জামালপুরের মেলান্দহে দু’টি স্কুলের ক্লাশ চলছে গাছতলায়
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মলিকাডাঙ্গা ও টুপকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করছে গাছতলায়। যতই দিন যাচ্ছে স্কুলদ্বয়ের দুরাবস্থা ক্রমেই বাড়ছে।
মলিকাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক বিল্ডিং থাকলেও ক্লাশ করতে হচ্ছে বাইরে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে আকাশে মেঘের গর্জনের শব্দেই স্কুল হয় ছুটি। সরেজমিনে দেখা গেছে স্কুলের সামনে বড় আকারে দু’টি ফুলের গাছ কখনো বা পাশের বাড়ির গাছতলায় চলছে পাঠদান। গত ৩বছর যাবৎ চলছে এ চিত্র। প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান-১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ভবনের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ছাদ খসে পড়তে শুরু করেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিল্ডিং-এ বসে থাকতে পারছেনা। ছাদ খসে শিশুদের উপর পড়ায় আতংকিত শিশুদের ক্লাশে নিতে পারছিনা। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বাইরের গাছতলায় ক্লাশ করতে হচ্ছে। বেশী রোদ থাকলেও যেমন সমস্যা। বৃষ্টি থাকলেও সমস্যায় পড়ছি। স্কুলের দুরাবস্থার মধ্যে ইতোমধ্যেই অভিভাবকরা স্কুল থেকে শিশুদের অন্যত্র ভর্তির জন্য সরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে ছাত্র-ছাত্রী ঝরে যাচ্ছে। গত বছর শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল ১০১। সমাপনী পরিক্ষায় ১৭জনের মধ্যে ১৬জন পাশ করেছে। এ বছর ছাত্র আছে প্রায় ৮০জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন ৪জন। বিল্ডিং সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন খান জানান-নবনির্মিত বিল্ডিংয়ের মেয়াদ থাকে ৫০/৬০বছর। এর আগে বিল্ডিং নষ্ট হলে নির্মাণ ত্র“টি থাকতে পারে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জুয়েল আশরাফ জানান- স্কুলটি এখনো পরিত্যাক্ত ঘোঘণা করা হয়নি। সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান-এ স্কুলটি অনেক পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী। এই স্কুলের ছাত্ররা দেশের অনেক উপরিস্তানে কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে বর্তমান যুব উন্নয়নের উপ-পরিচালক আ: রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, নূরুজ্জামান ও খালেদ আল হোসেন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের নাম উলেখযোগ্য। বিল্ডিং সমস্যার সমাধান নাহলে সামনের বছর শিক্ষার্থী থাকবেনা। অপরদিকে একই উপজেলার টুপকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে আরেক চিত্র। স্কুলের পৃথক দু’টি ভবনে রুম হচ্ছে-৫টি। এরমধ্যে একটি অফিস রুম। বাকি ৪টি রুমে সংকুলান নাহওয়ায় গাদাগাদি করে ক্লাশ করতে হচ্ছে । প্রচন্ড গরমে এভাবে ক্লাশ করা দুস্কর বিধায় ক্লাশ করতে হচ্ছে গাছতলায়। চলতি বছরে টুপকারচর প্রাইমারী স্কুলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় তিনগুন শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। এরপরও দৈনিক উপস্থিতির হার শতভাগ। প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান লিচু জানান-প্রাকপ্রাইমারি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিরই শাখা প্রয়োজন। মাস্টার ও ক্লাশ রুমের অভাবে তা করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও জানানো হয়েছে। এখনো কোন সাড়া পাইনি। নিয়মিত শ্রেণি শিক্ষকের পাশা পাশি কাব শিক্ষকেরও একান্ত প্রয়োজন। কাব শিক্ষকের অভাবে কার্য্যক্রম হচ্ছেনা। ১৯৭১সালে স্কুলটি স্থাপিত হয়। সরকারি করণ হয় ১৯৮৬সালে। মরহুম আশেক মাহমুদ তালুকদার স্কুলের জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। চরাঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াতে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের কল্যাণে ব্যাপক সাড়া জাগে। প্রায় ৬শ’ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক দরকার ১১জন। শিক্ষক ৪ শিক্ষিকা আছেন ৩ জন।
সমাপনী পরিক্ষার ফলাফল, ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে টুপকারচর স্কুলের সুনাম বরাবরই শীর্ষে। ফলাফলের তালিকায় বিগত ৫বছরের মধ্যে সমাপনী পরিক্ষায় কেও ফেল করেনি। গত বছর ৪৬জনের মধ্যে বৃত্তি পেয়েছে ২জন। বাকিরাও উত্তীর্ণ হয়েছে। মেধা তালিকায় এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বরাবরই অবদান রাখছে। ক্লোজআপ-১ কণ্ঠ শিল্পী রাজিব টুপকারচর স্কুলেরই ছাত্র। এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিটিভিতে নাটক, জারী-সারী গানও পরিবেশন করে থাকে। বর্তমান স্কুলের সহকারি মাস্টার আসমা খাতুন, ইসরাত জাহান এই স্কুলেরই ছাত্রী ছিলেন। বর্তমানে মোর্তজা খাতুন ও সুরাইয়া খাতুন দেওলাবাড়ি সরকারি প্রাইমারীতে কর্মরত আছেন। এছাড়া ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রভাষক আনোয়ার হোসেন, জামালপুর সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজের কেমিস্ট্রি প্রভাষক, দেশের বাইরে তুরস্কের বিদ্যাপীঠেও অবস্থান করছেন কবি-লেখক বোরহান উদ্দিন। যারা এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুয়েল আশরাফ জানান-এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিরিক্ত বিল্ডিং করার প্রস্তাবনার কথা কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে।