ফের তদন্তের মুখে ইসলামী ব্যাংক
জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন এবং বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে আবারো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. ও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম তদন্তে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে ইসলামী ব্যাংক ও ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ অবস্থা জানানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে এ পরিদর্শন কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এরইমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ওপর পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে উদ্ঘাটিত অনিয়মের বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এবার আরো বৃহত্তর পরিদর্শন চালিয়ে সর্বশেষ অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে।
সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের অনিয়মের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধ করতে জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। ওই তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরই ধারবাহিকতায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. ও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিদর্শনে নামছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগের পরিদর্শনে উঠে এসেছে- ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের আড়ালে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করছে।
ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণা, গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্ট খুলে জাকাত সংগ্রহ করে বিতরণ এবং শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ায় উদ্বুদ্ধ করার নামে এ অর্থায়ন করছে ব্যাংকটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বাংলামেইলকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয় তাহলে নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ ওঠার পর কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে ব্যাংকটি। একই অভিযোগে এইচএসবিসি যুক্তরাজ্য, সিটি ব্যাংক এনএ, ব্যাংক অব আমেরিকা ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যাংকটির মালিকানা কাঠামোয় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাশেম আলী ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্য ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সদস্য (প্রশাসন)।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হান্নানও জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
ব্যাংকটির সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. সালেহ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের ভাই।
ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এর ১৯ জন দেশীয় ‘স্পন্সরের’ মধ্যে আট জন মৃত। তাদের উত্তরসূরি কারা বা তারা কী করেন- সে বিষয়ে কোনো তথ্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি।