আওয়ামী লীগের মাথায় হাত : বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ৮২ কোটি ভোটারের শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন হয়ে গেল। ৩০ বছরের মধ্যে একক দল হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টি শাসন ক্ষমতায় ফিরে এলো। এই ঐতিহাসিক বিজয়ের মহানায়ক ভালো-মন্দ উভয়দিকে আলোচিত শ্রী নরেন্দ্র মোদি। এই নেতার সঙ্গে তেমন ওঠাবসা ছিল না। কিন্তু তার আশপাশের নেতারা অনেকেই পরিচিত বন্ধুবান্ধব, হিতৈষী। ভারতে একক দলীয় শাসনের অবসান হয়েছিল বহুদিন আগে। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আমরা যখন প্রতিরোধ সংগ্রামে তখন হঠাৎ করেই ‘৭৭-এর নির্বাচনে কংগ্রেস পরাজিত হয়। যখন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সামনে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না, তখন সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ সবাইকে নিয়ে জনতা পার্টির জন্ম দেন। সেখানে যেমন শ্রী চরণ সিং ছিলেন, ছিলেন হরিজন নেতা জাগজীবন রাম, নিলম সঞ্জীব রেড্ডি, ভিপি সিং, অটল বিহারি বাজপেয়ি, এল কে আদভানি, চন্দ্র শেখর, কামরাজ, জর্জ ফার্নান্ডেজ, কর্পুরি ঠাকুর, রাজ নারায়ণ, তেমনি প্রবীণ নেতা শ্রী মোরারজি দেশাই। বড় বড় প্রতিষ্ঠিত নেতাদের কে জনতা পার্টিতে ছিলেন না সেটাই খুঁজে বের করতে হতো। নবগঠিত জনতা পার্টি বিজয়ী হয়েছিল, পরাজয় হয়েছিল কংগ্রেসের। এমনকি উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলিতে অতি সাধারণ নেতা রাজ নারায়ণের কাছে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী হেরে গিয়েছিলেন। নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করায় ইন্দিরাজি ১৯৭৭ সালে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যতদূর মনে পড়ে সে নির্বাচনে কংগ্রেস সিট পেয়েছিল ১৪৩টি। ইদানীং কোনো কোনো পত্রিকায় ১৫৩টি দেখছি। ৪৩ আর ৫৩ যাই হোক এবারের মতো নিরঙ্কুশ পরাজয় ছিল না। যদিও পরে অন্ধ্রের শ্রী নরসিমা রাওয়ের আসন থেকে ইন্দিরাজি লোকসভায় আসেন। তিনি হন বিরোধী দলের নেতা। ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনে ইন্দিরা গান্ধীর খুব বেশি সময় লাগেনি। জনতা পার্টির খাওয়া-খাওয়িতে শ্রী মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী হন জাঠ নেতা শ্রী চরণ সিং। আবার নির্বাচন হয় ‘৮০-র জানুয়ারিতে। শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ জনতা পার্টির নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নেওয়ায় বিভক্ত নানা উপদলে জনতা পার্টি তেমন ভালো করতে পারেনি। কংগ্রেস আবার সাড়ে তিনশর বেশি সিট নিয়ে দিলি্লর ক্ষমতায় আসে। এরপর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন। ভারতের বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একটা সুযোগ আসে। কিন্তু বাতাসে শোনা যায় কোনো বাঙালি নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। তাই এক সময়ের অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নরসিমা রাও হন প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস ৪০০’র বেশি সিট পায় ও প্রধানমন্ত্রী হন শ্রী রাজীব গান্ধী। রাজীব গান্ধী ঘাতকের হাতে নিহত হলে কংগ্রেসের প্রভাব খর্ব হতে থাকে। এতে আঞ্চলিক দলগুলোর কদর বাড়ে। সেক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশের মায়াবতী, বিহারের লালু প্রসাদ যাদব, অন্ধ্রের জয়ললিতা, পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির কদর বাড়ে। এবারও অনেকের ধারণা ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি বা তাদের এলাইন্স ২৫০-এর নিচে সিট পেলে আঞ্চলিক দলের কদর বাড়বে। সেক্ষেত্রে অন্ধ্রের মাইজি জয়ললিতা, উত্তর প্রদেশের বহিন মায়াবতী, পশ্চিমবঙ্গের দিদি মমতা ব্যানার্জি প্রাধান্য পাবেন। এমনকি তারা তিন নেত্রী ৭০-৮০ এর কাছাকাছি সিট পেলে মিলঝুল সরকারের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন। উত্তর প্রদেশের মায়াবতী ছাড়া বাকি দুজন দেখানোর মতো ফল করেছেন। অন্ধ্রে ৩৯টির মধ্যে ৩৭টি পেয়েছেন জয়ললিতা। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টির মধ্যে ৩৪টি তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ৪, বামফ্রন্ট ২, ভারতীয় জনতা পার্টি ২।
কংগ্রেসের অভিজিৎ মুখার্জি ও প্রিয় রঞ্জন দাস মুন্সীর স্ত্রী দিবাদাস মুন্সীর এই জয়লাভ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
অভিজিৎ আমার খুবই প্রিয়। অভিজিৎ যখন স্কুলে পড়ে তখন আমি দিল্লিতে। পড়ালেখা শেষে দুর্গাপুরে চাকরি নেয়। বেশ কয়েক বছর চাকরি করে সে কংগ্রেসের রাজনীতিতে পা দেয়। প্রণবদা রাষ্ট্রপতি হলে অভিজিৎ উপনির্বাচনে কংগ্রেস থেকে প্রার্থী হয় এবং জয়মাল্য ছিনিয়ে নেয়। প্রণবদার বদনাম ছিল, সরাসরি ভোটে জিততে পারেন না। কিন্তু স্রষ্টা তাকে সে অপবাদ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। শেষ বয়সে পরপর দুবার জঙ্গীপুর থেকে জিতেছেন। কিন্তু তার ছেলের রাজকপাল, সে প্রথমবারই উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। তখনো অনেকে বলার চেষ্টা করেছে, রাষ্ট্রপতির ছেলে, তাই উপনির্বাচনে জিতে গেছে। কিন্তু এবার যখন কংগ্রেস মুছে যাওয়ার পথে তখনো তার জয়ে খুবই আনন্দিত হয়েছি। তাই অভিজিৎকে ফোন করেছিলাম। অভিজিৎ আমায় স্যার বলে সম্বোধন করায় বলেছিলাম, কাকু কি কখনো স্যার হয়? অভিজিৎ বলেছিল, ‘আমরা তো জেনারেলদের স্যার বলেই ডাকি কাকু। তাই তোমাকেও বলে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে করো না।’ খুব অল্প ভোটে অভিজিৎ পাস করেছে। তবু তো পাস করেছে। এ জন্য পরম দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের প্রতি শুকরিয়া জানাচ্ছি। ফোন করেছিলাম অভিজিতের বোন শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নীকে। বাঘা কাকু বলতেই মনে হয় ফোন নিয়ে লাফিয়ে উঠেছিল, ‘তুমি কেমন আছ কাকু? তোমার কথা সব সময় মনে করি।’ ওকে আমি মা বলেই ডাকি। ওর ছোটবেলার অনেক গল্পের বই এখনো আমার কাছে আছে। বলেছিলাম, অভিজিৎকে ফোন করেছিলাম, ও আমায় স্যার বলে সম্বোধন করেছে। মুন্নী বলেছিল, ‘ও অমনই। তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।’ দাদা, দিদির সঙ্গেও কথা হয়েছে। নিশ্চয়ই তারা খুশি হয়েছেন। আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোয়ার-ভাটার পানি নয়। এ সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় কিছুটা অবাক হয়েছি। ভারত নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কংগ্রেস সমর্থিত জনসমর্থনহীন। অত বিপুল ভোটে নির্বাচিত কোনো সরকার প্রতিবেশী এমন অপ্রিয় সরকারের বদনামের বোঝা বইবে কেন? এ জন্য মুখে যাই বলুন তাদের যে গলা শুকিয়ে গেছে এটা সহজেই বোঝা যায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং সরকার যে বলছে, নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির বিপুল বিজয়ে বিএনপির খুশি হওয়ার কারণ নেই, তাও ঠিক। তাদের দেশে সরবরাহ করার সময় ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ার পরও তারা বিএনপির সঙ্গে খুব বেশি সম্পর্ক করতে যাবেন এটা বোকারও ভাবা উচিত না। তাছাড়া বিএনপির নেত্রী ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যথাযথ সৌজন্য দেখাতে যে ব্যর্থ হয়েছেন এটাও খুব সহজে তারা ভুলবেন না। এখন ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার শ্রী প্রণব মুখার্জিকে কংগ্রেসের নেতা হিসেবে বিবেচনা করবেন না। তাকে তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবেই বিবেচনা করবেন। তাই বিএনপিরও খুব বেশি উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই। আমার তো মনে হয়, বিজেপি সরকারের আমলেই বরং ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক যথার্থই উন্নত হবে। তিস্তার পানি শ্রী মনমোহন সিং যদি মমতা ব্যানার্জির জন্য দিতে না পেরে থাকেন তাহলে এ নির্বাচনে তো মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গ দখল করেই ফেলেছেন। তাহলে এই নতজানু সরকার তিস্তার অতিরিক্ত এক ছটাক পানি আনবে কী করে?
অত জনমত থাকার পরও অনেক বুদ্ধিজীবীর ধারণা ছিল মোদি হাওয়া যতই প্রবল হোক তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টিকে কারও না কারও সঙ্গে আপস করতে হবে। ভারতের জনগণ সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ কারও হাতে দেয়নি। সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিয়ে নিয়েছে। এ নির্বাচন থেকে আমাদের কিছু তো শেখার আছে। নির্বাচনী ব্যর্থতার সব দায়ভার শ্রীমতী সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী যেভাবে নিজেদের ওপর নিয়ে ভোটারদের ক্ষমতার জয় বলেছেন সেটা আমাদের একটু তলিয়ে দেখা দরকার। ভোটহীন সমর্থনহীন রাজনীতি যারা করতে চায় সামনে তাদের বড় দুর্দিন। এটাও তো দেখার বিষয়, রাজীব গান্ধীর মৃত্যুদিন বলে ২১ মে শপথ নেওয়ার মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পরও তারা শপথ নিচ্ছে না। ভারতের প্রেক্ষাপটে শ্রী রাজীব গান্ধী আর আমাদের দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উচ্চতার নন। একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মদাতা হিসেবে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর উচ্চতা অনেক বেশি, সারা দুনিয়ায় বিশ্ব নেতা হিসেবেও বেশি। তার নির্মম মৃত্যুর দিনে এখনো বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করেন। এ হলো ভারতীয় সংস্কৃতি আর আমাদের অমানবিক সংস্কৃতি। মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে শ্রীমতী সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধীকে নেওয়ার জন্য সব রকম চেষ্টা চলছে এবং তারাও উপস্থিত হবেন। কিন্তু আমাদের দেশে সম্পূর্ণ তার উল্টা। কেউ নিজে থেকে গেলে কার্ড খোঁজে। কার্ড ফেলে গেলে ফিরিয়ে দেয়। যেমন মহাজোট সরকারের পহেলা ইফতার মাহফিল থেকে কার্ড নিয়ে যাইনি বলে ফিরে এসেছিলাম। শুনেছিলাম চেনা বামুনের পৈতা লাগে না। আমাদের দেশে এখন তেমন নয়। নিজেরাই বর-কনে। বরযাত্রীরও ধার ধারে না। এমন গাওজুরি বেশি দিন চলে না। যে যতই বলুক, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের নির্বাচনের একটি বড়সড় প্রভাব অবশ্যই পড়বে। বহুদিন ভারতে নির্বাসনে থেকে ভারতীয় সমাজ, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যেভাবে দেখেছি তাতে অনেক পণ্ডিত যেমন মনে করছেন শ্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত উলটপালট হয়ে যাবে- কেন যেন আমার তেমন মনে হয় না। বরং আমার মনে হয় তার নেতৃত্বে একটা দারুণ গতি আসবে। সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলমানরা একটা ভালো অবস্থানে থাকবে। কারণ দায়িত্ব মানুষকে অনেক বড় করে। আমাদের ছিটেফোঁটা দু’চারজনের ক্ষেত্রে তেমন না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় জায়গায় গিয়ে ছোট মানুষও বড় হয়। ছোট চিন্তা করে না। অপেক্ষায় থাকলাম দেখা যাক কতটা কী হয়। নতুন সরকারের মহানায়ককে বাংলাদেশের জনগণ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, পরিবার-পরিজন ও আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
শেষ পর্বের ১২ বা ১৩টি উপজেলা নির্বাচন গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। যখন লিখছি তখন ফলাফল নিয়ে বলার কিছু ছিল না। তবে পত্র-পত্রিকা শঙ্কা করছে গত কয়েক পর্বের মতো এ পর্বেও সরকারি দল বাড়াবাড়ি করবে। করতেও পারে। মওত যখন আসে ফিরিয়ে রাখা যায় না। তাই বাড়াবাড়ি করলে আদৌ পার পাবে কিনা বলতে পারি না। বাতি নেবার আগে কিছুটা তো দবদব করে। টাঙ্গাইলের বাসাইলেও একটি নির্বাচন হচ্ছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বাসাইল উপজেলা সভাপতি নাজমুল হুদা খান বাহাদুর আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। নির্বাচনী প্রচারণা ভালো হয়েছে। রাজনীতির অ আ ক খ যদি শিখে থাকি রাস্তাঘাটে মানুষজনকে যেভাবে দেখেছি তাতে বিপুল ভোটে তার জেতার সম্ভাবনা। লেখাটি ছাপার আগেই নির্বাচনী ফলাফল বেরিয়ে যাবে। তাই একটা উপজেলার নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। মাথা ঘামাতে চাই দেশের আইনশৃঙ্খলা, গুম, খুন নিয়ে। শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের নামে খুনের কোনো অভিযোগ নেই। ৫৪ ধারায় তাদের গ্রেফতার করে কোর্ট থেকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগই যদি না থাকে রিমান্ড কেন? এমন বাহানার দরকার কী? কোনো অন্যায় না করলে র্যাবের অত উচ্চ পদ থেকে তাদের তুলে আনা হলো কেন? সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া কেন? কোনো অপরাধ ছাড়া সেনাবাহিনীর কোনো চাকরি থেকে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া যায়? গায়ের জোরে ওভাবে অবসর দিলে একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীর কোনো মনোবল থাকবে? এমন কানামাছি কেন? মানুষ বড় ত্যক্ত-বিরক্ত। এত সুন্দর একটা বাহিনী, কত ভালো ভালো কাজ করেছে। তাদের দু’চারজনের জঘন্য বর্বরতার জন্য পুরো একটা বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে, এটা কেউ চায় না। স্বাধীনতার পরপর জাসদ গণবাহিনীর অন্যতম নেতা বর্তমান তথ্যমন্ত্রী যেভাবে সরকারের মুখপাত্র হয়ে বিরোধী দলের নেত্রীর র্যাব বিলুপ্তির দাবিকে খণ্ডন করার চেষ্টা করছেন তা খুবই হাস্যকর। তিনি বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী তো কত কিছু করেছে তাদের বিলুপ্তি চাওয়া হয়নি কেন?’ সেনাবাহিনী আর র্যাব এক নয়। সেনাবাহিনী আমাদের গৌরব, গর্বের ধন। তারা তাদের বিলুপ্তির দাবি ওঠার মতো কোথাও কোনো দিন একটি কাজও করেনি। বিচ্ছিন্ন ঘটনা দু’চারটা যা ঘটেছে তা সেনাবাহিনীর স্বার্থান্বেষীরা করেছে, বহিষ্কৃতরা করেছে। আসলে আগরতলা আর চকিরতলা উপমা দিতে আমরা বড় বেশি মজা পাই। বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্তদের সহানুভূতি জানালে দেশদ্রোহিতা হয়। খাদ্যমন্ত্রী আলবদরের ভাই খাদ্য সমস্যার কথা না বলে আইনের বিষয় কথা বললে কিছুই হয় না। আমরা আশা করব সরকার, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাড়াতাড়িই এদিকে ধ্যান দিবেন। এখনই র্যাবের বিলুপ্তি নয়, দরকার তাদের পেটুয়া বাহিনী না বানিয়ে যথাযথ আইনের অধীন রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত করা।
সেদিন ১৭ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তার অন্তরের কান্না শুনলাম আর ভাবলাম সময় কি জিনিস। ‘৮০ সাল তখনো দিলি্লর ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাহাজ উঠানামা শুরু হয়নি। পালাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আকাশে উড়েছিলেন। ঢাকায় আবহাওয়া ছিল খুবই দুর্যোগপূর্ণ। প্রবল দুর্যোগের মধ্যেও মানিকমিয়া এভিনিউয়ে লাখো মানুষ তাকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দিয়েছিল। সেই দুর্যোগপূর্ণ সভায় তিনি প্রাণভরে কেঁদেছিলেন। দিলি্ল থেকে যখন বিমানে ওঠেন তখন আমাকে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। আমার শুষ্ক চোখ-বুক অশ্রুতে ভেসে গিয়েছিল। সেদিন যারা তার পাশে ছিলেন তাদের কেউ এখন নেই। আশপাশে যারা আছেন তাদের অনেকেই ছিলেন ‘৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের পদতলে ভেংচি কাটার দলে। কেউ খুন করলেও যে এক সময় স্বার্থের টানে কোলে নেওয়া যায় বাংলাদেশের রাজনীতি তার প্রমাণ।
আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা কালীগঞ্জের ময়েজউদ্দিন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘাতকদের হাতে নিহত হয়েছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেন জেনেশুনে জীবন দিয়েছিল। ডা. মিলনের আত্মদান স্বৈরাচার পতনের নিয়ামক। সেই স্বৈরাচার কোলে নিয়ে বর্তমান সরকারের দোল খেতে কুণ্ঠিত হয়নি। এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের এক সূর্যসন্তানকে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছিলেন। বর্তমান সরকার বানিয়েছেন স্বৈরাচারকে তাদের পদানত সরকারি বিরোধী দল। জাদুকর পিসি সরকারের জাদুর দেশে সবই সম্ভব। তাই আমাদের অপেক্ষা তো করতেই হবে, একদিকে স্বৈরাচার অন্যদিকে রাজাকার সমর্থিত বড় দুই দল কতটা কী করে বা করতে পারে?
লেখক : রাজনীতিক।
সৌজন্য: দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন