উত্তাপ ছড়াচ্ছে দেশের পার্বত্য রাজনীতিতে
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে ভিন্ন। দেশের অন্য সব স্থানে যখন উন্নয়ন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন করে চলেছে দিনের পর দিন। কিন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে এর উল্টো। সরকার যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তখন এসব প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে স্থানীয়দের একটি অংশ। এ ইস্যুতে শুরু হয়েছে পক্ষে বিপক্ষের রাজনীতি।
সম্প্রতি বহুল প্রতিক্ষিত রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষে রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তির প্রশাসনিক অনুমোদন এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সলর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুয়েক মাসের মধ্যে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠান দুটি কার্যক্রম শুরু হরে। এদিকে মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের খবরে স্থানীয় বাঙ্গালীসহ সাধারণ মানুষ সরকারকে অভিনন্দন জানালেও পাহাড়িদের একটি অংশ এ উদ্যোগের বিরোধীতা করছে। পার্বত্য এলাকায় বড় প্রতিষ্ঠান হলে এখানে পাহাড়িদের সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে এমন আশঙ্কা থেকে এ বিরোধীতা। এদিকে প্রতিষ্ঠান দুটির কাজ আরো ত্বরান্বিত করার দাবিতে রাঙামাটিতে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে মিছিল, সমাবেশ ও স্মারকলিপি দিয়েছে। এদুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন নিয়ে পার্বত্য রাজনীতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
পার্বত্যবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি সফরে এসে রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফলক উম্মোচন করেন। অপেক্ষার পালা শেষে চলতি মাসে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ৫০ জন ছাত্র ভর্তির প্রশাসনিক অনুমতি দেয় সরকার। অপর দিকে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য রাঙামাটিতে তিনটি প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন শেষ হয়েছে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে ভিসি। এর মধ্য দিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। রাঙামাটি সফরে এসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি জানান শীঘ্রই অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রম শুরু হবে।
কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরুর পর এর পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের প্রধান সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আপত্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়িদের একটি অংশ দুটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি জেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। জেএসএস এর পৃষ্ঠ পোষকতায় রাজধানীতে নাগরিক সমাজের ব্যানারে কর্মসুচি পালিত হয়েছে।
জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজিব চাকমা বলেন, জেএসএস নীতিগতভাবে মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে নয় আমারা মনে করে এ মুহুর্তে রাঙামাটি এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার আগে এ দুটি বড় প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থাপিত হলে স্থানীয় অধিবাসীদের রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ত্রিজিনাথ চাকমা বলেন, রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে স্থাপন করা হচ্ছে। পাহাড়িদে দমন করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন সরকারের উচিত আগে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করে পাহাড়ের মানুষের আস্থা অর্জন করে তার পরে তাদের সম্মতি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।
অপরদিকে রাঙামাটিতে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমেছে মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম দ্রুত করার দাবিতে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতারাও এ দুই প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পক্ষে একমত পোষন করেছেন।