ফুটপাত দখল করে চলছে মৌসুমি ব্যবসা : শেরপুরের ফুটপাত অবৈধ দখলবাজদের নিয়ন্ত্রণে
শহর জুড়ে চলছে প্রতিযোগিতামূলক ফুটপাত দখল। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। এতে পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।ইংরেজী (Foot Path) শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ পায়ে হাঁটার পথ বা পায়ে চলার পথ। অর্থাৎ নিরাপদ পায়ে হাঁটার জন্য যে পথ। এটা কারো ভোগ দখলের জায়গা নয়। কিন্তু পুরো শেরপুর পৌরসভা জুড়ে তার ভিন্ন চিত্র। শহর জুড়ে চলছে ফুটপাত দখলের হিড়িক। কতিপয় ব্যবসায়ীরা পাল্লা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এসব দখল দারিত্ব। ফলে জনসাধারণের স্বাভাবিক পথ চলায় বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে ফুটপাতের উপর হকার মার্কেট বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণ করছে। অনেকেই দোকানের দুই-তৃতীয়াংশ ফুটপাতের উপর নিয়ে এসেছে। তাছাড়াও অনেকে ফুটপাতের উপর সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে যান চলাচল বিঘিœত করছে। আবার কেউবা ফুটপাতের উপর ইট, বালি, রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী জড়ো করে রেখেছে।
শেরপুর পৌরসভা প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা। তবে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, পৌরকর্তার শপথ গ্রহণের পর থেকে কর্তৃপরে লোক দেখানো কিছু কার্যক্রম ছাড়া মাষ্টার প্ল্যানের তেমন কোন কার্যক্রম এই পর্যন্ত নজরে পড়েনি। যদিও তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল অনুন্নত পৌর এলাকাকে ঢেলে সাজানো কিন্তু পৌরকর্তাদের স্বপ্ন পূরণ হলেও জনগণের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। রাস্তায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ খুব সহজেই দৃষ্টি গোচর হয়। ঐ সব ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ফলে স্বাস্থ্যকর নগরী চারপাশে অস্বাস্থ্যের ভূত ভর করে। ঠিকমত জ্বলে না অধিকাংশ সড়ক বাতি। ফুটপাতগুলোর অবস্থা দেখলে মনে হয় কর্তৃপ কতিপয় ব্যবসায়ীদের লিজ দিয়েছেন। ফুটপাতের উপর হকার মার্কেট করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কতিপয় ব্যবসায়ী। ফলে নিরাপদ চলাচলে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এমনিতো উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি। তার মাঝে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। নিরাপদ চলাচলের পথ ফুটপাতগুলোও কতিপয় ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় সাধারণ জনগনের মনে চাপা ােভ বিরাজ করছে। জনগন ও ভোক্তভুগী মহলের ধারণা পৌর কর্তৃপরে সাথে ঐসব দখলদারদের যোগসাজস রয়েছে। পৌরকর্তারা তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের মাসুহারা নিয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন বাসটার্মিনাল থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত ফুটপাত স্টীল দোকানীদের দখলে, কলেজ মোড় থেকে খাদ্য গুদামের চারপাশের ফুটপাত দখল করে ফুলের ব্যবসা, মনোহারী দোকান, চা স্টল, সেলুন দোকানদারদের দখলে, খাদ্য গুদাম থেকে খরমপুর মোড় পর্যন্ত মেশিনারীজ দোকানীদের দখলে, খরমপুর মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত মৌসুমী ফল ও কাপড় দোকানীদের দখলে, অপরদিকে কলেজ মোড় থেকে নয়ানীবাজার মুড়ি দোকানী ও সব্জি বিক্রেতাদের দখলে, নয়ানী বাজার থেকে গোয়াল পট্টি পর্যন্ত প্রতিটি হোটেলে মালিকরা ফুটপাত দখল করে চুলা নির্মাণ করে জিলাপী বাজা ও মিষ্টি তৈরির কাজে, গোয়ালপট্টি থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত ফুটপাত শিশু বাচ্চারদের কাপড় বিক্রি করে, থানা মোড় থেকে নবীনগর পর্যন্ত মোটরগাড়ী মেরামত ও ফিস ফিড দোকানীদের দখলে, আবার থানা মোড় থেকে জিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত অটো-রিক্সা, সিএনজি ও ভাড়া চালিত মিনি বাস ও পাইভেটকার ব্যবসায়ীদের দখলে। এছাড়াও পৌর শহরের বাকী রাস্তা-ঘাটের ফুটপাত ব্যবহৃত হয় বাড়ী-ঘর ও মার্কেট নির্মাণকারী এবং ইট বালু ব্যবসায়ী নামে প্রভাবশালীদের দখলে। শহরের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফুটপাত দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে দখলদাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীণ শিক্ষাবিদ জানান, সড়ক দূর্ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ফুটপাত দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি। তবে যেভাবে অবৈধ দখলে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্বক ও হুমকি স্বরূপ। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ফুটপাত দখলে নিয়োজিত যা অত্যন্ত দূঃখজনক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারী কর্মকর্তা জানান, ফুটপাত হচ্ছে সাধারণ জনগনের চলাচলের পায়ে হাঁটার পথ। কতিপয় ব্যবসায়ীরা দুর্লোভের বশবর্তী হয়ে জনসাধারনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
শেরপুর জজ কোর্টের তরুণ আইনজীবী আলমগীর কিবরিয়া কামরুল ও শাহনুর রহমান রুবেল জানান, সমস্ত অন্যায় দখলই মারাত্মক অপরাধ।
ফুটপাত দখলের ফলে অধিকাংশ অটোরিক্সা, সিএনজি রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করায় প্রতিনিয়ত পায়ে হাটারত লোকজন আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে। ফুটপাত দিয়ে এখন আর শিশুদের নিয়ে চলাচল করা খুবই কঠিন, দোকানীদের ফুটপাত দখলের প্রতিযোগিতার কারণে জনসাধারণের স্বাভাবিক পথ চলা ব্যাহত হচ্ছে।