তদন্ত কমিটির কাছে ৭ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী শহীদুল যা বললেন
স্থানীয়দের দাবির মুখে সাত হত্যাকাণ্ড তদন্ত কমিটির গণশুনানি নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে সরিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে নেয়ার পর সাক্ষ্য দিলেন ১৯৮ ব্যক্তি, যাদের মধ্যে একজন অপহরণের ঘটনা দেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন। তৃতীয় দিনের গণশুনানি চলাকালে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেওয়া শেষে শনিবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে সে দিনের ঘটনার বিবরণ দেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহিদুল ইসলাম খোকন তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে এসে সাংবাদিকদের জানান, সে দিন (২৭ এপ্রিল) তার মেয়ের পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে র্যাবের দুটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তিনি জানান, সেখানে অন্য দুটি গাড়ি থেকে কয়েকজনকে ধরে র্যাবের গাড়িতে তোলা হচ্ছিল।
তিনি বলেন, “কৌতূহলবশত আমি মোটরসাইকেলটি থামিয়ে একজন র্যাব সদস্যকে বলি কি হয়েছে এখানে? ওই র্যাব সদস্য অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করে আমাকে বলেন, ‘এই বেটা সামনে বাড়া’।”
‘এরপর আমি ভয়ে সামনে চলে আসি, কিন্তু মনের মধ্যে কৌতূহলটি থেকেই যায়। আবারও মোটরসাইকেল থামিয়ে পেছনে তাকিয়ে ঘটনা দেখতে থাকি’।
-কী দেখলেন?
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মনে সন্দেহ হওয়ার কারণ হল- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি কোনো অভিযান চালিয়ে মাদক বা আসামি ধরে তাতে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার কথা না। তাই মনে সন্দেহ লাগল। গাড়ি থেকে নেমে আরেকটু সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম র্যাবের কয়েকজন সদস্য রাস্তার মাঝখানে থাকা গাড়িগুলোর দুই পাশে অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন বিশেষ কোনো অভিযান চলছিল। মাঝখানে সাদা প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা একজন একটি ছোট অস্ত্র হাতে প্রাইভেটকার থেকে হাইয়েস গাড়িতে কয়েকজন লোক উঠাচ্ছেন। যদি কেউ গাড়িতে উঠতে অনীহা প্রকাশ করছে, তখন সাদা গেঞ্জি পরা লোকটি তার হাতে থাকা ছোট পিস্তল দিয়ে মাথায় আঘাত করছিলেন।’
এই দৃশ্য আপনি কতক্ষণ দেখেছেন?
-আনুমানিক দুই থেকে তিন মিনিট হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা কাজ সেরে হাইয়েস গাড়িটি সাইনবোর্ড এলাকার দিকে চালিয়ে যায়। আমিও আমার মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই গাড়ির পিছু নিই। কিন্তু হাইয়েস গাড়ির গতির সঙ্গে তাল মিলাতে পারিনি। পেছনে পড়ে যাই। এরপর গাড়িটি কোথায় গেছে বলতে পারি না।
যখন আপনি দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখছিলেন তখন সেখানে গাড়ি কয়টা ছিল?
-একটা হাইয়েস গাড়ি ছিল, সাদা রঙের। সঙ্গে কয়েকটা সাদা রঙের গাড়ি, দুটা হবে সম্ভবত।
কাউকে চিনতে পেরেছিলেন?
-না, কাউকে চিনতে পারিনি।
কতজন মানুষ ছিল সেখানে?
-র্যাবের পোশাকে আনুমানিক ৪-৫ জন ছিলেন। সিভিল পোশাকে ছিলেন একজন। গাড়ির ভেতরেও দুজন র্যাব সদস্য ছিল বলে মনে হয়েছে। কারণ একজন (সাদা গেঞ্জি পরা) অন্য গাড়ি থেকে লোকদের গাড়িতে তুলছিলেন। ভেতরেও কেউ তাদের টেনে নিচ্ছিলেন বলে মনে হল।
আপনি কোন দিকে যাচ্ছিলেন?
-আমি সাইনবোর্ডের দিকে যাচ্ছিলাম। র্যাবের গাড়িটাও সাইনবোর্ডের দিকে গেল। আর লোকেশনটা আমি ক্লিয়ার বলতে পারছি না। কারণ আমি এখানকার স্থানীয় লোক নই। তবে, যেখানে ময়লা ফেলা হয় তার একটু সামনেই ঘটনাটা ঘটছে।
আপনি কতটুকু দূর থেকে ঘটনা দেখছিলেন?
-বড়জোর ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে ছিলাম।
কাউকে চিনেছিলেন?
-র্যাবের পোশাক চিনেছিলাম। মানুষ কাউকেই চিনি নাই।
এই ঘটনা কাউকে বলেছিলেন?
-এই খানে কী ঘটছিল তা তো আমি নিশ্চিত ছিলাম না। আমার মেয়ে গিয়ে তার মায়ের কাছে বলেছে। এর বাইরে কারও সঙ্গে কথা হয়নি।
এতদিন কাউকে বলেননি কেন?
-যে সাতজন মারা গেছে তারাই যে ওই জায়গা থেকে অপহরণের শিকার হয়েছেন সেটা তো আমি জানতাম না। এখন ঘন ঘন টেলিভিশনে ঘটনাটা দেখার পর মনে হল এই ঘটনা তো ওই ঘটনা।
এতদিন পর মনে হলো আপনার?
-আমি ভাই সাধারণ মানুষ। এই ঘটনার কথা যে আমার মুখ থেকে শোনা এত গুরুত্বপূর্ণ হবে আমি ভাবি নাই। এমনিতে টিভিতে নজরুল সাহেবের শ্বশুরকে দেখছি, শামীম ওসমানসহ বিভিন্ন জায়গায় গেছেন। এগুলো অনেক বড় জায়গা। আমি ছোট-খাটো মানুষ। এ হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় হওয়ার পর আমার বিবেক নাড়া দেয়। এ জন্যই আজকে সাক্ষ্য দিতে আসলাম।