১১ এর সদ্য সাবেক অধিনায়ক ও সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও একই ব্যাটালিয়নের দ্বিতীয় অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন। এই দুই জন এতদিন ক্যান্টমেন্টের লগ এরিয়ায় অন্তরীণ ছিলেন। অন্য কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার নৌবাহিনী থেকে অকালীন অবসরে পাঠানো লে. কমান্ডার এমএম রানা গ্রেফতার হয়েছেন কিনা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ক্যান্টমেন্ট থানায় র‌্যাবের ওই দুই কর্মকর্তাকে ভোর সোয়া চারটায় হস্তান্তর করে মিলিটারি পুলিশ। পরে পুলিশের গাড়িতে করে সৈনিক ক্লাবের গেট হয়ে তাদের নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।

১১ মে রোববার হাইকোর্টে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের সেই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই মূলত গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রোববার রাতেই আদেশের কপি পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সোমবার পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ এসপির অফিসে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ওই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে (এফডি) চিঠি দেয়া হয়। ফ্যাক্সে সোমবার রাতে ওই চিঠি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ১৩ মে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি বন্ধ থাকায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে চিঠির জবাবের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ১৪ মে বুধবার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ বিষয়টি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানায়। সেদিন বিকাল নাগাদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জবাব পায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে পুনরায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠির জবাব দেয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিকিউকে মোস্তাক আহমদ। চিঠিতে পুলিশকে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর (সিআরপিসি) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

সিকিউকে মোস্তাক আহমদ আরও জানান, মূলত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের জবাব পাওয়ার পরই তিন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে আইনি জটিলতা দূর হয় এবং তাদের গ্রেফতার শুধু সময়ের ব্যাপার।

২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জে আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার, নজরুলের বন্ধুু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন কুমার সরকারের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মোঃ ইব্রাহিম। অপহরণের পরে তাদের খুন করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ইট ও বস্তা বাঁধা অবস্থায় নজরুল ও চন্দন সরকারসহ ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

অপহৃতদের উদ্ধার করতে না পারায় ২৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, র‌্যাব-১১ এর সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল মতিন ও ফতুল্লা থানার ওসি আকতার হোসেনকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

অপহরণ ও খুনের ঘটনায় ৩০ এপ্রিল ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি? ৪ মে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন। তিনি আরও বলেন জামাতাকে বাঁচাতে তিনি র‌্যাবের কর্মকর্তাদেরকে দ্বিগুণ টাকা সেধেছিলেন।

৫ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন? এতে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোনো গাফিলতি আছে কিনা, এটিসহ পুরো ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়? এ ঘটনায় র‌্যাবের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, সে বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করতে র‌্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend