নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে দিলেন লতিফ সিদ্দিকী
সরকারের পৌনে নয় কোটি টাকারও বেশি সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, যা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী। এই সম্পদ বিক্রির সময় তিনি সরকারি নোটে নিজ হাতে স্পষ্ট করে লিখেছেন- ‘নীতিমালা বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করে পূর্বের বিক্রয় মূল্য নেওয়া হোক।’ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। পত্রিকাটি জানায়, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিগত মহাজোট সরকারের সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে দরপত্র ছাড়াই নিজের ইচ্ছায় দেদার সরকারের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাই কোনো কথা বলতে পারেননি। কেউ অফিসিয়াল নোটে নিজেদের মতামত তুলে ধরলেও এগুলোর থোরাই কেয়ার করেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার এরকম কিছু সিদ্ধান্তের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের (বিজেসি) খুলনার একটি বিশাল সম্পতি বিক্রির ঘটনা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী খুলনার মহেশ্বর পাশায় অবস্থিত এম কে-১ প্রেস হাউজের দুই একর ৮৯ শতাংশ জমি, ওই জমিতে থাকা গুদাম, পাকা প্রেস, বাংলো, বাসাবাড়ি, আসবাবপত্র, গাছপালা ও অন্যান্য সম্পদ মাত্র নয় কোটি ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেন। সরকারি বিবেচ্যপত্র থেকে জানা যায়, সরকারের এই বিশাল অঙ্কের সম্পত্তি ক্রয় করেছেন মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমান। তার একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সম্পদ বিক্রি করেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বিবেচ্যপত্র থেকে আরও জানা যায়_ মুজিবুর রহমানের আবেদনের পর ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট জারিকৃত ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী মুজিবুর রহমান সরকারি ওই সম্পত্তির সমুদয় মূল্য ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে একসঙ্গে প্রদানের ইচ্ছা পোষণ করেন। আর তৎকালীন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবরে ওই বিবেচ্যপত্রে পূর্বের বিক্রয় মূল্য নেওয়ার কথা বলে নোট লিখেন। অথচ একই বিবেচ্যপত্রে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নীত-২ অধিশাখার উপ-সচিব নোট লিখেছিলেন- বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উলি্লখিত সম্পত্তির ক্রেতাকে গ্যারান্টি প্রদান করা হলে সরকার এককালীন সমুদয় অর্থ পাবে এবং বিক্রয় কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হবে। এটা ক্রেতার জন্য একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু ক্রেতার আবেদনের বিষয় বিবেচনায় আনা হলে দেখা যায় সেটা নীতিমালার পরিপন্থী। এই অবস্থায় মুজিবুর রহমানের আবেদন বিধিমোতাবেক বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই। এ ব্যাপারে উপ-সচিব সদয় আদেশ চান।
এরপর উপ-সচিবের এই নোটটিসহ বিবেচ্যপত্রটি উপরের দিকে গেলে মন্ত্রী তাতে অনুমোদন দেন। যা নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অথচ ওই নোটে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবের স্বাক্ষর বা অনুমোদন ছিল না।
ওই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, যেসব শর্তে মুজিবুর রহমানের কাছে সরকারি এই সম্পত্তিটি বিক্রি করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- জমিটি সম্পত্তির ক্রেতাকে লেটার অব ইনটেন্ট বা ইচ্ছাপত্র জারির ৩০ দিনের মধ্যে পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে উদ্ধৃত মূল্যের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশ টাকা সমান তিন কিস্তিতে ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর সরকারের তরফ থেকে টাকা বুঝে পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আইনগত কোনো বাধার কারণে সম্পত্তি কৃতকার্য দরদাতাকে হস্তান্তর করা না গেলে দরদাতা কোনো রকম জরিমানা ব্যতিরেকেই তার দরপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। চতুর্থ শর্তানুযায়ী বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ না করলে আর্নেস্টমানি বাজেয়াপ্তপূর্বক ইচ্ছাপত্র বাতিল করা যেতে পারে। আর অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৩০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। মূল্য পরিশোধের ৩০ দিনের মধ্যে মালামাল নিয়ে যেতে হবে। ক্রয়কৃত মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সময় ক্রেতা কর্তৃক সংস্থার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্রেতাকে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শর্তে আরও উল্লেখ রয়েছে সাফ কবলা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে ক্রেতা বিক্রেয় সম্পত্তির ওপর ভিত্তি করে অন্য কারও সঙ্গে কোনো রকম লেনদেন করতে বা কাউকে প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন না এবং সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পূর্বে সম্পত্তির ওপর অবস্থিত অবকাঠামো সমূহের ওপর ক্রেতার কোনোরূপ দখল বর্তাবে না।