মোদির জয়ে বিএনপিতে উল্লাস, আওয়ামী লীগে অপেক্ষা
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিসেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিপুল বিজয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ফেলেছে বড়ধরণের প্রভাব। প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশটির রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বাংলাদেশেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনার স্বপ্নে বিএনপি উল্লসিত। অপরদিকে ভারতের নতুন বিদেশনীতি কী হতে পারে তা বুঝতে সরকারের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ মেনে চলছে অপেক্ষার নীতি।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আশা করছে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরাল হবে। এ জন্য তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় থাকবে। দলটি মনে করে অসম্পন্ন চুক্তিগুলো বিশেষ করে তিস্তার পানিসহ সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে খুব শীঘ্রই। তবে সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন অনেকটাই উল্লসিত। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ক্ষমতার পালাবদলে ভারতের কংগ্রেস সরকারের এতদিনের একপেশে নীতির অবসান ঘটবে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে। উভয় দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ মনে করে, শুধু কংগ্রেসই নয় বিজেপির সঙ্গেও বরাবর আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ও আর্থিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া গঙ্গা চুক্তি, শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধাসহ দ্বিপক্ষীয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বিজেপি সরকারের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছিল। ভবিষ্যতেও নতুন সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পত্রিকাটিকে বলেন, ভারতের নির্বাচন নিয়ে আমাদের উল্লসিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। দুই দেশের বিরাজমান সম্পর্ক আগামীতে আরও ইতিবাচক ধারায় অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বে কোনো ফাটল ধরবে না। বিদায়ী ভারত সরকার বাংলাদেশকে যেসব আশ্বাস দিয়েছে এ সরকারও তা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করবে এতে সন্দেহ নেই। কংগ্রেসের মতো বিজেপির সঙ্গেও আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক রয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলেন, এর আগে যে একপেশে নীতি ছিল, বিশেষ করে কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের একটি অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল, নতুন সরকার তা পুনর্মূল্যায়ন করবে। নতুন সরকার একপেশে নীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। সম্পর্ক হবে দুই দেশ ও জনগণের সঙ্গে। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দিলি্ল সফর করে ওই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়টি বলে এসেছেন। ওই সময় তারাও এতে একমত পোষণ করেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পত্রিকাটিকে জানান, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়ে আমরা অভিনন্দন জানাই। আশা করি, এ বিজয়ের মাধ্যমে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে ভারতের নতুন সরকার উদ্যোগ নেবে। বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আমরা ‘গণতন্ত্রেরই বিজয়’ বলে মনে করি।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে নতুন সরকার কাজ করবে। নতুন সরকার বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবে। তিস্তার পানি সমস্যাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে তারা এগিয়ে আসবে। ভারতের নতুন সরকার সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলে আমরাও সহযোগিতা করব।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, ভারতের নতুন সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাই। ভারতের জনগণ যা সঠিক মনে করেছে তারা তা-ই করেছে। তাদের এ রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি দুই দেশের মধ্যে যে বিরাজমান সমস্যাগুলো রয়েছে তা বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে সমমর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে সমাধান হবে। ভারতের মতো বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে কংগ্রেসের মতো আওয়ামী লীগেরও পতন হতো। তবে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পতন হবে।