‘যেভাবেই হোক’ শেষ ধাপেও জয় চায় আ.লীগ
ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে চতুর্থ উপজেলা পরিষদের পঞ্চম পর্বের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে। আর এসব অভিযোগের তীর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দিকেই। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে হোঁচট খাওয়া দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তৃতীয় দফায়। আর এই তৃতীয় দফা নির্বাচনেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা, কেন্দ্রদখল, ভোট জালিয়াতি, ব্যালটবাক্স ছিনতাইসহ নানা অনিয়ম হয়। এমনকি নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ১৩ জন নিহতও হয়েছেন।
প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির অভিযোগ, প্রশাসনকে ব্যবহার করে কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেদের ঘরে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শেষের তিনটি ধাপে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে বিজয় ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সংশ্লিষ্টতার দিকেই ইঙ্গিত করে দলটি। সেই সঙ্গে তারা জানায়, নির্বাচনের মাঠে কমিশনের আচরণকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
শুধু বিএনপিই নয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের তথ্য মতে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলা গেলেও বাকি ধাপগুলোকে গ্রহণযোগ্য বলা যায় না। শেষ তিন ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ৫৩% ভোট জালিয়াতি, ৫০% সহিংসতা ও ৭৬% ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রথম এই দুই ধাপে বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু তৃতীয় দফা থেকে সহিংসতা ও অনিয়মের মাত্রা বেড়েছে ভয়াবহ রকম। আর এই মাত্রা বৃদ্ধির আনুপাতিক হারে বেড়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়।
তবে নির্বাচন যেভাবেই হোক না কেন মোট পাঁচ দফায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ২২৩টি উপজেলায় চেয়াম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে একই পদে বিএনপি সমর্থিতরা ১৫৮টি ও জামায়াত ৩৬টি উপজেলায় বিজয়ী হন। এতে আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি-জামায়াত সম্মিলিতভাবেও ২৯টি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ কম পেয়েছে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম দফায় আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীরা ১৪৩টি চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে এই তিন দফায় পিছিয়ে পড়ে বিএনপি সমর্থিতরা ৬১টি ও জামায়াত ১৬টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপ অর্থাৎ ষষ্ঠ পর্বেও যেভাবেই হোক জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর তাই কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।
দীর্ঘদিন বিরতি দিয়ে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ষষ্ঠধাপে ১২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী সোমবার। এ ধাপে ১৯৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২ জন।
আওয়ামী লীগ সূত্র মতে, একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে দল থেকে এবার কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদকে। সেক্ষেত্রে অনেকটা সফলও হয়েছে জেলার নেতারা। দু’এক জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও তারা তেমন শক্তিশালী নয়। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে রাতদিন প্রচার-প্রচারণা ও ব্যাপক গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে ভোট প্রার্থনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ জন্য শেষ পর্বের নির্বাচনী ফসল আওয়ামী লীগের ঘরেই আসবে বলে মনে করছেন নেতারা।
সূত্র আরো জানায়, শেষ পর্বের ১২ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। আর এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি হাতছাড়া করতে চায় না আওয়ামী লীগ। পাঁচ পর্বের ফলাফলে এগিয়ে থাকায় মনোবল আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙাও রয়েছে দলটির নেতাকমীদের। স্থানীয় নির্বাচন হলে ও প্রচারণায় বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং জামায়াত-বিএনপির সহিংসতা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য তুলে ধরা হয়েছে ভোটারদের সামনে।
এ বিষেয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রথম দুই পর্বের নির্বাচনে নিজেদের ভুলের কারণে আমাদের পরাজয় হয়েছে। তবে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ায় শেষ তিন ধাপে দল সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করছেন। শেষ পর্বেও আমরা জয়ী হবো।’
তিনি বলেন, ‘জয়ের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে নেতাকর্মীদেরকে কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিগত পাঁচ পর্বের নির্বাচনের ফলাফলেও আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে। এবার তার ব্যতিক্রম হবে না বলেও আশা করি।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলামেইলকে বলেন, ‘শেষ পর্বের নির্বাচনের দীর্ঘদিন সময় পেয়েছি আমরা। একক প্রার্থী নিশ্চিত করা, সঠিক ব্যক্তি মনোনয়ন দেয়া, প্রচার-প্রচারণায়সহ সব কাজই ভালোভাবে করতে পেরেছি। আশা করি সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীই বেশি জয়লাভ করবে।’
ষষ্ঠ ধাপে যে উপজেলাগুলোতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হলো- রংপুর সদর, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা; সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ; বরগুনার তালতলী; রাজবাড়ীর কালুখালী; গাজীপুর সদর; টাঙ্গাইলের বাসাইল; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর; কুমিল্লার আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ।