শৈশবের স্মৃতি মনে থাকে না কেন?
স্মৃতিশক্তির সৃষ্টি এবং সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তিবিশেষ তার পরিবর্তন সাম্প্রতিক গবেষণায় একটা আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এমনি একটি গবেষণায় গবেষকরা জানিয়েছেন, কেন আমরা আমাদের শৈশবের পুরনো বছরগুলোর সকল স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলি!
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে অসংখ্য স্মৃতি তৈরি হয়। কিন্তু আপনি একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, আপনার শৈশবের ২ অথবা ৩ বছর বয়সের কোন স্মৃতি খুঁজে পাচ্ছেন না।
একটি নতুন গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এই গবেষণা অনুযায়ী, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতি ধারণকারী ব্রেনের কোষগুলো নিউরাল পাথে পুরনো স্মৃতি মুছে নতুন করে স্মৃতি লিখতে শুরু করে। ফলে, ঐ পুরনো স্মৃতিগুলো পুরোপুরি মুছে যায় মস্তিষ্ক থেকে। এটা অনেকটা কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের মত কাজে করে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে এই গবেষণার প্রধান গবেষক ক্যাথরিন একারস বলেন, ‘শৈশবের স্মৃতি বিলোপ মানে স্মৃতির অনুপস্থিতি যা পরবর্তীতে বছরগুলোতে ঘটতে থাকে- বেশিরভাগ লোকই সাধারণত ২ অথবা ৩ বছরের শৈশবকালীন স্মৃতিশক্তি মনে করতে পারে না, কি ঘটেছিল তাদের শৈশবে!’
তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এর কারণ শিশুরা এই পর্যায়ে এসে স্মৃতি তৈরি করতে পারে না- শিশুরা তাৎক্ষণিক ভাবে যেমন, তিন বছর বয়সে দাদাকে দেখে প্রবল উৎসাহ নিয়ে চিড়িয়াখানা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলে যায়। কিন্তু ৫ বছর বয়সে এসে সে তার ঐ স্থানের অনেক স্মৃতিই আর আগের মতো করে মনে করতে পারে না, ঐ স্মৃতিগুলো খুব দ্রুতই ভুলে যায়।’
আমাদের স্মৃতিশক্তি সাধারণত মস্তিষ্কের হিপোক্যামপাল সার্কিটে স্টোর করা থাকে। বয়স বাড়লে নতুন স্মৃতি এই সার্কিটের পুরনো স্মৃতির জায়গাটি দখল করে এর উপর লিখতে লিখতে আগের স্মৃতিগুলোকে পুরোপুরি নিঃশেষ করে দেয়।
গবেষকরা পূর্ণবয়স্ক ইঁদুরের নিউরজেনিসিসের পর্যায় বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে এই তথ্য প্রকাশ করেন। নিউরজেনিসিসের নতুন স্মৃতির স্টাকচারকে নষ্ট করে দেয়। ইঁদুরটির ক্ষেত্রে গবেষকরা লক্ষ্য করেন, স্মৃতি বিলোপের কারণ স্মৃতির পর্যায়ক্রমিক ওভাররাইট হওয়া।